কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের (ইসি) কিছুই করার নেই এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
সুজনের সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যখন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে যে, তারা তাদের আইনকানুন বিধি-বিধান প্রয়োগ করতে পারছে না, তখন আমরা কীভাবে আশাবাদী হতে পারি?’
বদিউল আলম বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের নতজানু হওয়া, অসহায়ত্ব প্রকাশ করা, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন কমিশন যদি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, তাহলে আমরা নাগরিকেরা যাব কোথায়?’
আজ সোমবার(১৩ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন করে সুজন। এই অনুষ্ঠানে কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসি। কিন্তু কুমিল্লা-৬ আসনের এই সংসদ সদস্য তা না মানায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইসির কিছুই করার নেই।
সিইসির এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক বলেন, এটা ভালো লক্ষণ নয়। ইসি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। কমিশন যখন তাদের আইন-কানুন-বিধি প্রয়োগ করতে পারছে না, তখন নাগরিকেরা খুব আশাবাদী হতে পারে না। এখানে সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকারি সুবিধাভোগী কেউ কারও পক্ষে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন—এমন প্রতীয়মান হলে ইসি প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য ইসি প্রয়োজনে বিধিবিধান যুক্ত করতে পারে। মানুষের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা আছে। নাগরিকের প্রত্যাশা নির্বাচনে ইসি সাহসিকতা দেখাবে। বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবকিছু নির্ধারিত হয়ে যাবে না বলে জানান সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, এই নির্বাচন পূর্বাভাস দেবে, ভবিষ্যৎ কেমন হবে, এই কমিশনের সক্ষমতা কতটুকু।
সুজনের সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন মানেই হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তাই তাদের (ইসি) দায়িত্ব হলো নাগরিকদের কল্যাণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা। আমরা আশা করেছিলাম, এই নির্বাচন কমিশন সাহসিকতা, বলিষ্ঠতার পরিচয় দেবে। কিন্তু সেটার অনেকটাই পূরণ হয়নি।’
‘এটা নির্বাচন কমিশনের নতজানু হওয়া, অসহায়ত্ব প্রকাশ করা, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন কমিশন যদি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, তাহলে আমরা নাগরিকেরা যাব কোথায়?’
ইসির অবাধ ক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চাইলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে, নির্বাচন বাতিলেরও সুযোগ আছে। কিন্তু তারা বলছেন, তাদের কিছুই করার নেই। আমরা কমিশনের কাছে আরও দৃঢ়তা, স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করি। আমরা ভেবেছিলাম এই কমিশন সাহসী ভূমিকা নেবে।’
সুজনের সম্পাদক আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন স্থানীয় নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন কমিশনের কথা মানছেন না। এরপর জাতীয় নির্বাচনের সময় যদি পুরো প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি দল, বিরোধী দল এবং অন্যান্যরা যদি নির্বাচন কমিশনের আদেশ অমান্য করার চেষ্টা করে, আমরা কোথায় যাব? এই নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। জনগণের প্রতি তার দায় আছে।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে তাদের কিছুই করার নেই। আমরা সবিনয়ে এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের স্বার্থেই কিন্তু তারা ওই পদে বসেছেন। সুতরাং জনগণের স্বার্থ তাদের দেখতে হবে।
রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, যেকোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন। ‘আমরা বিজয়ী হবোই’ এ ধরনের বক্তব্য না দিয়ে, গণরায় মাথা পেতে নেওয়ার ঘোষণা দিন। দলের মনোনীত বা সমর্থিত…প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে তাদের নির্দেশনা দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।
মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুজন জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।
‘যথাযথভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন। পক্ষপাতমূলক আচরণ বা দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার থেকে বিরত থাকুন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপি, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক অর্থাৎ কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।
এর আগে সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নানাবিধ তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশন, সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ভোটার ও সচেতন নাগরিকদের উদ্দেশে নানান আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩৬
আপনার মতামত জানানঃ