প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে ‘বিগ ব্যাং’ বিস্ফোরণের পর নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছিল। সেই আদি নক্ষত্রপুঞ্জের একটিই ধরা পড়েছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে। প্রায় ১৩০০ কোটি বছর আগের গ্যালাক্সির এটি। নাসার টেলিস্কোপে ধরা পড়া এই ছবি হোয়াইট হাউজে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই প্রথম বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এমন ছবি দেখতে পারল মানুষ। এটি এখনো পর্যন্ত মানুষের তোলা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে নিখুঁত ও বিস্তারিত ছবি।
হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ছবি উপস্থিতজনদের দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ছবি বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে, বিশাল কিছু করার সামর্থ্য আমেরিকার আছে। বিশেষ করে আমাদের শিশুরা এতে অনুপ্রাণিত বোধ করবে। তারা বুঝতে পারবে যে, আমাদের সামর্থ্যের বাইরে কিছু নেই। আমরা এমন ক্ষেত্রে সম্ভাবনা খুঁজে পেতে পারি, যা আগে কেউ পায়নি। আমরা এমন জায়গায় যেতে পারি, যেখানে আগে কেউ যায়নি।
এই ছবি প্রকাশ করে জো বাইডেন আরও বলেন, ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম ছবিটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত উপস্থাপন করেছে। জ্যোতির্বিদ্যা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য এটি যুগান্তকারী।
আমেরিকা এবং সমস্ত মানবজাতির জন্য এটি ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। ১৩ বিলিয়নেরও বেশি পুরোনো…মহাবিশ্বের ইতিহাসে প্রাচীনতম নথিভুক্ত আলো, আমাকে আবার বলতে দিন, ১৩ বিলিয়ন বছর আগের এই আলো।’
আমাদের গ্যালাক্সিতে আছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি তারা। আমাদের মিল্কিওয়ের সবচেয়ে কাছের ছায়াপথটি হল অ্যান্ড্রোমিডা। তাতে রয়েছে দেড় লাখ কোটি তারা। তবে নাসার টেলিস্কোপে ধরা পড়া ১৩০০ কোটি বছর পুরোনো এই গ্যালাক্সি আরও বড় বলে জানা গেছে।
👀 Sneak a peek at the deepest & sharpest infrared image of the early universe ever taken — all in a day’s work for the Webb telescope. (Literally, capturing it took less than a day!) This is Webb’s first image released as we begin to #UnfoldTheUniverse: https://t.co/tlougFWg8B pic.twitter.com/Y7ebmQwT7j
— NASA Webb Telescope (@NASAWebb) July 11, 2022
বিজ্ঞানীদের আশা, এই নতুন তথ্যের সাহায্যে শীঘ্রই বিশ্বের জন্মরহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। বাইডেনের হাতে প্রকাশিত এই ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ছবিটি সাড়া ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে।
নাসা হোডকোয়াটার্সের ওয়েব প্রোগ্রাম বিজ্ঞানী এরিক স্মিথের মতে জেমসের তোলা প্রথম রঙিন ছবি মহাকাশ গবেষণায় ইতিহাস গড়বে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন গবেষণা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের দিকে এগোচ্ছি আমরা। কয়েক দশকের গবেষণা, প্রতীক্ষা এবং স্বপ্ন পূরণ করবে জেমসের তোলা ছবি।
নাসার নতুন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটিও আগের হাবল টেলিস্কোপ থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে জানা গেছে। গত বছর ২৫ ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি মহাশূন্যের উদ্দেশে রওনা দেয়।
পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই টেলিস্কোপটি। টেলিস্কোপের মূল লক্ষ্য দু’টি, ব্রহ্মাণ্ডে জ্বলে ওঠা আদি নক্ষত্রগুলোর ছবি তোলা এবং দূরের গ্রহগুলো প্রাণধারণের উপযোগী কিনা, তা খতিয়ে দেখা।
মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য রহস্যজনক বিষয়। মহাকাশের গভীরে এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে এখনও নজর পৌঁছয়নি। সেই সমস্ত তথ্য আবিষ্কার করতেই মহাকাশে পাঠানো হয়েছে জেমন ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। নাসা
সূত্রের খবর, ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা হয়েছে এই অতি শক্তিশালী টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপ বানাতে নাসার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি। পৃথিবী থেকে ১০-১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে এই টেলিস্কোপ।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি ইতিহাস সন্ধানের পাশাপাশি জেমস ওয়েব বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশও পর্যবেক্ষণ করবে। দূরবর্তী কোনো গ্রহে প্রাণীর বসবাসের মতো পরিবেশ আছে কি না, যাচাই করে দেখবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে বড় আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে নাসার। সেখানে আরও কিছু ছবি ও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ