
স্ট্যাচু অব লিবাটির্’র সাজে আদালতে আসা কম্বোডিয়ান-আমেরিকান এক অধিকার কর্মীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দেশটির নির্বাসনে থাকা বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টির নেতা স্যাম রেইনসির সঙ্গে থেরি সেং নামের ওই অধিকার কর্মীর যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এই কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে তিনিসহ আরও ৬০ জনের বিরুদ্ধে।
অধিকার কর্মীর পাশাপাশি থেরি সেং একজন আইনজীবীও। থেরি সেং একজন শরণার্থী যিনি কম্বোডিয়ার হত্যার ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এসেছিলেন এবং যিনি গণতন্ত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এসেছিলেন। অন্যান্য কয়েক ডজন সমালোচক এবং বিরোধী রাজনীতিবিদদের সাথে রাষ্ট্রদ্রোহ করার ষড়যন্ত্রের কথিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল৷
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার তিনি লেডি লিবার্টির সবুজ গাউন পরে আদালতে হাজির হন। এ সময় তার হাতে একটি মশাল ছিল। তিনি ‘স্বাধীনতা’ লেখা একটি মুকুট পরেছিলেন।
এর আগেও তিনি ‘স্বাধীনতার বার্তা দিতে’ এ ধরনের পোশাক পরেছেন।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থেরি সেং এই রায়কে অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত। আমি নিজের বিবেকের পাশাপাশি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য আমার বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখি।’
‘আমি শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত। আমি নিজের বিবেকের পাশাপাশি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য আমার বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখি।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে রাজনৈতিক বিরোধী সদস্যদের গণবিচার করছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। তবে ক্ষমতাসীনরা কম্বোডিয়ার গণতন্ত্রের মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছেন।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ১৯৮৫ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রীদের একজন। তাকে একজন স্বৈরাচারী ব্যক্তিত্ব হিসেবেই দেখা হয়। দেশটির প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি (সিএনআরপি)। এর নেতৃত্বে ছিলেন স্যাম রেইনসি।
২০১৯ সালে বিরোধী দলগুলোকে দমনের অংশ হিসেবে সিএনআরপি-কে বিলুপ্ত করা হয়। তারপর থেকে রেইনসি প্যারিসে নির্বাসনে আছেন। সে বছরই তিনি কম্বোডিয়ায় ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে বিমানে ওঠার আগে তাকে বাধা দেওয়া হয়।
কম্বোডিয়ায় রেইনিসির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।
এর আগে নির্বাসিত এক বিরোধী নেতার সমর্থনে একটি অনলাইন পোস্টের মন্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে কম্বোডিয়ার সাতজন বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
তাদের আইনজীবী বলেন, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অভিযান ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
আইনজীবী স্যাম সোকং বলেন, রেইনসির প্রত্যাবর্তনের সমর্থনে বার্তা পোস্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত বিরোধীদলীয় কর্মীদের পূর্ব টাবুং খমুম প্রদেশে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে’ শাস্তি প্রদান করা হয়।
আত্মগোপনে থাকা চারজনের অনুপস্থিতিতে পরোয়ানাসহ সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অন্য এক কর্মীকেও একই সাজা দেয়া হয়। তিনি ইতোমধ্যে কারাগারে রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত অন্য দুজন বিরোধী কর্মীকে পাঁচ বছরের জন্য বরখাস্তের সাজা দেয়া হয়েছে এবং তাদের কারা ভোগ করতে হবে না বলে তাদের আইনজীবী জানান।
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন লিকাধোর উপপরিচালক এম স্যাম অ্যাথ পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর বলেছে, ভিন্নমত এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার দমনের প্রতি সরকারের অসহিষ্ণুতা আরও গভীর হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ