করোনাকালে বেড়েছে নারী উন্নয়নে বড় বাধা বাল্যবিবাহ, যা নারী নেতৃত্বের পথেও অন্তরায়। করোনাকালে স্কুলগুলো বন্ধ, কাজ না থাকা, যৌন সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাল্য বিয়ে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় আলোচ্য অবস্থানে।
ভারতে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এ রাজ্যে ১০০ জনের মধ্যে ৪৫ জনের বেশি মেয়ের বয়স ২১ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। সম্প্রতি বিয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল ২০১৯ সালের ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’-এর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতেই উঠে এসেছে এমন চিত্র। খবর আনন্দবাজার
পরিসংখ্যানের তথ্য-উপাত্ত বলছে, ভারতে জাতীয় স্তরে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২২ দশমিক ১ বছর। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২১ বছর। পাঞ্জাবে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২৪ দশমিক ২ বছর, দিল্লিতে ২৪ দশমিক ১ বছর। বিয়ের গড় বয়সের দিক দিয়ে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও বিহার রাজ্য থেকেও পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গের ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ মেয়ের ২১ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হলেও, ৩ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ের তারও আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে ২১ বছরের পরে।
তবে রাজ্যের সমাজকল্যাণ দপ্তরের সংঘমিত্রা ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি এখনো পরিসংখ্যানটি দেখেননি। তিনি বলেন, বিয়ের বয়সের পরিসংখ্যানের অংক দিয়ে রাজ্যে মেয়েদের ক্ষমতায়নের জায়গাটা কোথায় দাঁড়িয়ে তা বোঝা যাবে না। তিনি কন্যাশ্রী প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন।
রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী উল্টো দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে কম বয়সে বিয়ের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে, কারণ এখানে বেশির ভাগ বিয়েই প্রশাসনের কাছে নথিভুক্ত হয়। অন্য অনেক রাজ্যে তা হয় না বলেই আসল পরিস্থিতিটা বোঝা যায় না।
মেয়েদের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এ পরিসংখ্যান করোনা মহামারির আগের। তবে করোনা মহামারিতেও বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে বিশ্বজুড়ে, বলছেন নারী অধিকারকর্মীরা।
মেয়েদের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এ পরিসংখ্যান করোনা মহামারির আগের। তবে করোনা মহামারিতেও বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে বিশ্বজুড়ে, বলছেন নারী অধিকারকর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে নানামুখী তৎপরতা চলছিল এবং তাতে কিছু সাফল্য আসাও শুরু করেছিল, কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সেসব তৎপরতা অনেকাংশে সীমিত হয়ে পড়ায় ফের উন্নয়নশীল ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে বাড়ছে এই সামাজিক সমস্যা। এছাড়া, বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়িয়েছে মহামারি।
বাল্যবিবাহ কিশোরী মেয়েদের সহজাত উচ্ছ্বাস, বৃদ্ধি ও গতিশীলতাকে থামিয়ে দেয়। প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব থাকে। এর ফলে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হয়। কৈশোরকালে গর্ভধারণের ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং গর্ভকালে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান প্রসবের কারণে মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
এ কারণে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পাশাপাশি বাল্যবিবাহবিরোধী পদক্ষেপের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাল্যবিবাহকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩১
আপনার মতামত জানানঃ