নওগাঁর মহাদেবপুরে ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে ফেসবুকে কমেন্ট করায় পল্লব কুমার মহন্ত নামের এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। শনিবার(১১ জুন) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এলাকাবাসী তাকে আটক করে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে রাত ২টার দিকে থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত দুদিন (১০ জুন) আগে পল্লব কুমার মহন্ত তার ফেসবুক আইডি থেকে নবী মুহাম্মদকে নিয়ে ফেসবুকে কমেন্ট করে। সেটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে এলাকার ধর্মীয় অনুভূতিসম্পন্ন মুসল্লিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা পল্লব কুমার মহন্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল বের করে।
গ্রেপ্তারকৃত পল্লব কুমার মহন্ত উপজেলা সদরের দক্ষিণ দুলালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সরস্বতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পরিমল কুমার মহন্তের ছেলে।
এবিষয়ে সরস্বতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সায়েম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমার বিদ্যালয়ের এসএসসি ২০২২ সালের পরীক্ষার্থী ছাত্র পল্লব কুমার মহন্তকে ফেসবুকে ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে শুনেছি।
এ ব্যাপারে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আজম উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তারকৃত পল্লব কুমার মহন্তের বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় মামলা দায়ের করে রোববার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান অভিযুক্ত কিশোরকে আটকের কথা স্বীকার করে সকলকে আইনের প্রতি আস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তি ছড়ানো, ধর্ম অবমাননা, এমনকি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জুয়া খেলার অভিযোগেও অল্প বয়সীদের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী কমপক্ষে ২০ শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে ১২ জেলায় ১৮টি মামলার কথা জানা গেছে।
দেশের সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ হিসাব দিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দৃক। এসব মামলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। মামলাগুলো করেছেন সরকারদলীয় লোকজন, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তিরা। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এই শিশু–কিশোরদের পাঁচ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ লাখ থেকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব শিশু–কিশোর সাময়িকভাবে বিষণ্নতা এবং আঘাত–পরবর্তী মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। লঘু পাপে গুরু দণ্ডের কারণে পরে কেউ কেউ গুরুতর অপরাধেও জড়িয়ে পড়তে পারে।
তারা বলেন, ‘দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। এগুলো বাকস্বাধীনতার পথকে সংকুচিত করেছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৭
আপনার মতামত জানানঃ