
স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপণ্য আমদানিও। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তীব্র জ্বালানি সংকটে গণপরিবহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার দুই সপ্তাহের জন্য সরকারি অফিস ও স্কুল বন্ধ ঘোষণা করল দেশটির সরকার।
শুক্রবার (১৭ জুন) শ্রীলঙ্কার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অফিস ও স্কুল বন্ধের এ ঘোষণা দেয়।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি আমদানির মূল্য পরিশোধের মতো ডলার নেই শ্রীলঙ্কার কাছে। তাই গণপরিবহন চলাচল প্রায় বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে এ ঘোষণা দিল সরকার।
পেট্রল ও ডিজেলের তীব্র সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব বিভাগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে যান চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘গণপরিবহনের ঘাটতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনে জ্বালানির ব্যবস্থা করতে না পারায় অফিসে কর্মীসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
জ্বালানি সংরক্ষণে সপ্তাহের শুরুতে দেশটিতে সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়িয়ে তিন দিন করা হয়। এ সত্ত্বেও শুক্রবার পেট্রল স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন দিয়ে মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। অনেক মোটরসাইকেল চালকের দাবি, পেট্রলের জন্য কয়েক দিন ধরে অপেক্ষায় আছেন তারা।
দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে আগামী সোমবার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধ থাকবে। বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা বলেছে মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি আমদানির মূল্য পরিশোধের মতো ডলার নেই শ্রীলঙ্কার কাছে। তাই গণপরিবহন চলাচল প্রায় বন্ধ।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের শুরু থেকে দেশটির মানুষ ৯২ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে পেট্রল ও ৭৬ শতাংশ বেশি দামে ডিজেল কিনেছেন।
এর আগে গেল মঙ্গলবার (১৪ জুন) শ্রীলঙ্কা সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকারি চাকরিজীবীরা এখন থেকে সপ্তাহে চার দিন অফিস করবেন। আগামী তিন মাসের জন্য প্রতি শুক্রবার সরকারি দফতর বন্ধ থাকবে। কারণ সরকার চায়, ছুটি ও অবসর সময়ে সরকারি কর্মীরা চাষাবাদ করবেন। তাদের বাড়ির পেছনে বা অন্যত্র পতিত জমি ব্যবহার করে ফসল ফলাবেন, যা দেশে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
এছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে অফিসে আসাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বাড়তি একদিন বেশি ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় তথ্য মন্ত্রণালয়।
এ ছুটির ব্যাপারে সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী দিশে গুনাবর্ধন বলেন, শনি ও রোববার ছাড়াও কর্মচারীরা শুক্রবার অতিরিক্ত ছুটি ভোগ করবেন। তবে স্বাস্থ্য, জ্বালানি, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষাসহ জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত কর্মচারীরা এ ছুটি পাবেন না।
১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকটে দেশটির সরকার খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপণ্য আমদানি করতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকটের সঙ্গে চলছে রেকর্ড সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। দীর্ঘ সময় মানুষজন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকছেন। আর্থিক এই দুরবস্থার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে দেশজুড়ে। বিক্ষোভে সহিংসতাও হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবি করছেন।
শ্রীলঙ্কায় মানবিক সংকট আরও খারাপের দিকে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘ বলেছে, চরম সংকটে আছেন এমন ১০ লাখ মানুষকে সাহায্যের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা। এ ছাড়া ঋণ ছাড়ের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার আলোচনা চলছে।
এদিকে সংকটাপন্ন শ্রীলঙ্কায় ফুরিয়ে গেছে পেট্রল, জরুরি আমদানিতে অর্থায়নের জন্য নেই ডলারও। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানান দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। সেই জ্বালানি সংকট থেকেই এবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশটির সব স্কুল। অফিসে না আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে পর্যটন খাত থেকে আয় শূন্যে নেমে যাওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং জনগণের মন জয় করতে রাজাপাকসে সরকারের কর কর্তন শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৯
আপনার মতামত জানানঃ