ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বহু দেশের নেতারা প্রকাশ্যে যদিও বলছেন যে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে রুবলে গ্যাস কিনবেন না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা গোপনে রাশিয়ার মুদ্রাতেই গ্যাস কিনছেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ গার্জেলি গুলিয়াস গতকাল রোববার এক রেডিও অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানিয়েছেন।
যদিও ইউক্রেন আগ্রাসনের পর রাশিয়ার প্রতি বন্ধুসুলভ নয় এমন দেশগুলোকে রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনার অর্থ রুবলে (রুশ মুদ্রা) পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তার এই ঘোষণার পর ইউরোপের অন্তত ১০টি দেশ রুবলে রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করছে বলে দাবি করেছেন হাঙ্গেরির এক কর্মকর্তা।
রোববার পাবলিক রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের চিফ অফ স্টাফ গারগেলি গালিয়াস দাবি করেন, একজন ভাল ইউরোপীয় নেতা সাজতেই তারা (১০ ইউরোপীয় দেশের নেতা) রুবলে গ্যাস আমদানির বিষয়টি স্বীকার করছেন না।
গালিয়াস জানান, হাঙ্গেরি ইতোমধ্যে রাশিয়ার গ্যাজপ্রমব্যাংকে একটি ইউরো অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার অর্থ সরবরাহকারীদেরকে রুবলে রূপান্তর করে পরিশোধ করা হবে। এর মাধ্যমে মার্চের শেষের দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের দেওয়া ঘোষণা বাস্তবায়ন হলো।
তিনি বলেন, “অন্য নয়টি দেশ একইভাবে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করছে। কিন্তু আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বা দেশের জনগণের কাছে একজন ভালো ইউরোপীয় হতে, সেই ৯ দেশের নেতারা স্বীকার করছে না যে তারা একই কাজ করছে।”
তবে গালিয়াস ঠিক কোন ইইউ দেশগুলোকে ইঙ্গিত করেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা গ্যাজপ্রম ইতোমধ্যেই পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়াতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে।
উভয় দেশই পুতিনের ঘোষণা অনুযায়ী রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধের বিষয়টিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এরপরেই গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া।
গেল সপ্তাহে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ব্লকের ১০ সদস্য রাষ্ট্র ইতোমধ্যেই গ্যাজপ্রমব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এবং ৪ দেশ এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির অর্থও পরিশোধ করেছে।
হাঙ্গেরি মূলত গ্যাস আমদানির জন্য সম্পূর্ণভাবেই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যটির ওপর ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছিল দেশটি। রোববার গালিয়াস আবারও রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ব্রাসেলসের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই এমন নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করা উচিত নয়, যার মাধ্যমে আমরা যাদেরকে শাস্তি দিতে চাই তাদের বদলে নিজেদেরকেই শাস্তি দিয়ে ফেলি।
তবে কোন কোন দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে রুবলের বিনিময়ে গ্যাস কিনছে তার নাম তিনি উল্লেখ করেন নি। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১০ দেশ রাশিয়াকে গ্যাসের মূল্য রুবলের মাধ্যমে পরিশোধ করার জন্য গজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে এবং এরইমধ্যে চারটি দেশ রুবলের এর মাধ্যমে রাশিয়াকে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করা শুরু করেছে।
এদিকে, ইউরোপের দেশগুলোর কাছে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্পের পর্যাপ্ত কোনো উৎস নেই। যার মাধ্যমে দেশগুলো রাশিয়ান গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেবে এবং আসন্ন শীতকালে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে এমন কথা জানিয়েছেন জ্বালানি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড চো।
তিনি তার বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, সবকিছু বিবেচনা করে সামনের ১৮ মাস ইউরোপের জন্য দুঃসময় হতে পারে। গ্যাসের দাম বেড়ে যেতে পারে। ইউরোপের দেশগুলো তাদের কলকারখানা গুলো চালু রাখতে হিমশিম খেতে পারে। ঘর উষ্ণ রাখতে ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে বেকায়দায় পড়তে পারে।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি রাশিয়া গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তাহলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বেশ বেগ পোহাতে হবে ইউরোপকে। কারণ এর কোনো বিকল্প আপাতত নেই।
ওই বিশ্লেষক আরও বলেন, খুবই বিপজ্জনক একটি খেলা হচ্ছে। আমি জানি না কিভাবে এটি শেষ হবে। আমার মনে হচ্ছে এটি এতোটাই খারাপভাবে শেষ হবে যার মারাত্বক প্রভাব পশ্চিম ইউরোপ ও রাশিয়ায় দুই জায়গাতেই পড়বে।
তার মতে, রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প নিয়ে যতই এখন বলা হোক না কেন এর কোনো অস্তিত্ব আপাতত নেই।
ওই বিশ্লেষক আরও জানিয়েছেন, জার্মানি সত্যিই রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া চলতে পারবে না। তারা রাশিয়ার গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি কমিয়ে দেওয়া সম্ভব না।
কারণ অন্য দেশ থেকে তরল গ্যাস আনার অবকাঠামোও তাদের কাছে নেই। তাছাড়া অন্য যে কয়েকটি বিকল্প আছে সেগুলো থেকে যদি গ্যাস আমদানি করা হয় তাহলে খরচ পড়বে অনেক বেশি।
আপনার মতামত জানানঃ