অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশের সমুদ্র উপকূল বৈচিত্র্যময়ী এই মাছের দেখা মেলে। এ পর্যন্ত সি হর্সের ৪৬টি প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গেছে; যার মধ্যে সবচেয়ে ছোট জাতের আকার একটি বাটার বিনের সমান এবং সবচেয়ে বড় জাতের আকার মোটামোটি একটি বেসবল গ্লাভসের সমান।
বেশিরভাগ মানুষই প্রাণীটিকে এর বিশেষ এক ক্ষমতার জন্য চেনে। প্রায় সবক্ষেত্রেই স্ত্রী-জাতের প্রাণীদের সন্তান ধারণ করতে দেখা গেলেও ঘোড়মাছের বেলায় একদমই ভিন্নচিত্র দেখা যায়। যদিও সন্তান জন্ম দেয়া থেকে শুরু করে তাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব মায়ের উপরই বর্তায়। প্রাণীজগতেও এই রীতি রয়েছে। যদিও কিছু প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়, মা ডিম পাড়লেও বাবা সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করে।
অনেক সময় পাখির ক্ষেত্রে ডিমে তা দেয় পুরুষ পাখি আবার দেখা যায় মুখে নিয়ে পুরুষ মাছেরা ডিমগুলো ফোটার আগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে। গর্ভধারণ শুধু নারীর ক্ষমতার মধ্যেই পড়ে, আমরা এমনটাই জানি।
অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো, প্রাণীজগতে এমন এক মাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাদের পুরুষরা গর্ভধারণ করে। প্রাণীটির নাম সি হর্স বা হিপোক্যাম্পাস।
যেভাব সি হর্স পুরুষরা গর্ভধারণ করে
সি হর্সরা গিরগিটির মতো রং পাল্টায়। আত্মরক্ষার সময় বা সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করতে। তাদের রং দেখেই স্ত্রী সি হর্সরা কাছে এগিয়ে আসে। সারা প্রজনন ঋতু পুরুষ সি হর্স কাটায় এক প্রেমিকাকে নিয়েই।
প্রজনন ঋতুতে অনেক বেশি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে তারা। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে এসময় স্ত্রী সি হর্সের সঙ্গে পুরুষরা সময় কাটায়। অর্থাৎ মিলনের আগে তারা জমিয়ে প্রেম করে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের মত, মিলনের আগে তাদের মধ্যকার এই প্রেমের ফলে পুরুষ ও স্ত্রী সি হর্সের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সুপুষ্ট হয়। এই সময় তাদের দেহের রঙ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। একে অপরের লেজ আঁকড়ে জলে পাশাপাশি সাঁতার কাটতে থাকে।
এই সময় পুরুষ সি হর্স তার পেটের থাকা থলি ব্রুড পাউচটির ভেতরে পানি ঢুকিয়ে নিয়ে থলিটি পরিষ্কার করে নেয়। এভাবেই গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেয় সি হর্স পুরুষ।
অতঃপর মিলনের সময় স্ত্রী মাছটি তার ওভিপজিটর নালির সাহায্যে পুরুষের ব্রুড পাউচ নামক থলির মধ্যে ডিম্বাণু ঢেলে দেয়। এতে সময় লাগে মাত্র ছয় সেকেন্ড। পুরুষটি এরপর সেই থলের ভেতর শুক্রাণু ছেড়ে দেয়। শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর মিলন হয়। তৈরি হয় ভ্রূণ।
এবার স্ত্রী সি হর্সের শরীর পাতলা হয়। অন্যদিকে পুরুষ সি হর্সের পেট ফুলতে থাকে। এখন থেকেই পুরুষ সঙ্গীকে সর্বদা সঙ্গ দিতে থাকে স্ত্রী মাছটি। অপেক্ষায় থাকে কখন তার পুরুষ সঙ্গী সন্তান প্রসব করবে।
প্রজাতি ভেদে নয় থেকে ৪৫ দিন গর্ভধারণ করে পুরুষ সি হর্সরা। পুরুষটি গর্ভধারণকালে ৩৩ শতাংশ বেশি অক্সিজেন নেয় সঙ্গে বেশি খাবার খায়। এদিকে খাবার খুঁজে নিয়ে এসে পুরুষটিকে খেতে দেয় স্ত্রী। ডিমগুলো থলিতে নিয়ে পুরুষ সি হর্স খুব সাবধানে চলাফেরা করে। ব্রুড পাউচে থাকা শিশু সি হর্সগুলো প্রসবের উপযোগী হয়ে গেলে, পুরুষ সি হর্স সন্তান প্রসব করে।
প্রজাতি ভেদে ১০০ থেকে এক হাজারটি পর্যন্ত সন্তান প্রসব করে পুরুষ সি হর্সরা। সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুরুষ সি হর্স প্রসব করে রাতের অন্ধকারে। তবুও প্রসব করা শিশু সি হর্সগুলোর মধ্যে মাত্র দশমিক পাঁচ শতাংশ বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক হতে পারে। প্রাণীকূলের বিরল এক প্রজাতির মাছ সি হর্স। তাদের জীবন ধারণ ব্যবস্থা সত্যিই অবাক করার মতো।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ