চলতি বছর নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও করোনার প্রথম হানায় বিপর্যস্ত অবস্থায় নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে সে নির্বাচন স্থগিত করেছিল। এর মধ্যে পৃথিবীর কোথাও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং শীতের প্রারম্ভে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভাইরাসটির দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণে ত্রাহি অবস্থা। ইউরোপ আমেরিকাসহ পশ্চিমাদেশগুলোর পাশাপাশি এশিয়াতেও করোনাভাইরাস নবউদ্যোমে সংক্রমিত করছে জনগোষ্টিকে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী জনবহুল দেশ ভারত করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষে অবস্থান করছে। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঁচ স্পষ্ট। এমন অবস্থায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ২৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বেশি পরিমান করোনাভাইরাসের পরীক্ষা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি বা স্বাস্থ্যবিভাগের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এর কোনওটির উল্লেখ্যযোগ্য উন্নতি ঘটেনি যে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়ে বসেছে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটির আইনী বাধ্যবাধকতার মেয়াদ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। সরকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। যিনি মহামারীর আপদকালীন সময়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারছেন এবং এ সময়ে প্রশাসক দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনী কোনও জটিলতা নাই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল। তাছাড়া, আগামী একমাসের মধ্যে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতি হওয়ার কোনও সুযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের স্থগিত হওয়া নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণাকে অভিজ্ঞমহল দূরদর্শিতার অভাব বলে মনে করছেন।
শুধু চট্টগ্রাম সিটি কপোর্রেশন নির্বাচন নয়, আগামী ৩০ জানুয়ারী ৬৪ পৌরসভার তৃতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ ৩ জানুয়ারি এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১০ জানুয়ারি। এর আগে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথম ধাপে ২৫ পৌরসভার নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬১ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৬ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেছিল।
সোমবার নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তারিখ ঘোষণা করে জানান, নির্বাচন হবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। মেয়র প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের নতুন করে মনোনয়ন নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে শুধু সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৭ এবং ৪০ ওয়ার্ডের প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় গত ৫ আগস্ট। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল। সে হিসাবে ইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৯ মার্চ এই সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে পরে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে জনগণ কিছুটা মানিয়ে ওঠায় নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পরিস্থিতি কি আসলে নির্বাচন করার অনুকুলে?
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারী হিসাবে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৯৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮২৭ জনে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় ১৯৩ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এদিন নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১ হাজার ২৪৫টি। আক্রান্তদের মধ্যে নগরীতে ১৫৪ জন এবং উপজেলায় ৩৯ জন রয়েছেন।
সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টার বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায় মোট করোনা সংক্রমিত হয়েছে ১৯৩ জন, তারমধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকাতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৪ জন। এমন অবস্থার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে চট্টগ্রাম নগরীতে চরম দূর্যোগ নেমে আসতে পারে মনে করছেন স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/নসদ/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ