
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় সারা পৃথিবীতে অন্তত ২৫ কোটি মানুষ এখন চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। এ ছাড়া এই যুদ্ধ খুব শিগগির আরও অন্তত ১০০ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অক্সফাম এসব তথ্য জানিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
অক্সফামের আন্তর্জাতিক নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার বলেন, অবিলম্বে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে পৃথিবীতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ এবং দরিদ্রতর দেশগুলোর ঋণ মওকুফ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
অক্সফাম জানায়, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির বাড়তি খরচ যোগাতে ঋণগ্রস্থ দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে সরকারি ব্যয় কমাতে হতে পারে। এ বছরের ঋণ মওকুফ করে দেয়া হলে দেশগুলোর ঘাড় থেকে ৩ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণের বোঝা নেমে যেতে পারে বলে মনে করে সংস্থাটি।
ধনী ব্যক্তিদের পাশাপাশি মহামারী বা ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকটকে পুঁজি করে লাভবান হওয়া কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম। এছাড়া দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করতে জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি ভর্তুকি প্রদান এবং পণ্য ও পরিষেবার ওপর কর কমিয়ে মূল্যস্ফীতির হাত থেকে দরিদ্রতর দেশগুলোকে বাঁচানোর আহ্বানও জানিয়েছে দাতব্য সংস্থাটি।
কভিড মহামারীর কারণে এ বছর প্রায় ২০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে পারে বলে এরই মধ্যে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে অক্সফামের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ায় আরো প্রায় সাড়ে ছয় কোটি লোক চরম দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ লোক পুষ্টিহীনতায় ভুগবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনছে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলোই বেশি ভুগছে। খাদ্যের দাম বাড়ছে। এটি দরিদ্র দেশগুলোর জন্য সত্যিকারে সমস্যা ও চিন্তার বিষয়। তবে যুদ্ধে যত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস।
বিশ্বব্যাংক প্রধান বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এমন এক খারাপ সময়ে আসলো, যখন আগে থেকেই বিশ্ব মূল্যস্ফীতির সংকটে ছিল। তিনি বলেন, ইউক্রেন সীমান্তের বাইরেও এই যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ছে। জ্বালানির দাম বাড়ছে, বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আর এগুলোতে গরিব দেশগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন উভয়ই বিশ্বের অন্যতম খাদ্য উৎপাদক। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্যমতে, বিশ্বে সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে ইউক্রেন প্রথম ও রাশিয়া দ্বিতীয়। এ দুই দেশে বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ সূর্যমুখী তেল উৎপাদন হয়।
এছাড়া জেপি মরগানের হিসাবে, বিশ্বের অন্তত ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ গম উৎপাদন হয় ইউক্রেন-রাশিয়ায়। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে শিকাগো ফিউচার এক্সচেঞ্জে গমের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের মতে, রাশিয়ার ক্ষেত্রে এসব পণ্য সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণ ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা। আর হামলার মুখে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেনের সরবরাহও আপাতত শূন্য। বিশ্বব্যাংক প্রধানের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধের ক্ষতি দ্রুত পূরণের কোনো রাস্তা নেই। তাই দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই কথা রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের ক্ষতির বিষয়টি। ডেভিড মালপাসের অভিযোগ, রাশিয়াকে বাদ দিয়ে কীভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা হবে, তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করেনি ইউরোপীয় দেশগুলো। এ অঞ্চলের প্রায় ৩৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে, আর তার বড় উৎস রাশিয়া থেকে আসা তেল ও গ্যাস।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়ালে রাশিয়া স্থায়ীভাবে কিছু বাজার হারাতে পারে। এভাবে আয় কমে যাওয়ায় সেখানে জীবনযাত্রার মান যেমন কমবে, তেমনি রুবলের দরপতন এবং মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার এ ধরনের আরও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।
আপনার মতামত জানানঃ