পৃথিবীতে এমন অনেক গোষ্ঠীরই প্রধান নেতা রয়েছে; যাদের আঙুলের ইশারায় কাবু সাধারণ মানুষ। এমনকি, নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে স্বাধীনতা এবং সম্পদ, দুই-ই খোয়াতে হয়েছে তাদের। এসব নেতারা অনেক সময়ই বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের বিপথে চালিত করেন। পৃথিবীর এমনই সব বিপজ্জনক এবং কুখ্যাত বিশ্বাস মতে চলা কিছু গোষ্ঠী এবং সেই সব গোষ্ঠীর নেতাদের কথা চুলন আজ জানা যাক।
নেক্সিয়াম
১৯৯৮ সালে কিথ রেনিয়ের নেক্সিয়াম নামে এক বিশেষ গোষ্ঠীর প্রবর্তন করেন। নেক্সিয়াম বিশেষ ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম চর্চিত গোষ্ঠী হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে প্রকাশ্যে আসে যে নেক্সিয়াম আসলে যৌন ধর্মাচরণ করত। নেক্সিয়ামের মোট ১৮ হাজার সদস্য ছিল। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অভিনেত্রী অ্যালিসন ম্যাক।
এই গোষ্ঠীর গুরু কিথ ধর্মাচরণ করার জন্য একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করছিলেন। এই বিশেষ জায়গায় নারী অনুসারীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই জায়গায় কিথ নিজের নারী ভক্তদের সঙ্গে অবাধ যৌনমিলন করতেন এবং তারা যাতে কখনো কারো কাছে মুখ না খোলেন, তার জন্য তাদের নগ্ন ছবি তুলে রাখতেন।
তবে একটা সময় পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে কিথের বহু ভক্ত প্রকাশ্যে কিথের সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ আনেন। ২০২০ সালে বহু মহিলা কিথের বিরুদ্ধে মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। মহিলা পাচার এবং শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরিসহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কিথকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বন্ধ হয় নেক্সিয়াম।
সিনানন
চার্লস ডেডেরিচ নামে এক ব্যক্তি ১৯৫৮ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকাতে সিনানন নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী শুরু করেন। বিশেষ বিশ্বাস মেনে চলা গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত হলেও সিনানন প্রথমে মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসাবে শুরু হয়েছিল।
সিনানন গোষ্ঠীর সভায় একজন সদস্যকে মন খুলে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হতো। তবে যখনই একজন সদস্য কথা বলতে শুরু করতেন, ঠিক তখনই সভায় উপস্থিত বাকিরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করতেন। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বহু অর্থ অনুদান দিয়ে এই বিশেষ গোষ্ঠীতে নিজেদের জায়গা পাকা করতেন। পাশাপাশি এই গোষ্ঠীতে যোগ দিলে কায়িক শ্রম করা বাধ্যতামূলক ছিল।
সিনানন-প্রধান চার্লস অনুগামীদের বুঝিয়েছিলেন শিশুদের জন্ম দেওয়া উচিত কাজ নয়। আর সেই কারণেই তিনি তার পুরুষ ভক্তদের বন্ধ্যত্বকরণের জন্য চাপ দিতেন। চার্লস বহু মহিলা ভক্তকে গর্ভপাতেও বাধ্য করেছিলেন।
১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর পুলিশ সিনাননের প্রধান ডেরায় অভিযান চালিয়ে চার্লসকে তার লেক হাভাসুর বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখে। তাকে পাঁচ বছরের জন্য নজরবন্দি করে রাখার সাজা শোনানো হয় এবং প্রায় তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ-ও নির্দেশ দেওয়া হয়, চার্লস আর সিনানন চালাতে পারবেন না। ১৯৯৭ সালে চার্লস মারা যান।
চিলড্রেন অব গড
১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে ধর্মদ্রোহী প্রচারক ডেভিড বার্জ ‘টিনস ফর ক্রাইস্ট’ নামে বিশেষ বিশ্বাস মতে চলা গোষ্ঠী শুরু করেন। ডেভিড যিশু খ্রিস্টের আদর্শের সঙ্গে ১৯৬০-এর দশকের অবাধ প্রেমের তত্ত্বকে একত্রিত করে এমন এক মতাদর্শের প্রবর্তন করেন যা তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করেছিল।
বিশ্বজুড়ে এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। ১৯৭০-এর দশকে ধর্মাচরণের আড়ালে অবাধে যৌনচর্চার জন্য এই গোষ্ঠী কুখ্যাত হয়ে ওঠে। এমনকি, এই গোষ্ঠীর নারী অনুগামীরা ‘ধর্মীয় পতিতা’-র তকমা পান।
গোষ্ঠীপ্রধান বার্জ শিশুদেরও যৌনমিলনের জন্য উৎসাহিত করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগও ওঠে, গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ায় প্ররোচনা দিতে তিনি মহিলা নারীদের অন্য পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গম করতে চাপ দিতেন।
বলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স এবং রোজ ম্যাকগোয়ানের পরিবারও এই গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তবে পরে তারা এই দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালীন ১৯৯৪ সালে বার্জ মারা যান। ‘টিনস ফর ক্রাইস্ট’-এর নাম বদলে রাখা হয় ‘চিলড্রেন অব গড কাল্ট ফ্যামিলি ইন্টারন্যাশনাল’। এখনও এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে বর্তমানে সদস্যেরা আর যৌনাচার করেন না বলেও এই গোষ্ঠীর দাবি।
এসডব্লিউ/এসএস/২২১০
আপনার মতামত জানানঃ