পাকিস্তানে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে নির্যাতনের এই ঘটনা এতোটাই বেড়েছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রদেশটি। বুধবার (২২ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আত্তা তারার বলেছেন, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ-সহ যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া সমাজ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আত্তা তারার জানান, এমনভাবে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে যে, বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে প্রশাসন। প্রদেশে নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বৃদ্ধি সমাজ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারার বলেন, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে পাঞ্জাবে। শুধু মহিলারাই নয়, নির্যাতিত হচ্ছেন শিশুরাও। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে, মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষিত করতে জরুরি অবস্থা জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অব্যাহত ধর্ষণের ঘটনায় একাধিক অভিযুক্তকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছেন তারার। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যৌন অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া পরিস্থিতি উত্তরণে ধর্ষণ বিরোধী সচেতনতা প্রচারণা শুরু করেছে প্রাদেশিক সরকার। যার অংশ হিসেবে স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্ষণ বিরোধী প্রচারণার আহ্বান এবং পরিবারের অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারার।
পাঞ্জাবের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সন্তানদের কীভাবে রক্ষা করতে হয় তা মা-বাবাদের শেখার সময় এসেছে। সরকার দ্রুত গতিতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা বাড়াবে। তার ভাষায়, ‘যৌন হয়রানির ঘটনা রোধে দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে, যার ফলে এই ধরনের ঘটনাগুলো হ্রাস পাবে।’
প্রদেশের আইনমন্ত্রী মালিক মহম্মদ আহমেদ খান বলেন, হঠাৎ পরিস্থিতি এত খারাপ হল কেন, কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই বিষয়ে নাগরিক সমাজ, মহিলা অধিকার রক্ষা সংগঠন, শিক্ষক এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পাকিস্তান লিঙ্গ সহিংসতা মহামারি এবং দেশের নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় কার্যত সংগ্রাম করছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২১ র্যাংকিং অনুসারে বিশ্বের ১৫৬টি দেশের মধ্যে পাকিস্তান ১৫৩তম অবস্থানে রয়েছে। মূলত এই তালিকায় ইরাক, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানের ঠিক ওপরে রয়েছে পাকিস্তান।
নারীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় পাকিস্তান বিশ্বে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে৷ যৌন নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতার হার বেড়েই চলেছে দেশটিতে৷ দেশটির অধিকাংশরাই মনে করেন নারীরা অনিরাপদ।
সম্প্রতি করাচিভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পালস কনসালট্যান্ট এক জরিপে জানিয়েছে, দেশটির ৩৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন পাকিস্তানি কোনো নারীই নিরাপদ নন। ৪৩ শতাংশের মতে, কিছু দিক থেকে নারীরা নিরাপদ। ২০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নারীরা নিরাপদ পাকিস্তানে।
২০০২ সালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া অধিকারকর্মী মুখতার মাই-এর মতও একই৷ তিনি বলেন, যারা নারীর প্রতি সহিংসতা করে, তারা আইনি প্রক্রিয়াকে ভয় করে না৷
তিনি জানান, বেশিরভাগ পাকিস্তানি পুরুষ নারীকে পেটানোকে কোনো সহিংসতাই মনে করে না৷ পাকিস্তানি সমাজ এখনও সামন্তবাদী এবং গোত্রবাদী প্রথা থেকে বের হতে পারেনি বলেও মনে করেন তিনি৷
সমাজের পুরুষতান্ত্রিক আচরণকেও দায়ী করেন অনেকে৷ লাহোর-ভিত্তিক নারীবাদী আন্দোলনকারী মাহনাজ রেহমান বলেন, যখনই নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয় তখনই তাদের সহিংসতার শিকার হতে হয়৷
তিনি বলেন, নারীদের শিক্ষা দেয়া হয় পুরুষকে মান্য করে চলার জন্য, কারণ, পরিবারে তাদের স্ট্যাটাস উঁচুতে৷
লাহোর-ভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট সাজিয়া খান মনে করেন, কিছু কিছু পুরুষ ধর্মীয় শিক্ষার কারণে নিজেদের আলাদা ভাবতে শুরু করেন৷
তিনি বলেন, আলেমরা এমনভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা দেন যে পুরুষরা মনে করে তারা নারীদের পেটাতেই পারে৷ তারা বাল্যবিয়েও সমর্থন করে এবং নারীদের বলে, স্বামী মারধর করলেও তাকে মেনে চলতে৷
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৭০৩
আপনার মতামত জানানঃ