মামুন আব্দুল্লাহ
এই নেবুলা মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের থানোসের মেয়ে নীল তরুণী নেবুলা নয়। তার রহস্যও উদঘাটন করা হয়নি, বরং গত ১৬ বছর ধরে বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম করে রেখেছিল ব্লু রিং নেবুলার ন্যাচরাল ফেনোমেনা। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে নাসা হয়েছে গলদঘর্ম। সাম্প্রতিক নাসার বিজ্ঞানীরা ব্লু রিং নেবুলা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে উপযুক্ত প্রমাণ সহ ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। এই রহস্য উদঘাটন ইনফ্লেশন থিয়োরিকে আরও শক্তপোক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
প্রথমে আলোচনা করা যাক নেবুলা কাকে বলে সেটি নিয়ে। একদম সহজ করে বলতে মহাকাশে নক্ষত্রের মাঝে ধুলা ও গ্যাসের মেঘকেই নেবুলা বলে। একটি নক্ষত্র মৃত্যুর সময়ে সেটি থেকে অন্য আরেকটি নক্ষত্র সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে নেবুলাকে অনেকে নতুন নক্ষত্রের নার্সারিও বলে। সাধারণত, বেশিরভাগ নেবুলা হয় গ্যাসের তৈরি, এবং গ্যাস সাধারণত হয়ই আয়োনাইজড, যাদের কাজ হ’ল রেডিয়েশন নির্গমন করা। একারণেই গ্যাসের মলিকিউলগুলো দেখতে রঙিন হয়। নেবুলা একটি ল্যাটিন শব্দ যা এসেছে Nabulae থেকে। এর অর্থ মিস্ট, ভেপার, ফগ, স্মোক, কুয়াশা, মেঘ, ধোঁয়া ইত্যাদি। নেবুলা গঠিত হয় হাইড্রোজেন ও অন্যান্য আয়োনাইজড গ্যাস দ্বারা। নক্ষত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন ছাড়া নক্ষত্র গঠিত হওয়া রীতিমতো অসম্ভব। সুপারনোভা অর্থাৎ বৃহৎ নক্ষত্রের মৃত্যুর সময় যে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটে তাতে নতুন নক্ষত্রের জন্ম হয়। ব্রহ্মাণ্ডে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইভেন্ট।
নক্ষত্র বৃদ্ধ হয়ে গেলে বিস্ফোরণের পূর্বে সেটি রেড জায়ান্ট স্টারে পরিণত হয়। এবং বিস্ফোরণের পর এটি প্ল্যানেট্রি নেবুলা নামে পরিচিতি পায়। কোটি কোটি বছর পর এক সময় আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র সূর্যও বৃদ্ধ হয়ে রেড জায়ান্ট স্টারে পরিণিত হবে, সেটির বিস্ফোরণের পর নেবুলা বা ধুলা ও গ্যাসে ছড়িয়ে যাবে। তখন আরও একটি নক্ষত্র বা সূর্যের জন্ম হবে। ১৭৮০ সালে এই ধারণা প্রথম দেন উইলিয়াম হার্শেল নামের একজন ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তখন থেকেই এই তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছিলেন। এরপর বড় বড় টেলিস্কোপ আবিষ্কার হতে থাকে এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণাও সমৃদ্ধ হতে থাকে। নক্ষত্রের মৃত্যুর সময় এদের ইন্টারমেডিয়েট সোলার মাস (Mass) বেশি থাকে, অর্থাৎ সূর্য থেকে সাত থেকে আটগুণ বড়। এর শর্ট লিফট ফেনোমেনার মাঝে নেবুলা দেখা যায়। শর্ট লিফট অর্থ অল্প সময়ের জন্য। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে মানুষের সময় এবং মহাকাশের সময় ভিন্ন। মহাকাশে শর্ট লিফট মানে ১০ থেকে ২০ হাজার বছর।
তাহলে নেবুলা হয় কীভাবে? যখন কোন স্টার বা নক্ষত্রের ফিউল শেষ হয়ে যায়, রিয়েকশন বন্ধ হয়ে যায়, এটোমোস্ফিয়ার তছনছ হয়ে যায়; একটি নক্ষত্র রেড জায়ান্ট স্টারে পরিণত হলে এটোমোস্ফিয়ার পুরোপুরি রূপে নষ্ট হয়ে যায়, নষ্ট হওয়া মাত্রই আল্ট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন উত্তপ্ত লুমিনাসের কোর থেকে বের হয়ে আসে। লুমিনাস কোরকে নেবুলা নিউক্লিয়াসও বলে, অর্থাৎ এটি এক ধরণের কেন্দ্র। নক্ষত্রের প্রেশার তার গ্রেভিটেশনাল ফিল্ড বৃদ্ধি করে দেয়। অর্থাৎ গ্রাভিটেশনাল ফিল্ডে ভয়াবহ প্রেশার সৃষ্টি হয়। সেই প্রেশার নক্ষত্রকে চারিদিক থেকে বাহিরে টানতে থাকে যেন নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয়। আবার বাহিরের এক্সট্রা প্রেশার সেটাকে কাউন্টার করতে থাকে, অর্থাৎ বিস্ফোরণ হতে বাঁধা দিতে থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে ফিউল শেষ হয়ে গেলে কোর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তখন গ্রাভিটেশনাল ফোর্স কমে আসে, এবং ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করে ভয়াবহ বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে। এরপরই সৃষ্টি হয় নেবুলার। সেসময় এর কেন্দ্রে যত মেটেরিয়াল থাকে সেসব ইজেক্ট বা নির্গমণ করা শুরু করে। তখন গ্যাস চারপাশে আয়োনাইজড হয়ে রঙবেরঙের ব্রাইটনেস দেখা দেয়। এভাবেই প্ল্যানেট্রি নেবুলা গঠিত হয়।
নেবুলা নিজে খুবই ক্রুশিয়াল ভূমিকা পালন করে। আমাদের মিল্কিওয়ের এভুলেশনেও নেবুলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। প্ল্যানেট্রি নেবুলাগুলো ইন্টারস্টেল মিডিয়ামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট বাইরে ছুঁড়ে দেয়, তাতেই অনেক কিছু সৃষ্টি হয়। একটি রেড জায়ান্ট স্টার মারা গেলে কেন্দ্রের সমস্ত কিছুই বাইরে ছুড়ে দেয়। সেগুলো থেকে যে উপাদান বা এলিমেন্ট বের হয়ে আসে সেগুলোও কোন না কোন ইভেন্টের সৃষ্টি করে। এভাবেই আমাদের মিল্কিওয়ে সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্যালাক্সিগুলো থেকে হাবল টেলিস্কোপ ১৯৯০ এর দশকে নেবুলার চিত্র পাঠানো শুরু করে। যদিও এখন নেবুলার চিত্র অনেক সহজেই পাওয়া যায়।
নেবুলার অবজারভেশন, অরিজিন ও লাইফটাইম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। গত প্রায় দুই দশক ধরে ব্লু রিং নেবুলার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন নাসার বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখ্যা জানেন। তারা জানিয়েছেন নীল রঙের গ্যাস এবং ডাস্টের ক্লাউডই ব্লু রিং কী কারণ থাকতে পারে। তারা নতুন একটি স্টাডিতে স্টেট অব দি আর্ট থিয়োরিটিকাল মডেল (State-of-the-art) উপস্থাপন করেন। তারা জানিয়েছেন, “The Blue Ring Nebula resulted from the collision of a smaller into larger one, Leading to the formation of a single new remnant star.” যখন দুইটি নক্ষত্র পাশাপাশি মিলিত হয়েছে তখন এই রিং সৃষ্টি হয়েছে। রিংটাই মূলত ডাস্ট কিংবা গ্যাস হতে পারে। ডাস্ট অর্থাৎ ধুলাবালি বা মাটি হতে পারে। সহজ করে বলতে, একটি নক্ষত্র থেকে অপর একটি নক্ষত্রে যাওয়ার পথের অংশটি রয়েছে ডাস্টে পরিপূর্ণ। তাহলে পুরো ব্যাপারাটা দাঁড়ালো এমন; দুইটি নক্ষত্র একদম কাছাকাছি চলে আসে তখন নতুন আরেকটি নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে, এবং চারপাশে কলিশনের কারণে ব্লু রিং তৈরি হয়ে গেছে। এটা সব সময়ই নীল রঙ ধারণ করে না। নীল রঙের নেবুলা প্রাকৃতিক হলেও তা খুবই বিরল।
ব্লু রিং নেবুলার দ্বারা নতুন যে নক্ষত্রটি তৈরি হল এর নামও দেওয়া হয়েছে। TYC 2597-735-1 এর নাম। এটি আমাদের পৃথিবী থেকে ৬৩০০ লাইট ইয়ার দূরে অবস্থান করছে। লাইট ইয়ার হল দূরত্বের ইউনিট। অনেকের ধারণা লাইট ইয়ার মানে সময়ের দূরত্ব। আসলে তা নয়। কিছু নেবুলা খালি চোখে দেখা যায়। অর্থাৎ মানুষ অতিরিক্ত কোন রশ্মি ব্যবহার না করেই সাধারণ দৃষ্টিতেই তা দেখতে পারে। মনে রাখতে হবে, আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে এমনও অনেক গ্রহ আছে যা সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা যায় না। সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে আমাদের নিকট অদৃশ্যই থাকে, সেসব দেখতে অন্য কোন রশ্মির প্রয়োজন হয়। তেমন, কিছু নেবুলা সাধারণ দৃষ্টিতেই দেখা যায় আবার কিছু নেবুলা দেখা যায় শুধু মাত্র আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতেই। ব্লু রিং নেবুলাকে নরমাল ভিজুয়াল আইজে দেখলে সাধারণই দেখা যায় কিন্তু এটি যদি UV বা আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি দ্বারা দেখা যায় শুধু মাত্র তখনই ব্লু ব্লব (Blue Blob) রিং আকৃতির দেখা যায়।
টেলিস্কোপ এটি ২০০৪ সালে প্রথম আবিষ্কার করে। তখন থেকেই বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি রহস্য ছিল। তারা বিদ্যমান যাবতীয় জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এর কোন ব্যাখ্যা উদ্ধার করতে পারছিলেন না। টেলিস্কোপের নাম Galaxy Evolution Explorer সংক্ষেপে যাকে GALEX বলে। এটি বর্তমানে একটি রিটায়ার্ড টেলিস্কোপ, অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত। প্রতিটি টেলিস্কোপেরই একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। বয়সসীমা অতিক্রম করলে সেটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যায়। গ্যালেক্স এর পূর্বে বহু স্টাডি করেছে। তার হিস্ট্রি অব স্টার ফরমেশন অ্যাক্রস দ্য ইউনিভার্স বেশ সাড়াজাগানো প্রোজেক্ট। অন্যান্য গ্যালাক্সির বহু ইয়াং স্টারকে এটি পর্যবেক্ষণ করেছে। ইয়াং স্টারকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েই নতুন একটি স্টার এবং এর নীল রিং খুঁজে পায় গ্যালেক্স।
একটি নক্ষত্রের মার্জিং সিস্টেম খুবই সাধারণ, কিন্তু এটি কীভাবে গঠিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা কিছুটা জটিল। ব্লু রিং নেবুলা মাত্র কিছু কাল পুরাতন, এবং এর ব্লু রিং শুধু মাত্র আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতেই দেখা যায়, এসব মনে রেখে পরবর্তী আলোচনায় প্রবেশ করা যায়।
দ্বিতীয় চিত্রটি ব্লু রিং নেবুলার সাইড ভিউ, এবং আর্থ ভিউ। পৃথিবী থেকে এবং মহাকাশ থেকে ব্লু রিং নেবুলা কেমন দেখা যায় এটি তারই ধারণা দেয়। গ্যালেক্সের অবজারভেশন, ফাইন্ডিং ও সিমুলেশন জানিয়েছে সাইড ভিউ অনেকটা দুই কোন (Cone) আকৃতির মেঘের মতো। এই কোন দুটি একে অপরের বিপরীত দিকে প্রসারিত হচ্ছে। নেবুলার একটি কোন পৃথিবীর দিকে আসছে আরেকটির বাকী অংশ এর পেছনে রয়েছে। একারণেই আর্থ ভিউ ও সাইড ভিউয়ের মাঝে এতটা পার্থক্য। এই দুটোর মাঝে রয়েছে মূল নক্ষত্রটি। গ্যালেক্স এর প্রথম অবজারভেশন সম্পন্ন করে ২০০৬ সালে। তখন এটি শক ওয়েভের প্রমাণ দিয়েছিল। শক ওয়েভ জিনিসটা কী? ব্লু রিং নেবুলা যখন গ্যাস কম্পোজ করছিল তখন এর সেন্ট্রাল স্টারের চারপাশে নিশ্চয় কোন ভায়োলেন্ট ইভেন্ট ঘটেছিল, সেকারণে এটা বাহিরে বের হয়ে আসে। ধরা যাক, ব্ল্যাক হোল মার্জ হলে সেখানকার গ্রাভিটেশনাল ফিল্ড ডেভেলপ হয়। কোন জলাশয়ে পাথর ছুঁড়ে মারা হলে যেমন ঢেউ সৃষ্টি হয়। ঢিল না ছোঁড়া হলে ঢেউ সৃষ্টি হবে না। অর্থাৎ শান্ত জলাশয়ে ঢেউয়ের কারণ হল পাথর ছুঁড়ে মারা। একই ঘটনা স্পেসেও ঘটে। কোনো ভায়োলেন্ট ইভেন্ট, কোনো বিস্ফোরণ, যা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। যেকোনো ইভেন্টকে এভাবে ডিটেক্ট করতে কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে, তারই একটি শক ওয়েভ। তেমনই ব্লু রিং এর সেন্টার স্টারে এমন একটি ইভেন্ট সংঘটিত হয়েছে যার কারণে গ্যাস ও ডাস্ট বাহিরে বের হয়ে আসছে। হাবল টেলিস্কোপের ডেটা জানিয়েছে, নেবুলার সেন্ট্রাল স্টার বহু সংখ্যক ম্যাটেরিয়ালকে ভিতরের দিকে টেনে নিচ্ছে। কিন্তু এই ম্যাটেরিয়াল কোথা থেকে আসছে এটা এখন পর্যন্ত অজানা ছিল।
বিজ্ঞানীরা এখন জানতে পেরেছেন ম্যাটেরিয়াল নক্ষত্রের মার্জার (Merger) এবং ছোট নক্ষত্র চারপাশের ম্যাটেরিয়ালগুলো ভিতর দিকে টেনে নিয়ে আরও বড় নক্ষত্র গঠন করে। এই মার্জারই ক্লাউড অব ডাস্ট এন্ড গ্যাস গঠন করে, যা দুইটি ডিস্কের মাঝে চলে আসে (নেবুলার সাইড ভিউয়ের মাঝের অংশ লক্ষ্য করুন)। পুরো বিষয়টি সংক্ষেপে এভাবে বলা যায় বিস্ফোরণের ফলে স্টার মার্জ হয়, মার্জের ফলে ক্লাউড বা মেঘ সৃষ্টি হয়, তার ভেতরে ছোট একটি নক্ষত্র বা স্টার তৈরি হয়, এই স্টারই আবার বাহিরে বের হয়ে আসা ম্যাটেরিয়ালগুলোকে টেনে নিয়ে আরও বড় নক্ষত্রে পরিণত হয়। এবং এগুলো ঘটার সময় ডায়াগ্রামের চিত্র অনুযায়ী থাকা কোনগুলো (Cones) দূরে সরে যেতে থাকে। ডেবরিস (Debris) হাইড্রোজেন মলিকিউল এবং স্পেসে অবস্থাররত অন্যান্য ম্যাটারের সাথে কোলাইড হয়ে নক্ষত্রের থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে। প্রথমে কোলিশন (Collision) হয়ে হাইড্রোজেন মলিকিউলগুলোকে উত্তেজিত করে। এগুলো সব কিছু মিলে একটি নির্দিষ্ট স্পেসিফিক রেডিয়েশন উৎপন্ন করে যা শুধু মাত্র আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিতেই দেখা যায়। একারণেই গ্যালেক্স শুধু মাত্র ব্লু রিং নেবুলার ছবি আমাদের পাঠাত। এটি একটি বিরল কিন্তু ন্যাচরাল ফেনোমেনা, যা এতদিন বিজ্ঞানীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।
আপনার মতামত জানানঃ