যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। এক টেলিগ্রাম বার্তায় রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়ার বিচার করে, তবে তারা ঈশ্বরের ক্রোধের মুখে পড়তে পারে।
মেদভেদেভ উদারপন্থী অবস্থানের জন্য বিশ্বে পরিচিত। তবে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পদে কাজ করতে গিয়ে জাতীয়তাবাদের দিকে ভীষণভাবে ঝুঁকেছেন তিনি।
টেলিগ্রামে বুধবার মেদভেদেভ বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের তদন্তের জন্য ট্রাইব্যুনাল বা আদালত তৈরি করাকে মনে হয়েছে একটি “পাগলামি” ধারণা।
‘এই প্রস্তাবগুলো কেবল আইনগতভাবে অবৈধ নয়। সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার রয়েছে এমন একটি দেশকে শাস্তি দেয়ার ধারণাটি আসলেই অযৌক্তিক। সম্ভবত মানবতার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
নেটিভ আমেরিকানদের হত্যা, জাপানে পারমাণবিক হামলা এবং ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজেই গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসলীলা বপন করেছে।’
বার্তার শেষে মেদভেদেভ বাইবেলের উল্লেখ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়ার বিচার করে, তবে তারা ঈশ্বরের ক্রোধের মুখোমুখি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অকেজো কট্টরদের বাইবেলের বাণী মনে রাখা উচিত।
‘বিচার করো না, পাছে তোমার বিচার হবে; যাতে একদিন তার (ঈশ্বর) ক্রোধ তাদের (পশ্চিমাদের) বাড়িতে না আসে। ঈশ্বরের সামনে কে দাঁড়াতে পারে?’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে রাশিয়া। পূর্ব ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষায় এই অভিযান বলে দাবি করছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিশ্ব এই অভিযানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তারা নানান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুশ অর্থনীতিতে ধস নামাতে চাইছে। একই সঙ্গে ইউক্রেন অভিযানে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগও এনেছে তারা।
এসব অভিযুক্তদের বিচারে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া জানায়, পশ্চিমারা তাদের শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করলে মানবতা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
জ্বালানি সঙ্কটে ইউরোপ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাত জ্বালানি যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভয়াবহভাবে অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছরের মধ্যেই রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায়। এতে পুরো ইউরোপ অঞ্চলেই জ্বালানি সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে আসন্ন শীতে ইউরোপের কী হবে, আগুন বা বাতি কি জ্বলবে?
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, যা আরও অবনতির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, গ্যাসের মূল্য বা প্রভাব নিয়ন্ত্রণে তারা বিদ্যুতের বাজারে পরিবর্তন আনবে। এদিকে ফ্রান্স ভোক্তাদের জ্বালানির ব্যবহার কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এক মাস আগেও মানে করা হচ্ছিল সংকট এড়ানো সম্ভব। কারণ যুক্তরাষ্ট্র প্রাকৃতিক গ্যাসের রপ্তানি বাড়িয়েছে। দেশটি থেকে ইউরোপের গ্যাস আমদানি সেপ্টেম্বরে ছয় শতাংশ থেকে বেড়ে মে মাসে ১৫ শতাংশ হয়েছে।
এদিকে রাশিয়া থেকে অঞ্চলটিতে জ্বালানি ৪০ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। জানা গেছে, রাশিয়া এরই মধ্যে বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তারা রুবলে পরিশোধ করতে রাজি হয়নি।
তবে এরমধ্যে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটে গেছে। ৮ জুন একটি অগ্নিকাণ্ডে টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট গ্যাস-তরলীকরণ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়, ধারণা করা হচ্ছে এই সমস্যা ৯০ দিন স্থায়ী হবে। এতে ইউরোপ দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ গ্যাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরেই রাশিয়ার কোম্পানি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমানোর কথা জানায়। ফলে আরও সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ গ্যাস হারায় অঞ্চলটি।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপে শীতের মৌসুমে কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ পরিবেশ উষ্ণ রাখতে এসময় অঞ্চলটিতে বাড়তি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ইউরোপে বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। অন্যদিকে বেশ কিছু কারণে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসও কমে গেছে। ফ্রান্সের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কমেছে উৎপাদন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো চলতি বছরের গ্রীষ্মের শুরুতে ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। এতে জ্বালানির চাহিদা বেড়ে গেছে।
এখন ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো জ্বালানি ইস্যুতে বাণিজ্য ঠিক রাখা। অঞ্চলটিতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ রপ্তানি করতো ফ্রান্স। এখন তারা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আমদানি করছে। সরবরাহ কমায় ঝুঁকিতে রয়েছে জার্মানিসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো। ব্রেক্সিট নিয়েও সমস্যা রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। চলতি বছর জার্মানি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নজর দিয়েছে। অস্ট্রিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ড জানিয়েছে তারা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করবে। অঞ্চলটিতে কিছু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও চালু হতে পারে। তবে এত কিছুর পরেও ইউরোপে বিদ্যুতের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। তাই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে জ্বালানি যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে সংকট মোকাবিলায় বিকল্প ভাবতে হচ্ছে ইউরোপকে।
চার দশকে সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতি যুক্তরাষ্ট্রে
চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি। বর্তমানে তা সাত শতাংশে ঠেকেছে বলে সতর্ক করেছে দেশটির সর্বোচ্চ ব্যাংক। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে পৌঁছেছিল। মূলত করোনার কারণেই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছিল প্রশাসন।
জো বাইডেনের প্রশাসন জনগণকে জানিয়েছিলেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য তারা সবরকম ব্যবস্থা নেবে। এই ব্যবস্থাপনার আলোকে শিগগিরই মার্কিন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানানো হয়েছিলো।
বস্তুত, বাইডেন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কোনো কিছুতেই কোনো লাভ হয়নি। অর্থনীতি আরো সঙ্কটের মুখে পড়েছে। যার জেরে এই বছরের শুরুতেই মুদ্রাস্ফীতি সাত শতাংশ গিয়ে ঠেকেছে। যা গত চার দশকের মধ্যে কখনো ঘটেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের জুন মাসে শেষবার এই পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বস্তুত, গত বছরের পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতিও ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। ১৯৯১ সালে শেষবার ওই পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি হয়েছিল।
মুদ্রাস্ফীতির জেরে বাজার দর অনেক বেড়ে গেছে। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে কাঁচা বাজার– সব কিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। হিসেব বলছে, গত কিছুদিনে বাড়িভাড়া বেড়েছে চার দশমিক এক শতাংশ। খাবারের দাম বেড়েছে ছয় দশমিক তিন শতাংশ। পুরনো গাড়ির দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক তিন শতাংশ। এছাড়াও জামাকাপড়, জুতো, ওষুধ সব কিছুরই দাম বেড়েছে এবং ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
টাকার মান মান সর্বকালের সর্বনিম্ন
উপমহাদেশের অন্যান্য মুদ্রার মতো ভারতীয় মুদ্রা রুপিরও দরপতন চলছেই। সম্প্রতি এক ডলারের নিরিখে রুপির দাম দাঁড়াল সর্বনিম্ন। ৫ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে এখন এক ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ১১ রুপি, যা সর্বকালের রেকর্ড। খবর সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের চলতি অর্থবছরে ডলারের তুলনায় রুপির দাম প্রায় ৬ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে।
বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরেই কি বাড়তি চাপে রুপি, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রুপির দাম এমন পতনের অন্যতম কারণ, ভারতের ইক্যুইটি বাজার থেকে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বা এফআইআইয়ের মূলধন তুলে নেওয়া এবং অতি অবশ্যই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এদিকে দ্য ইউএস ডলার ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০ বছরের মধ্যে ডলারের মান এখন সবচেয়ে বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ মুহূর্তে ডলারের সাপেক্ষে অন্যান্য মুদ্রার দামের পতনের বহুবিধ কারণ থাকলেও প্রধান কারণ দুটি। এক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পেট্রোলিয়াম থেকে রকমারি পণ্য—সবকিছুরই দাম বেড়েছে। অর্থাৎ ডলারের অঙ্কে সেই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানির পরিমাণ অন্তত স্বল্প মেয়াদে কমানো অসম্ভব, ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সব দেশেরই।
তাতে ডলার মূল্যবান হয়েছে, উল্টো দিকে স্থানীয় মুদ্রার দাম পড়েছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়েছে। সারা পৃথিবীতে আর্থিক ক্ষেত্রে তুমুল অনিশ্চয়তা চলছে—এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন।
সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলার সে দেশেই জমা রাখা লাভজনক, নিরাপদ। ফলে ভারতের মতো বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চল শুরু হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকেও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। ফলে গোটা এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা এখন দুর্বল—চীনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন—সব কটিরই পতন ঘটছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটে বাংলাদেশ
পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, গত ২৯ জুন গ্যাসের জাতীয় গ্রিডে অন্তত ৮৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। গত সোমবার সরবরাহের পরিমাণ ৫০৭ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দেশে প্রায় ২৫০-৩০০ ঘনফুট এলএনজির চাহিদা আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে কিনে পূরণ করা হলেও, সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধির পর দাম না কমা পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে সারাদেশে গড়ে ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু, পেট্রোবাংলার দৈনিক উৎপাদন ও বিতরণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩০ জুন থেকে গড় সরবরাহ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেছেন, দাম কমার পর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে একটি সংকট চলছে এবং সবাই মিতব্যয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় আমরাও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আরও বেশি গ্যাস উৎপাদনের চেষ্টা করছি।’
এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি ও অন্যান্য জ্বালানির দাম বাড়ায় সরকার বিপাকে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ মে মাসে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনি। তখন প্রতি মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের দাম ছিল ২৬ মার্কিন ডলার। এখন এর দাম ৩৬ ডলারেরও বেশি।’
আর এ কারণে গত কয়েকদিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতিতে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী। দেশের অন্যান্য জেলার পরিস্থিতি আরও খারাপ। ঢাকায় গত ৩০ জুন থেকে বিভিন্ন এলাকায় দিনে ৩-৪ বার লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার তা ৩০-৪০ মিনিট স্থায়ী হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সরকার ঘোষণা করে, দেশে উৎপাদন পর্যায়ে কোনো লোডশেডিং নেই। যেটুকু আছে, সেটা বিতরণ সমস্যা ও সিস্টেম লসের কারণে হয়ে থাকে।
এদিকে, বিপিডিবির জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘পিক টাইমে সারাদেশে দৈনিক ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। তবে আমরা এখন ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে উৎপাদন ঘাটতি ছিল না, তাই লোডশেডিংও ছিল না। কিন্তু এখন আমরা ঘাটতিতে আছি। যদি কোনো বিকল্প উৎস না পাওয়া যায়, তবে আরও কিছু দিন এ অবস্থা চলবে।’
ডিপিডিসি আওতাধীন এলাকায় দৈনিক ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও, গত দুই দিন ১ হাজার মেগাওয়াট দেওয়া হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ডেসকোর চাহিদা প্রতিদিন ১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ডেসকো ৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘অনেক কারখানার মালিক অভিযোগ করেছেন যে শিল্পাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক উৎপাদক সময়মতো পণ্য চালান করতে পারছেন না।’
আজিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে অনেক কারখানার মালিকদের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জেনারেটরের জন্য ডিজেল কিনতে হচ্ছে। এমনিতেই কঠিন সময় চলছে। তার ওপর এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে আমরা ঢাকা শহরে প্রায় এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময়টায় বিকল্প হিসেবে জ্বালানি তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানো যেত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনও সমস্যায় আছে।’
তিনি বলেন, বড় ধরনের লোকসান এড়াতে তাই বেশিরভাগ তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুতের এ সংকট দীর্ঘদিন চলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সংকটময় এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঈদের পর রাত ৮টার মধ্যে সব মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ রাখার নিয়ম আমরা আবার চালু করব।’
এসডব্লিউ/এসএস/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ