আইডি কার্ডে চুল ঢেকে রাখা ছবি দেয়ার নিয়ম বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এই নিয়ম শুধুমাত্র ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী এবং কয়েক ধরণের অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সংবাদপত্র ওকাজ গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদের নতুন সংশোধনীতে আইডি কার্ডে নারীদের চুল এবং ঘাড় ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয়তার শর্তাদি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সংশোধনীর আগে ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল ‘ব্যক্তিগত ছবি অবশ্যই আধুনিক, রঙিন, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড সহ, সামনের দিকে মুখ করা, চশমা ছাড়া, মুখের সমস্ত বৈশিষ্ট্য পরিষ্কারভাবে দেখানো এবং সাধারণ পোশাকে হতে হবে।’
আরো বলা হয়েছিল যে, ছবিটি অবশ্যই ৬x৪ ইঞ্চি হতে হবে। কোনো ইউনিফর্ম বা নিদির্ষ্ট কোনো গোষ্ঠীর পোশাক পরে তোলা ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না। নারীরা কোনো অলঙ্কার পরা কোনো ছবি দিতে পারবেন না এবং তাদের অবশ্যই চুল এবং ঘাড় ঢেকে রাখতে হবে।
সৌদি গেজেটে প্রকাশিত সংশোধনী অনুসারে, ১৭ অনুচ্ছেদে দুটি ধারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ধারা (ক) ব্যক্তিগত ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র জারির জন্য প্রয়োজনীয় স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে তোলা ছবি: ‘আধুনিক, রঙিন, পরিষ্কার, মুখের সমস্ত বৈশিষ্ট্য দেখায়, একটি সাদা ব্যাগ্রাউন্ডে, সামনের দিকে মুখ করা, চশমা ছাড়া ও নন-প্রেসক্রিপশন কন্টাক্ট লেন্স এবং কোনো আনুষাঙ্গিক সাজসজ্জা ছাড়া এবং ইউনিফর্ম বা নির্দিষ্ট গ্রুপের কোনো পোশাকে পরা ছবি নেয়া হবে না।
ধারা (খ) ‘সিভিল স্ট্যাটাসের জন্য মন্ত্রণালয়ের এজেন্সি ব্যক্তিগত ছবি এবং কিছু বয়সের মানুষের স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে তোলা ছবি, বিশেষ চাহিদাযুক্ত ব্যক্তিদের এবং আরো কিছু ক্ষেত্রে জন্য কিছু নিয়ম নির্ধারণ করেছে।’
সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷ গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সৌদি নারীরা পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
২০১৭ সালের পর সৌদির পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। যুবরাজ সালমান দেশটির সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায় আগের চেয়ে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছেন নারীরা। ২০১৭ সালের আগে সৌদিতে নারীদের সাইকেল চালানোর কথা যেখানে ভাবাই যেতো না।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের।
২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। উবার চালানো, সাইকেল চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ