ইউক্রেন ইস্যুতে বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে প্রভাবশালী দেশগুলো। তবে এর শুরুটা হয় আফগানিস্তানে তালিবানের উত্থান দিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে তাদের সেনা প্রত্যাহার শুরু করলে তালিবান সাবেক আফগান সরকারের বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। ২০২১-এর ১৫ আগস্ট তালিবান কোনো বাধা ছাড়াই কাবুলে প্রবেশ করে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। সে সময় আফগানিস্তানের তৎকালীন মার্কিন সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি জানান, রক্তপাত এড়াতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি আর এর পরপরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান গনি।
৬ সেপ্টেম্বর তালিবান জানায়, তারা পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আর এর কয়েক দিনের মধ্যে তারা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তালিবান সরকারকে বিশ্বের কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই দেশটির সীমান্তবর্তী সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দেশ তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কেমেনিস্তানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রেখে রাশিয়া তার প্রভাব ধরে রাখে।
আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল করার বিভিন্ন পন্থা নিয়ে আলোচনা এবং এর ইসলামপন্থী তালিবান শাসকদের মধ্যপন্থী নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে “নিষ্ঠার সঙ্গে” লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অবহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্প্রতি চীন একাধিক সমন্বিত বহুপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করে।
চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশের টুনসিতে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের মাধ্যমে এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সভাপতিত্বে আলোচনাটি শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) চীনের আনহুই প্রদেশের প্রাচীন শহর থুনিশিতে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠক চলছে। বৈঠকেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ন্যাটোর উপস্থিতি নিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে মস্কো।
এ বৈঠকে চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছেন।
২০০১ সালে পাঁচ বছরের তালিবান শাসনের অবসান ঘটিয়ে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ও তাদের মিত্র দেশের বাহিনীগুলো। তখন রাশিয়া ও চীন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর অভিযানের সমর্থন দেয়। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের প্রতিবেশী উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তানে অস্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। যদিও উজবেকিস্তানের মার্কিন ঘাঁটি ২০০৫ সালে এবং কিরগিজস্তানের সামরিক ঘাঁটি ২০১৪ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বৈঠকে ল্যাভরভ অভিযোগ করে বলেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস) মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জন্য হুমকি এবং তারা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ও সেখান থেকে রাশিয়ায় অস্থিরতা ছড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে নিয়ে রাশিয়া অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ইসলামিক স্টেট ও এর মিত্ররা মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে এবং এ অস্থিরতা রাশিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
রাশিয়ার সাথে আছে বন্ধু চীন
চীনকে নিয়ে নতুন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় রাশিয়া। চীন সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গত বুধবার(৩১ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় এই আকাঙ্ক্ষার কথা জানান ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর এটিই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম চীন সফর। এ সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ চীনের তুনসি শহরে মিলিত হন। ইউক্রেন সংকটের মাঝে এই বৈঠককে ঘিরে উত্তেজনার আশঙ্কা আরও বেড়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভিডিওতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, ‘চীন এবং রাশিয়া একটি নতুন ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে’।
ভিডিওতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে বিশ্ব একটি গুরুতর পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনারাসহ (চীন) আমরা মিলে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো নিয়ে একটি বহুমেরুকেন্দ্রিক, ন্যায়পরায়ণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাব।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পাঁচ সপ্তাহ গড়ালেও এখনো এর নিন্দা জানায়নি বেইজিং। পাশাপাশি রাশিয়াকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে চীন সহযোগিতা করতে চাচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এমন পথে না হাঁটতে সম্প্রতি এক ভিডিও কনফারেন্সে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকে সতর্ক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন সাংবাদিকদের বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে মস্কো ও বেইজিং কাজ করে যাবে।
এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ বিবৃতিতে চীন এবং রাশিয়া বলেছিল, ‘দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কোনো সীমারেখা নেই’। আর গত সোমবার (২৮ মার্চ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেছেন, চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোত্তম পর্যায়ে রয়েছে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, শুধু সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বা রাশিয়ার চাওয়া নয় ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিনের পক্ষ নিয়ে আমেরিকাকে কোণঠাসা করার পেছনে চীনের নিজস্ব ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।
ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ক্রিস মিলার বলেন, ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপসহীন অবস্থান দেখে চীন তাইওয়ান নিয়ে চিন্তিত। চীন মনে করছে তাইওয়ান বা দক্ষিণ চীন সাগরের ইস্যুতেও যে তারা এমন কঠোর অবস্থান নেবে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন নিয়ে রেষারেষিতে সফল হোক, চীন তা চায় না। ইউক্রেনের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও বা সে দেশে রুশ সামরিক অভিযানে অস্বস্তি বোধ করলেও কোনো যুদ্ধ বাধলে চুপ করে থাকা চীনের জন্য এ দফায় শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
ভারত ঝুঁকছে রাশিয়ার দিকে
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে ভারত সফরে এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ভারতে পৌঁছান তিনি।
আজ (১ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন সের্গেই ল্যাভরভের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
ইউক্রেন যুদ্ধ ভারতের কাছে উভয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে গণতন্ত্র ও তার আদর্শ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তাদের মিত্রশক্তিদের চাপ, অন্যদিকে ভারতের কাছে দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার প্রত্যাশা। এই দুইয়ের মধ্যে কোনো এক পক্ষকে বেছে নেওয়া ভারতের পক্ষে যতটা কঠিন, ঠিক ততটাই কঠিন ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এত দিন ধরে আপাতনিরপেক্ষতা অবলম্বন করে আসা ভারত শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থানে অটল থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ভারত সফর ঘিরে এটাই হয়ে উঠেছে মূল আকর্ষণ।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার কোনো নেতার এটাই প্রথম ভারত সফর।
যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে ভারতও ‘কোয়াড’ অক্ষের অংশীদার। ভারত ছাড়া বাকি তিন দেশই ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ। একমাত্র ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলছে। লাভরভের এই সফরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষাসংক্রান্ত এক প্রস্তাব বিবেচিত হওয়ার কথা।
এদিকে যুদ্ধের প্রভাব এড়াতে নতুন নীতিতে বাণিজ্য শুরু করতে যাচ্ছে রাশিয়া ও ভারত। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট জটিলতা এড়াতেই নিজেদের মধ্যে ডলারের বদলে সরাসরি রুপি-রুবলে বাণিজ্য শুরু করতে যাচ্ছে এই দুই দেশ। খুব শিগগিরই এই ব্যবস্থা চালু হতে পারে। এর ফলে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ভারতের জন্য সস্তায় তেল আমদানির পথও প্রশস্ত হবে।
ভারত ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কেনার চুক্তি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার অর্থ যুদ্ধবাজ রাশিয়াকে সাহায্য করা।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে চীনের প্রভাব খর্ব ভারতের জন্য যতটা জরুরি, ততটাই প্রয়োজনীয় রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখা। বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ঠেকাতে চীন ও রাশিয়ার কাছাকাছি আসাও ভারতের কাছে উদ্বেগজনক। রাশিয়া-ভারত বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। সেই সোভিয়েত আমল থেকে রুশ-ভারত মৈত্রী সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকাও অনন্য। ভারতের প্রতিরক্ষাসম্ভারের ৭০ শতাংশ রাশিয়ানির্ভর।
স্বাভাবিক স্বার্থজনিত কারণেই ভারত এই সংকটে রাশিয়ার সরাসরি বিরোধিতা করতে চায় না। সেই কারণে জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা কোনো প্রস্তাবেই ভারত পক্ষ নেয়নি। ভোটদানে বিরত থেকেছে। যুদ্ধ বন্ধ রেখে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে মীমাংসার কথা বলে আসছে। ভারতের এই মনোভাব মেনে নিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য গণতান্ত্রিক মিত্রশক্তি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেই ভারতীয় অবস্থানকে ‘নড়বড়ে’ বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে যুদ্ধের প্রভাব এড়াতে নতুন নীতিতে বাণিজ্য শুরু করতে যাচ্ছে রাশিয়া ও ভারত। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট জটিলতা এড়াতেই নিজেদের মধ্যে ডলারের বদলে সরাসরি রুপি-রুবলে বাণিজ্য শুরু করতে যাচ্ছে এই দুই দেশ। খুব শিগগিরই এই ব্যবস্থা চালু হতে পারে। এর ফলে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ভারতের জন্য সস্তায় তেল আমদানির পথও প্রশস্ত হবে।
যেহেতু ইউক্রেন সংকটের জেরে রাশিয়ার উপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাই স্থানীয় মুদ্রায় অর্থপ্রদানের ব্যবস্থার সুযোগটি চলমান বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখার একটি মাধ্যম থেকে আবির্ভূত হয়েছে। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ উভয় দেশের মধ্যে গভীর সম্পৃক্ততার সম্ভাবনার পথ আরও উন্মুক্ত হবে।
কোণঠাসায় যুক্তরাষ্ট্র-পশ্চিমারা
আজ শুক্রবার (১ এপ্রিল) ভারত সফর করছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
লিজ ট্রাসের ভারত সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাশিয়ার ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা কমিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা। অন্যদিকে, একই উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে সফর করছেন সের্গেই ল্যাভরভ।
ল্যাভরভের সফরের প্রায় একই সময়ে দিল্লিতে এসে লিজ ট্রাস রাশিয়ার বিরোধিতার জন্য ভারতকে চাপ দেবেন। তিনি কী বলবেন, তার একটা ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাস বলবেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ বুঝিয়ে দিচ্ছে আগ্রাসন রুখতে ও বিশ্বের নিরাপত্তার স্বার্থে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কতটা জোটবদ্ধ হওয়া জরুরি। ট্রাস ওই বিবৃতিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে প্ররোচনাহীন বলেছেন।
রাশিয়ার কাছ থেকে এখন ডিসকাউন্টে প্রচুর পরিমাণ তেল কিনছে ভারত। মার্কিন প্রশাসনের এক প্রবীণ কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ভারত যে হারে মস্কো থেকে তেল কিনছে, তার ফলে তারা ভবিষ্যতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে।
কিছুদিন আগেই বাইডেন প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, ভারত যদি ডিসকাউন্টে রাশিয়া থেকে তেল কেনে, তাহলে আমেরিকার কোনো আপত্তি নেই। কারণ, এখন যে নিষেধাজ্ঞা চালু আছে, তাতে রশিয়া থেকে তেল কেনার কোনো বাধা নেই।
কিন্তু এখন মার্কিন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবে তেল কিনলে আমেরিকার কোনো আপত্তি নেই। স্বাভাবিকভাবে মানে অন্যান্য বছর রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল কেনা হতো, এখনও সেই পরিমাণ বা তার সামান্য কম-বেশি তেল কেনা যেতে পারে। কিন্তু পরিমাণটা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে অসুবিধা রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উপ–অর্থমন্ত্রী (ডেপুটি ট্রেজারি সেক্রেটারি) ওয়ালি অ্যাডেইমো সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোকে ব্যবসার জন্য একটি পক্ষ বেছে নিতে হবে। ঠিক করতে হবে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করবে, নাকি পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করবে।
বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইউক্রেনের মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে চায়। এ পর্যায়ে বড় সংস্থাগুলো ব্যবসা চালু রেখে ইউক্রেনে আগ্রাসনের বিষয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করে যেতে পারে। অথবা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ৩০টি দেশের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে সম্পদ জব্দের বিষয়ে রাশিয়ার অভিজাত ধনীদেরও (অলিগার্ক) সতর্ক করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ