যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হতে আয়োজিত প্রথম গণভোটে স্কটল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দারা না ভোট দিয়েছিল। এবার দ্বিতীয় গণভোটের জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন। এই উদ্যোগকে তিনি যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ‘নতুন’ উদ্যোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
স্টার্জন স্কটল্যান্ড সরকার এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতৃত্বে আছেন। তিনি মঙ্গলবার বলেছেন, যুক্তরাজ্য থেতে স্কটল্যান্ড আলাদা হবে কি না; এই প্রশ্নটি পুনর্বিবেচনার সঠিক সময় এসেছে।
তিনি যুক্তি দিচ্ছেন যে স্কটল্যান্ড যদি আলাদা হয়, তাহলে এটি অনেক বেশি সম্পদশালী এবং সমতা-ভিত্তিক রাষ্ট্র হতে পারবে।
স্কটল্যান্ডে এর আগে ২০১৪ সালেও স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট হয়েছিল, তবে সেই গণভোটে স্বাধীনতাপন্থীরা হেরে গিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতাপন্থী ক্ষমতাসীন দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা এবং ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন যুক্তি দিচ্ছেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন আবার জোরালো হয়ে উঠেছে।
এসএনপি যুক্তরাজ্য থেকে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে বহু দশক ধরে। বর্তমানে এই দলটি স্কটল্যান্ডের ক্ষমতায় এবং গণভোটের পক্ষে প্রস্তাব স্কটিশ পার্লামেন্টে পাশ করানোর জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার হবে, সেটি তাদের আছে বলে আশা করছে। তবে এক্ষেত্রে সমমনা একটি দল গ্রিন পার্টির সমর্থন তাদের দরকার হবে।
স্কটল্যান্ড যদি আলাদা হয়, তাহলে এটি অনেক বেশি সম্পদশালী এবং সমতা-ভিত্তিক রাষ্ট্র হতে পারবে।
কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই গণভোটের তীব্র বিরোধী, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং তার কনজারভেটিভ পার্টির নেতারা বলছেন, নতুন করে গণভোট কেন করতে হবে তার কোন যুক্তি তারা দেখেন না। এই গণভোটের প্রস্তাব স্কটিশ পার্লামেন্ট অনুমোদন করলেও এটি যে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে সরকারের দিক থেকে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তা প্রায় নিশ্চিত।
ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলছেন, ইউরোপে স্কটল্যান্ডের মত একই আকারের যেসব দেশ বেশ সফল হয়েছে, তারা তুলনা করে দেখেছেন, স্কটল্যান্ডেরও সেরকম একটি সফল দেশ হওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে এখন এক বড় সংকটে আছে, এর মুদ্রার মান পড়ছে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে এই দেশের সম্ভাবনা তিনি দেখেন না। এর বিপরীতে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্কটল্যান্ড অনেক ভালো করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্কটল্যান্ডের আগের গণভোট যে সারা পৃথিবীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল, তার কারণ কেবল এটাই নয় যে গত ৩০০ বছরে ব্রিটেনের ইতিহাসে এমন ঘটনার কোনো উদাহরণ নেই; এ কারণেও যে এর ফলাফল, বিশেষত যদি স্কটল্যান্ডের ভোটাররা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেন, তবে তার প্রতিক্রিয়া কেবল স্কটল্যান্ডে বা ব্রিটেনেই থাকবে না। স্পেনের কাটালোনিয়া প্রদেশের এবং কানাডার কুইবেক প্রদেশের স্বাধীনতাকামীদের জন্য তা হয়ে উঠবে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
ইউরোপে গত কয়েক দশকে যেখানে চেষ্টা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যত ধরনের সীমান্ত আছে তার অবসান ঘটাতে, আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ গঠনে, সেখানে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত হবে বিপরীতমুখী। বিশ্ববাজারেও তার প্রভাব পড়বে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
যেকোনো নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত শেষ পর্যন্ত নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে; কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সংখ্যালঘুদের মতামত মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের অর্থ ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচার’ নয়, বরং সংখ্যালঘুর অধিকার ও কণ্ঠস্বরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের বক্তব্যকে শাসনের মধ্যে প্রতিফলিত করাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় গুণ। সেই বিচারে স্কটল্যান্ডের সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর কীভাবে এখন বিরাজমান কাঠামোর মধ্যে প্রতিফলিত করা হবে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ