রাজশাহীতে জ্বালানি তেল নিয়ে চরম অরাজকতা শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটির পর হঠাৎ পেট্রোল-অকটেন হাওয়া হয়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় তেল সরবরাহ কম হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন পাম্প মালিকরা।
এজন্য মাত্র ২ লিটার করে প্রতিজনের কাছে বিক্রি করছে অনেক পাম্প। ফলে জ্বালানি তেল কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকারও হচ্ছেন অনেকেই। তবে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বলছে, তেলের কোনো সংকট নেই। পাম্পগুলো কেন তেল পায়নি সেটি তাদের কাছে প্রশ্ন করেন।
রাজশাহী জেলা পেট্রোল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, জেলায় ৪৮টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। পাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত তেল আসছে না গত তিন মাস থেকেই। ঈদের ছুটির কারণে এই সংকট আরও বড় আকার ধারণ করেছে। ফলে বেশ কিছু পাম্প তেল শূন্যও হয়ে পড়েছে।
রোববার (৮ মে) সকাল থেকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগরের অধিকাংশ এলাকাতেই পাম্পে পেট্রোল ও অকটেন নেই। কিছু কিছু পাম্পে শুধুমাত্র ডিজেল আছে। তবে, সেগুলো চাহিদার তুলনায় কম হবার কারণে অল্প পরিমাণে বিক্রি করছে তেল। এতে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি মালিকরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়।
রাজশাহী নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় গুলগোফুর পাম্প। এই পাম্পে তেল নিতে এসেছিলেন অসিম সরকার। কিন্তু পাম্পে নেই পেট্রোল। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনছেন আকটেন। সেটিও সামান্য পরিমাণে। কারণ পাম্প থেকে বেশি পরিমাণে তেল দিচ্ছে না।
আসিম কুমার বলেন, আমি মোহনপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। পরিবার নিয়ে থাকি রাজশাহীতে। প্রতিদিনই অন্তত ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। পাম্পে তেল নিতে এসে দেখি পেট্রোল নেই। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে আকটেন নিলাম। তবে সেটিও চাহিদা মত পেলাম না। মাত্র ২ লিটার তেল দিয়েছে। অন্য এক পাম্পে গিয়ে আবারও তেল নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তেল নাকি পাম্পে নেই। তাই গত কয়েক দিন থেকেই তেল দিতে পারছেন না পাম্প মালিকেরা। তাই ঘুরে ঘুরে তেল নিতে হচ্ছে।
একই অবস্থা শহিদুল ইসলামের। তিনি পেট্রোল না পেয়ে ছুটলেন অন্য পাম্পে। তিনি বলেন, তেল নেই। গত পরশুদিন অন্তত ৫টি পাম্প ঘুরে তেল নিয়েছি। ঈদের সময় একটু বেশি ঘুরাঘুরি হয়েছে। এখন তেল লাগবে কিন্তু তেল পাচ্ছি না। দেখি আজকে কয়টা পাম্প ঘুরে তেল পাই।
গুলগোফুর পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার আব্দুর রহিম বলেন, পেট্রোল সারা বাংলাদেশেই সরবরাহ নেই। আমরা পেট্রোল বিক্রি করছি না। গতকাল আমদের পেমেন্ট ডেট ছিলো। টাকা দিয়েছি, কিন্তু তেল পাইনি। আমাকে বলেছে, রোববার কিছু তেল পেতে পারি। এখন কিছু অকটেন ও ডিজেল আছে সেগুলো বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি গাড়ি আমাদের এখান থেকেই তেল নিচ্ছে। সরকারি গাড়িগুলোর ৫০ লিটারের স্লিপ হয়। সেগুলোকে আমরা ১০ লিটার দিয়ে পরবর্তীতে নিয়ে যেতে বলছি। মেঘনা কোম্পানির ডিলার আমরা। তারা বলছে তেল নেই তাই কম তেল দিচ্ছে।
রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার রহমান ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার বলেন, তেল নাই। কোম্পানি থেকেই তেল দিচ্ছে না। মেশিন বন্ধ আছে। এর আগেও ৪দিন বন্ধ ছিলো। আজকেও পেট্রোল নেই। কালকে পেমেন্ট দিয়ে আজকে রাত ৪টায় অকটেন দিয়েছে। আজকে রাতেই এগুলো শেষ হয়ে যাবে। কেউ বেশি তেল চাইলে তাকে একটু কম করে দিতে বলছি। আমার কাছে আছেই তো ১ হাজার লিটার অকটেন। কী করবো। ঈদের আগে ও পরে ২ থেকে আড়াই হাজার লিটার তেল বিক্রি হয়। ৭ দিন আগে পরে তেল দিয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলার সভাপতি মনিমুল হক বলেন, রাজশাহীতে তেলের সংকট আছে। মেইন সংকট গত তিন মাস থেকেই। আজ এই পাম্প পাচ্ছে তো কাল ওই পাম্প পাচ্ছে। রাজশাহীর সবগুলোরই সংকট আছে। এবার বেশি সংকট হয়েছে ৯ দিনের ছুটিতে। সংকট কেটে যাবে কিনা সেই বিষয়ে আমরা বলতে পারবো না। বিপিসি বলতে পারবে।
তিনি বলেন, ঈদের আগে কোনোভাবে ক্রেতাদের চাহিদা কমবেশি করে পূরণ করা গেলেও ঈদের পর আর তা সম্ভব হয়নি। অনেক পাম্পই পেট্রোল-অকটেন শূন্য হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে পাম্পে নয় থেকে সাড়ে নয় হাজার লিটার তেলের চাহিদা থাকে সেখানে দুই থেকে তিন হাজার পেট্রোল সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক সময় অকটেন পাওয়া গেলেও পেট্রোল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পেট্রোলেরই চাহিদা বেশি। আর পেট্রোল-অকটেনের পাশাপাশি ডিজেলেরও সংকট রয়েছে। তাই সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট থাকবে। এখানে মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরির কোনো উপায় নেই। কারণ জ্বালানি তেল মারাত্মক দাহ্য পদার্থ। এটি পেট্রোল পাম্প ছাড়া যেখানে সেখানে বেশি পরিমাণে মজুতের কোনো উপায় নেই। যারা মজুতের কথা বলছেন তারা ভুল বলছেন।
মূলত পেট্রোল সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট কাটবে না। তবে কবে নাগাদ এ সংকট কাটবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন এ নেতা।
তবে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, আমাদের কোনো সংকট নেই। এখনও সারা বাংলাদেশে যে মুজুদ আছে ব্যারেল স্টক বাদ দিয়ে ১২ দিন চলে যাবে। আমাদের পার্বতীপুরে পেট্রোল ও আকটেন অ্যাভেলেবল আছে তাহলে তারা কেন উত্তোলন করে নি? হয়তো ব্যাংকে টাকা সট থাকতে পারে। আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন যে কোনো ডিপোতে গিয়ে তেল পাননি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩২০
আপনার মতামত জানানঃ