ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে প্রথম বারের মতো বৈধভাবে সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নয় মাস আগে দেশটিতে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সুইজারল্যান্ডের ৬৪ শতাংশ মানুষ ‘সবার জন্য বিয়ে’ আইনের পক্ষে ভোট দেয়। খবর বিবিসি।
সে অনুযায়ী ১ জুলাই দেশটিতে এই প্রথম কোনো সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো। এ আইনের ফলে এখন থেকে যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। অর্থাৎ নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ের পাশাপাশি সমকামীদের মধ্যেও বিয়ের জন্য আর কোনো বাধা থাকল না।
সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন থেকে সমকামীরা রেজিস্ট্রার করে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
বিয়ে করা সমলিঙ্গের দুজন হলেন- এলিন (৪৬) এবং লেউরি (৪৫)। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে তারা এক সঙ্গে বসবাস করছে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা। খুশিতে তাদের দুজনের চোখে পানি দেখা যাচ্ছিল। গত দুই দশক ধরে তারা একসঙ্গে আছেন। এবার বিয়ে করে সেটিকে পাকা করে নিলেন দুজন।
এ নিয়ে লরা বলেন, সুইজারল্যান্ড যদিও একটু দেরিতে এই অনুমোদন দিয়েছে। তবে যাই হোক শেষ পর্যন্ত সেই সময় এলো।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের খবরে জানানো হয়েছে, নতুন আইনের কারণে বিষমকামী দম্পতির মতো করেই দেখা হবে সমলিঙ্গের দম্পতিদেরও। তারা শিশু দত্তক নিতে পারবেন।
সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন থেকে সমকামীরা রেজিস্ট্রার করে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
এর আগে ২০১৭ সাল থেকে সুইজারল্যান্ডে সমলিঙ্গের পার্টনারশীপ চালু ছিল। তবে বিয়ের বৈধতা পাওয়া গেলো শুক্রবারই। এদিনই বিয়ে করেন এলিন এবং লরা।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সমলিঙ্গের বিবাহ ক্ষেত্রে অনুমতি দানে সর্বপ্রথম হলো নেদারল্যান্ড। দেশটি ২০০১ সালে সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহের অনুমতি দেয়। আর সুইজারল্যান্ড হলো সর্বশেষ দেশ।
তবে সুইজারল্যান্ড ১৯৪২ সালে সমকামিতাকে অপরাধমুক্ত বলে ঘোষণা করলেও তাদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো অনুমতি ছিল না। শুধুমাত্র রেজিস্টার করে তারা একসঙ্গে বসবাস করতে পারত।
কিছুদিন আগে সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্টে সমকামী বিয়ের বিলটি পেশ হয়। সেখানে বিলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল সরকারপক্ষ। কিন্তু বিরোধীরা গণভোটের দাবি তোলে।
সুজারল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে যদি পঞ্চাশ হাজার মানুষের সই সংগ্রহ করা যায়, তাহলে বিল পাস হলেও ওই বিষয়ের ওপর গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঠিক সে ঘটনাই ঘটেছিল। দেশের অতি দক্ষিণপন্থি দলের আহ্বানে পঞ্চাশ হাজার মানুষের সই জমা পরে পার্লামেন্টে। তারপরেই গণভোটের আয়োজন করা হয়। সেখানে সমকামী বিয়ের পক্ষে রায় দেন সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘদিন ধরেই সুইজারল্যান্ড সমকামী অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ১৯৪২ সালে অ্যালপাইন রাষ্ট্রটিতে সমকামী সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ সমকামী হলে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে না। যদিও বাস্তবে পুলিশ সমকামীদের একটি তালিকা বানিয়ে রাখত।
১৯৯০ সালে সেই তালিকা তৈরি বন্ধ করা হয়। সমকামীদের একসঙ্গে থাকার আইনি সুযোগও দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সুযোগ বিয়ের মতো ছিল না। বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, সমকামী যুগল এতদিন তা থেকে বঞ্চিত ছিল।
গত ডিসেম্বরে সুইস পার্লামেন্ট যে বিল আনে, তাতে সমকামী যুগলকেও বিয়ের অধিকার দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু বাদ সাধে অতি দক্ষিণপন্থি দল। এবার আর সমকামী যুগলের বিয়ের অধিকার পেতে অসুবিধা থাকল না।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এবার থেকে সমকামী যুগলও শিশু দত্তক নিতে পারবে। কিছুদিনের মধ্যেই সুইস পার্লামেন্টে বিলটি আইন হিসেবে গ্রহণ করা হবে বলে মনে করছেন এলজিবিটিকিউ কর্মীরা।
সমকামী বিয়ে অধিকার আন্দোলনের প্রধান নেতা জন মুলার বলেন, সুইজারল্যান্ডের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, এমনকি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্যও বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন।
উল্লেখ্য, সংশোধিত এ আইন পাশ হলে সমলিঙ্গের যুগলরা বিয়ের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিশুদের দত্তক নিতে সক্ষম হবেন। এছাড়া, বিবাহিত সমকামী দম্পতিদের শুক্রাণুদানের মাধ্যমে সন্তান লাভের অনুমতি দেওয়া হবে। বর্তমানে যা শুধুমাত্র বিবাহিত বিষমকামী দম্পতিদের জন্যই বৈধ। এই আইন সুইস ব্যক্তিদের বিদেশি স্বামী-স্ত্রীর নাগরিকত্ব পাওয়াও সহজ করবে।
এএসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৮
আপনার মতামত জানানঃ