বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব ধরণের জ্বালানী তেলের দাম কামানোর ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে গ্রাহকরা বর্তমানের তুলনায় কম দামে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেক কিনতে পারবেন।
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে ‘সামঞ্জস্য রেখে’ দেশে জ্বালানি তেলের নতুন এই দাম নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ দফায় পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটার-প্রতি ছয় টাকা কমানো হয়েছে। অপর দিকে ডিজেলের দাম লিটার-প্রতি কমেছে এক টাকা ২৫ পয়সা।
ফলে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অকটেনের দাম ১৩১ টাকা থেকে কমে ১২৫ টাকা, পেট্রোলের দাম ১২৭ টাকা থেকে কমে ১২১ টাকা এবং ডিজেলের দাম ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে কমে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ হয়েছে।
শনিবার রাত ১২ টার পর থেকে অর্থাৎ পহেলা সেপ্টেম্বরের প্রথম প্রহর থেকে এই নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
শনিবার সকালে খুলনার খালিশপুরে নির্মাণাধীন রুপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প পরিদর্শনের আগে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তিনি জানান, “আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে দেশেও দাম কমানো হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান ফর্মুলা অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের দামের মধ্যে বিপিসির জন্য যতটা মুনাফা রয়েছে, সেটাও কমানো হয়েছে”।
উপদেষ্টা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বিপিসির মুনাফা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে, ২৮ আগস্ট পেট্রোবাংলায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ও অধিদফতরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশের মানুষ যাতে কম দামে তেল কিনতে পারে, সেটি মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তেলের দাম নির্ধারণের কথা ভাবা হচ্ছে।
এর আগে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিধান বাতিল করে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গত ২২শে অগাস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নতুন খসড়া অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন, ২০০৩’ সংশোধন করে অধ্যাদেশে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত করা হয়।
এর আগে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ ও সমন্বয়ে সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি করা হয়।
এই অধ্যাদেশের কারণে সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন জনশুনানি ছাড়াই নিজস্বভাবে জ্বালানি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে পারতো।
পরে ২০২৩ সালের ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে অধ্যাদেশটি পাস হলে তা আইনে রূপ নেয়।
এরপর মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছিল গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের দাম। যার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
সেসময় ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩’ সংশোধন করে অধ্যাদেশে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা’ শিরোনামে ৩৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়।
এখন ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত ঘোষণা করায় আগের মতো গণশুনানির মাধ্যমেই বিইআরসি জ্বালানির দাম নির্ধারণ হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে সবশেষ জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ হয়েছিল চলতি বছরের জুন মাসে। পহেলা জুন প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা। আর প্রতি লিটার অকটেন ১৩১ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রোল ১২৭ টাকা। যা পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কমে আসছে।
আপনার মতামত জানানঃ