সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আইসিটি আইনে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জৈন্তাপুর মডেল থানা-পুলিশের একটি দল সিলেট শহরের সোবহানিঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহমদ (২৬) বাদী হয়ে গতকাল রাতে জৈন্তাপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার যুবকের নাম মনির আহমেদ (৩৮)। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের কারগ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার মনির আহমেদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ওই মন্ত্রীর ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি মন্ত্রীকে কটূক্তি করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার মনির আহমেদের ফেসবুক আইডিতে ওই পোস্ট আর পাওয়া যায়নি। তবে ওই ফেসবুক পোস্টের একটি স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে। সেই পোস্টে লেখা ছিল, ‘মন্ত্রী…-এর ভয়ে শ্রীপুর আলুবাগানের আবদুল হান্নান-এর অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই, এদিকে আবদুল হান্নানে ছোট বইনের জামাই বেড়াতে আসছে শ্বশুরবাড়িতে, তাই অন্যায়ভাবে জৈন্তাপুর মডেল থানার পুলিশ ধরে নিয়ে চালান করলো সিলেট আদালতে।’
মনির আহমেদের ফেসবুক আইডিতে তিনি জৈন্তাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন।
এ ঘটনায় জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা সাব্বির আহমদ রানা (২৬) বাদী হয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানায় সাইবার সিকিউরিটি ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর জৈন্তাপুর মডেল থানা-পুলিশের একটি টিম সিলেট শহরের সোবহানিঘাট এলাকা থেকে আহমদ (৩৮) আটক করে।
মামলার বাদী সাব্বির আহমদ বলেন, ‘মনির একটি গোষ্ঠীর মদদে মন্ত্রীর দীর্ঘদিনের অর্জিত সম্মান নষ্ট করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে আইনের আওতায় আনতেই মামলা দায়ের করি।’
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর বলেন, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় মনির আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত আজকে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করার পরও আমরা এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি।
তারা বলেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার যেখানে স্বীকৃত, সেখানে তার অপব্যবহার হতেও পারে। তবু সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের কথা স্মরণ করতে পারি: ‘জনগণের ইচ্ছাই যেকোনো সরকারের একমাত্র বৈধ ভিত্তি; আর আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৭
আপনার মতামত জানানঃ