লাইম ডিজিজ এক প্রকার রোগ, যা লাইম বোরেলিওসিস নামে পরিচিত, এটি একটি সংক্রালাইম রোগ বোরেরেলিয়া বার্গডোরফেরি ব্যাকটেরিয়ামের কামড়ের ফলে ঘটে থাকে। আপনি ইতিপূর্বে লাইম রোগ সম্পর্কে অনেক শুনেছেন। এর কারণ হল এই সংক্রমণটি খুব বেশি ছড়াচ্ছে।
বিশ্বে ১৪ শতাংশেরও বেশি মানুষ লাইম রোগে আক্রান্ত বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল বিএমজে গ্লোবাল হেলথ আজ মঙ্গলবার(১৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
বিএমজের জার্নালে বলা হয়েছে, মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে এ রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি এবং তা প্রায় ২০ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন।
এক ধরনের ছোট ছোট পোকার (টিক পোকা নামে পরিচিত) কামড় থেকে লাইম রোগ হয়। কোথাও কোথাও এ পোকাকে এঁটেল পোকা বলা হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা যায়। এ ছাড়া অস্থিসন্ধীতে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও জ্বর হতে দেখা যায়।
গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে লাইম রোগ কতটা সাধারণ কিংবা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বোঝার জন্য গবেষকেরা ৮৯টি গবেষণা থেকে তথ্য নিয়েছেন। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। গবেষণায় অংশ নেওয়া ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের মধ্যে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশের রক্তে এ রোগ পাওয়া গেছে।
এই রোগ প্রতিরোধের দিক থেকে মধ্য ইউরোপের পরেই রয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। পূর্ব এশিয়ায় এ রোগ প্রতিরোধের হার ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ, পশ্চিম ইউরোপে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পূর্ব ইউরোপে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে লাইম প্রতিরোধের হার সবচেয়ে কম। মাত্র ২ শতাংশ।
মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে এ রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি এবং তা প্রায় ২০ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন।
এর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, টিক পোকাবাহিত রোগের প্রকোপ গত ১২ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। লাইম রোগ বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, দীর্ঘতর গরমকাল, প্রাণীর স্থানান্তর, পোকামাকড়দের প্রাকৃতিক বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ঘন ঘন পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসা।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কৃষক ও শ্রমিকেরা নিয়মিত কুকুর কিংবা ভেড়ার মতো পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছেন, তারা টিক পোকার কামড়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন।
লাইম ডিজিজ কী?
লাইম ডিজিজ একটি সংক্রামক রোগ যা বোরেলিয়া বার্গডোরফেরিয়া ব্যাকটিরিয়ামের কামড়ের ফলে ঘটে। লাইম ডিজিজ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছর আগে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আমেরিকায় এইডসের পর সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের মধ্যে লাইম রোগটি অন্যতম। এর বাইরে এশিয়া, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে ও লাইম রোগের ঘটনা দেখা যায়।
লাইম ডিজিজ আসলে ত্বকের প্রদাহ এবং লালচেভাবের সাথে সম্পর্কিত একটি সংক্রমণ, যা মানুষের মধ্যে বোরেলিয়া বার্গডোরফেরির কামড়ের মাধ্যমে ঘটে। বোরেলিয়া বার্গডোরফেরি খুব ছোট জীব যা আমাদের ত্বকে লেগে থাকা রক্তকে স্তন্যপান করে যা সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়।
লাইম ডিজিজের লক্ষণসমূহ
বোরেলিয়া বার্গডোরফেরি নামে একটি পোকার কামড়ের ফলে লাইম রোগ হয়। এই পোকামাকড়গুলি এত ছোট যে, এগুলি দেখতে অসুবিধা হয়। একটি পোকামাকড়ের কামড় পরে যা সংক্রামিত হয়, ৩ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে, লাইমে রোগের লক্ষণগুলি মানুষের মধ্যে উপস্থিত হতে শুরু করে। এক নজরে, আমরা লাইম রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে জেনে নিই।
১। লাইম রোগের লক্ষণগুলি সাধারণত ফ্লু-জাতীয়।
২। লাইম রোগের ক্ষেত্রে ত্বকে মশার কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। এই দাগটি একটি লাল বিন্দুর মতো, যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
৩। এই ত্বকের লাল বর্ণের দাগগুলি ধীরে ধীরে বেড়ে যায় এবং চুলকানির অনুভূতি হয়।
৪। জ্বর লাইম রোগের লক্ষণও হতে পারে।
৫। শরীরে শীতল অনুভব করা।
লাইম ডিজিজ এর জটিলতা
১. যদি লাইম রোগের সময়মত চিকিৎসা না করা হয় তবে, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২. লাইম রোগের সময়মতো চিকিৎসা করা হলেও জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা হতে পারে।
৩। নাড়ির গতি কমছে।
৪। সিসপ্যাড সমস্যা আছে।
৫। ক্লান্তি লাগছে।
৬। পেশী ব্যথা।
৭। লিম্ফ নোডগুলি বড় করা।
লাইম ডিজিজ এর চিকিৎসা
লাইম রোগের চিকিৎসা একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। লাইম রোগের সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকগুলির মধ্যে রয়েছে ডোক্সিসাইক্লিন, অ্যামোক্সিসিলিন এবং সিফুরক্সিম। সংক্রামিত ব্ল্যাকলেগড টিকগুলি লাইম রোগ নির্ণয়ের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ রোগের সংক্রমণের হার বাড়ার কারণ হিসেবে রোগটি নির্ণয়ে ধোঁয়াশায় ভোগাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সময় মতো রোগটি নির্ণয় করা না যাওয়ায়, এটি আশপাশের আরও অনেকের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ