ন্যাটোর মতো সামরিক জোটগুলো বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হওয়ায় এদের বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ও লেবার দলের সাবেক নেতা জেরেমি করবিন।
ব্রিটিশ ম্যাগাজিন রেডিও টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে করবিন বলেন, প্রশ্ন হলো ভবিষ্যতে শান্তি নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী? আরও নতুন সব জোট গঠন? আরও বেশি করে সৈন্যজোট গড়ে তোলা?
তিনি বলেন, আমি এমন এক পৃথিবী দেখতে চাই যেখানে আমরা সামরিক জোটগুলো ভাঙতে দেখব।
ন্যাটোকে রাতারাতি বিলুপ্ত করা সম্ভব নয় স্বীকার করে স্বতন্ত্র এই ব্রিটিশ এমপি বলেন, সেরকম কিছু সম্ভব না হলেও ইউক্রেন যুদ্ধের পর মানুষের উচিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা।
তিনি আরও বলেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন। সামরিক জোট কি শান্তি আনতে পারে? নাকি প্রকৃতপক্ষে তারা একে অপরকে আরও ভয়ঙ্কর কিছুতে লিপ্ত হওয়ার উস্কানি দিয়ে থাকে?
তবে রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে সেজন্য ন্যাটোকে তিনি দোষারূপ করছেন না সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেন করবিন।
সাবেক এই লেবার নেতা বলেন, আমি আরও গভীর নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা চেয়েছিলাম। কারণ ন্যাটো গতবছরও রাশিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা আলোচনায় বসেছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতে লেবার দলের ১১ এমপির সঙ্গে স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশনের একটি পত্রে স্বাক্ষর করেন জেরেমি করবিন। সেখানে ন্যাটোকে “পূর্ব দিকে আগ্রাসন” বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। পত্রটিতে ইউক্রেন বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে “সামরিক হুমকি” ছড়ানোর অভিযোগও আনা হয়।
চলতি মাসের শুরুতে লেবার নেতা কিয়ের স্টারমার জানান, স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশনের সঙ্গে থাকলে করবিন লেবার হুইপের পদ ফিরে পাবেন না। স্টারমার জানান এটা পরিষ্কার যে, যারা লেবার এমপি হতে চান তাদের ন্যাটোকে সমর্থন করতে হবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে এই জোটের ‘মিথ্যা তুলনা’ করা বন্ধ করতে হবে।
এর আগে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগে ২০২০ সালে লেবার দল থেকে বহিষ্কৃত হন করবিন।
ন্যাটোর হুমকি বন্ধ হলেই যুদ্ধ থেমে যাবে
ইউক্রেনের ভূখণ্ড ব্যবহার করে মস্কোর প্রতি ন্যাটোর হুমকি বন্ধ হলেই সামরিক অভিযানের ইতি টানা হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আলেক্সি পোলিশচুক এ কথা বলেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘তাস’ এর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
তিনি বলেন, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ হলে রাশিয়ার কাজগুলো সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে দোনবাসের জনগণের শান্তিপূর্ণ সুরক্ষা, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিবাদ মুক্তকরণ। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে ন্যাটো থেকে রাশিয়ার প্রতি যে হুমকি আসছে তা বন্ধ হওয়া।
তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে ন্যাটো কীভাবে রাশিয়াকে হুমকি দিচ্ছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি এ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় অধ্যুষিত দোনবাস অঞ্চলকে বেসামরিকীকরণের লক্ষ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করেন। এই যুদ্ধে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে।
রাশিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
ইউক্রেনের ওপর আক্রমণের দুই মাস পার হতে না হতেই শক্তি প্রদর্শনে নতুন এক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। বুধবার (২০ এপ্রিল) ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে খবর নিশ্চিত করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক টেলিভিশন বার্তায় বলেন, এটি মস্কোর শত্রুদের দুইবার ভাবতে বাধ্য করবে। খবর রয়টার্সের।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত সারমাট ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের প্লেসেটস্ক থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। সেখান থেকে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ৭০০ মাইল) দূরে কামচাটকা উপদ্বীপে লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানে এটি।
বছরের পর বছর ধরে ক্ষেপণাস্ত্র সারমাট পরীক্ষার কাজ চালিয়ে আসছিল রাশিয়া। তাই এর সফল পরীক্ষায় তেমন অবাক হয়নি পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ উত্তেজনার মাঝে শক্তিশালী এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষায় ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫৫
আপনার মতামত জানানঃ