পুরো বিশ্ব জুড়ে যৌনতার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যকার পার্থক্যগুলোর ব্যাপারে জোরালো প্রমাণ রয়েছে। তবে উন্নত দেশগুলোতে পার্থক্যগুলোর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
বিবর্তনবাদের মাধ্যমে দেখা যায়, আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রাইমেট গোত্রের ছিল। যারা একজন পুরুষ ও একজন নারী মিলে বাচ্চাদের দেখাশোনা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতো। তবে অন্য প্রাণীদের মতো এই প্রাইমেটদের মাঝেও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী-পুরুষগণ বহুগামীও ছিল।
বহুগামীতার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল পুরুষ। কারণ তারা গর্ভধারণ না করে বা বাচ্চা লালন-পালনের সাথে সরাসরি যুক্ত না হয়েই স্রেফ সঙ্গমের মাধ্যমে সন্তান জন্মে ভূমিকা রাখতে পারতো। আর এই বহুগামীতায় লিপ্ত হতো তূলনামূলক শক্ত-সমর্থ্য পুরুষরা। ফলে নারীরা ভাল জিনের অধিকারী সুস্থ-সবল সন্তান জন্মদান করার সুফল ভোগ করতো। ধারণা করা হয়, সেখান থেকেই যৌনতার প্রতি পুরুষের বর্ধিত চাহিদার যাত্রা শুরু।
উন্নত দেশগুলোতে নারীরা যৌনতার ব্যাপারে তাদের মত ও চাহিদা প্রকাশের ব্যাপারে স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। তাই সেখানে নারী কর্তৃক বহুগামীতার পরিমাণটা বেশি। তাদের তুলনায় উন্নয়নশীল বা তুলনামূলক কম উন্নত দেশগুলোর পুরুষরা পর্যন্ত যৌনতার ক্ষেত্রে এতটা স্বাধীন নয়। তাই পুরুষই বেশি যৌনকাতর- সরাসরি এটা ঘোষণা করে কোনো সরলীকরণ করা সম্ভব নয়। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র ভেদে এটা পরিবর্তনশীল।
পর্ণগ্রাফির মাধ্যমে একটি বিষয় সবার মনে অলিখিতভাবে গেঁথে গেছে, সেটা হলো পুরুষরা সঙ্গমের ব্যাপারে প্রচণ্ডমাত্রায় আগ্রহী এবং খুবই যৌনকাতর। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, নারীরা সেভাবে আগ্রহী নয় বা তুলনামূলক কম উৎসাহী। কিন্তু গবেষকরা কয়েক দশক ব্যপী গবেষণা করে বিভিন্ন ভাবে এই ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।
১৯৭০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘সুইংগিং পার্টি’ বেশ পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিল। এধরনের পার্টিতে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকাগণ সাময়িকভাবে তাদের সঙ্গী অদল-বলদ করে সঙ্গম করার সুযোগ পেয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, এই পার্টিগুলো থেকে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি লাভবান হন। কারণ, নারীরা বেশি অর্গাজম (রাগমোচন) উপভোগ করলেও পুরুষরা তাদের তুলনায় খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও ব্রেইন রিসার্চের মাধ্যমে জানা গেছে, যৌনাঙ্গের পাশাপাশি নারীদের স্তনও উত্তেজক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেটা পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা পুরুষের শারীরিক দিক বিবেচনা করে সঙ্গম করার চেয়ে একটি আবেগময় সম্পর্কের মাধ্যমে থেকে যৌনতা উপভোগ করতে বেশি আগ্রহী। তবে এটাও সত্য, অনলাইনে পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ৭০% পুরুষ হলেও বাকি ৩০% নারী।
আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারীরা তুলনামূলক তরুণ, হ্যান্ডসাম পুরুষদেরকে ভাড়া করে রোমান্টিক সময় কাটিয়ে থাকে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর প্রচলন রয়েছে। তবে পুরুষরা যেমন নারী যৌনকর্মী ভাড়া করে শুধু যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য, নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা সেরকম নয়। অনেক নারী পুরুষ ভাড়া করেন স্রেফ কিছু আবেগঘন সময় কাটানোর জন্য। যৌনতা সেখানে মুখ্য নয়। সঙ্গ পাওয়ার বিনিময়ে নারীরা পুরুষদেরকে দামী উপহার দেয়া থেকে শুরু করে ভাল খাবার খাওয়ানো এমনকি হোটেল রুমের বিল পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এখানে উল্লেখ্য যে, যেসব পুরুষরা এই পেশায় জড়িত তাদের অন্য একটি মূল পেশাও রয়েছে।
তবে অর্থের বিনিময়ে যৌনসঙ্গী ভোগের ব্যাপারে পুরুষরাই বেশি এগিয়ে। কারণ, নারীরা আবেগময় সম্পর্ক জড়াতে আগ্রহী। অপরিচিত কারও সাথে টাকার বিনিময়ে নয়, তারা পছন্দের মানুষটির সাথে যৌনতায় লিপ্ত হতে বেশি পছন্দ করে থাকে। তাই বলা যায়, নারী-পুরুষভেদে সেক্সুয়াল সাইকোলজিতে পার্থক্য থাকলেও ধীরে ধীরে সেটা কমতে শুরু করেছে।
তথ্যসূত্র:
Nigel Barber, Ph.D., is an evolutionary psychologist as well as the author of Why Parents Matter and The Science of Romance, among other books.
psychologytoday.com
1. Symons, D. (1979). The evolution of human sexuality. New York: Oxford University Press.
2. Barber, N. (2008b). Cross-national variation in the motivation for uncommitted sex: The impact of disease and social risks. Evolutionary Psychology, 6, 217-228.
3. Masters, W. H., & Johnson, V. E. (1966). Human sexual response. Boston: Little Brown.
4. Komisaruk, B. R., et al. (2011). Women’s clitoris, vagina, and cervix mapped on the sensory cortex: fMRI evidence. The Journal of Sexual Medicine, 8, 2822-2830.
5. Duke, R. B. (2010, July 11). More women lured to pornography addiction. Washington Post.
আপনার মতামত জানানঃ