সুইডেনে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পুড়িয়েছে এমন একটি কট্টর দক্ষিণপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে।
শনিবার রাতে মালমো শহরে স্ট্রাম কুর্স নামের কট্টরপন্থী সংগঠনটির বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই সংগঠনটি অভিবাসন বিরোধী এবং ইসলাম-বিদ্বেষী বলে পরিচিত এবং এর নেতৃত্ব দেন রাসমুস পালুডান নামের একজন উগ্রপন্থী।
বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন দেয় এবং অনেকে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার (১৭ এপ্রিল) পূর্বাঞ্চলীয় শহর নরকপিং-এ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি চালালে তিনজন আহত হয়।
এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার দক্ষিণের শহর মালমোতেও ডানপন্থী সমাবেশে একটি বাসসহ কয়েকটিতে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার উগ্রবাদী ডানপন্থী গোষ্ঠী স্ট্রাম কুর্স-এর নেতা রাসমুস পালুদান ঘোষণা দেন, তিনি মুসলিমদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে দিয়েছেন।
এমনকি ভবিষ্যতে তিনি ও তার সংগঠন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবেন বলেও জানান। এ ঘটনায় সুইডেনের একাধিক শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু হয়।
স্টকহোমের শহরতলিতে এবং লিংকোপিং ও নরকেপিং শহরসহ যে সমস্ত জায়গায় অতি-ডানপন্থী গোষ্ঠী কোরআন পোড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল সেখানে বৃহস্পতিবার, শুক্র এবং শনিবারের বিক্ষোভে কমপক্ষে ১৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে যে, শতাধিক যুবক পাথর ছুঁড়েছে, গাড়ি, টায়ার এবং ডাস্টবিনে আগুন দিয়েছে এবং ল্যান্ডসক্রোনা শহরে অবরোধ দিয়েছে যখন কর্তৃপক্ষ ডেনিশ পার্টি স্ট্রাম কুর্সের দ্বারা নির্ধারিত একটি বিক্ষোভকে নিকটবর্তী শহর মালমোতে স্থানান্তরিত করেছে, যেটি প্রায় ৪৫ কিমি (২৭ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।
শনিবারের শেষের দিকে ল্যান্ডসক্রোনায় পরিস্থিতি শান্ত হয়েছিল কিন্তু উত্তেজনা রয়ে গেছে, পুলিশ বলেছে, অশান্তির মধ্যে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ সুইডেনের পুলিশের মুখপাত্র কিম হিল্ড শনিবারের আগে বলেছিলেন যে, পুলিশ স্ট্রাম কুরস পার্টির দ্বারা আয়োজিত ল্যান্ডসক্রোনা বিক্ষোভের অনুমতি প্রত্যাহার করবে না কারণ সুইডেনে মুক্ত মতের গুরুত্ব দেয়া হয়।
সুইডেনের পুলিশ প্রধান অ্যান্ডার্স থর্নবার্গ বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পর্যন্ত পরোয়া করছে না। তিনি বলেন, “আমরা আগেও সহিংস দাঙ্গা দেখেছি, কিন্তু এটা মনে হচ্ছে একেবারেই ভিন্ন কিছু।”
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডানপন্থী নেতা পলুদান রোববার নরকোপিংয়ে আরও একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সেখানে পাল্টা বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়।
সুইডেনের পুলিশ প্রধান অ্যান্ডার্স থর্নবার্গ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের জীবনের পরোয়া করছে না।
তিনি বলেন, “আমরা এর আগেও সহিংস দাঙ্গা দেখেছি। তবে এটি আগের মতো নয়, বরং অন্যরকম।”
স্ট্রাম কুর্সের কোরআন পোড়ানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও সুইডেনে একই ঘটনা ঘটতে ও বিক্ষোভকে সহিংসতায় রূপ নিতে দেখা গেছে।
২০২০ সালের বিক্ষোভে মালমোজুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল। গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল সে ঘটনায়।
২০২০ সালে রাসমুস পালুদান বর্ণবাদের পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধের জন্য একমাস জেল খেটেছেন ডেনমার্কে। এরপরেও ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে একইভাবে পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার পরিকল্পনা করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
সুইডেনের এই কট্টর দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী গত বৃহস্পতিবার কোরআনের একটি কপি পোড়ায় এবং সামনের দিনে তাদের সমাবেশ থেকে আবারও এই কাজ করার পরিকল্পনা করছে। এর বিরুদ্ধে সুইডেনে তীব্র ধিক্কার উঠেছে এবং সুইডেনের বাইরেও এই ঘটনার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
ইরাকী পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বাগদাদে সুইডেনের দূতকে ডেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এ ঘটনায় সুইডেনের সঙ্গে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সম্পর্কের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
ইরানও সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কঠোর ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪৫
আপনার মতামত জানানঃ