প্রথম ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ খোঁজ মিলেছিল নব্বই দশকের শুরুতেই। এবার সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ সন্ধান পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
প্রসঙ্গত বলে রাখি আমাদের সূর্যকে ঘিরে আবর্তন করা গোলকগুলোকে আমরা বলি গ্রহ বা প্ল্যানেট। সৌরজগতের বাইরে অন্য কোনো নক্ষত্রকে আবর্তন করা বস্তুকেই বলা হয় এক্সোপ্ল্যানেট।
প্রথম ‘এক্সোপ্ল্যানেট’-এর সন্ধান মিলেছিল নব্বই দশকের শুরুতে। অর্থাৎ, নতুন নতুন ‘এক্সোপ্ল্যানেট’-এর সন্ধান মিলছে বেশ দ্রুতগতিতেই। নাসা আর্কাইভে চার হাজার ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ যোগ করার ঘোষণা দিয়েছিল ২০১৯ সালের জুন মাসে। তিন বছরেরও কম সময়ে আরও এক হাজার গ্রহ যোগ হলো আর্কাইভটিতে।
সূত্র মতে, আমাদের পৃথিবীর মতো ছোট, পাথুরে জগৎ খুঁজে বের করার জন্য এক্সোপ্ল্যানেট-হান্টিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল, যা ট্রানজিট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি গ্রহ বা গ্রহ-সদৃশ এক্সোপ্ল্যানেটগুলো চিহ্নিত করা হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম বোরুকি একটি টেলিস্কোপের সঙ্গে অত্যন্ত সংবেদনশীল আলো আবিষ্কারক সংযুক্ত করার পর মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিলেন। টেলিস্কোপটি বছরের পর বছর ধরে ১ লক্ষ ৭০ হাজার নক্ষত্রের একটি ক্ষেত্রের দিকে তাকিয়ে থাকবে। যখন একটি গ্রহ একটি নক্ষত্রের মুখ অতিক্রম করবে তখন তারার আলোতে তা অনুসন্ধান করবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বহুদিনের গবেষণায় মহাকাশের অনেক রহস্যভেদই করেছেন। আবিষ্কার করেছেন নানা গ্রহ-গ্রহাণু ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের সৌরজগতে বা তার বাইরে নিশ্চিত ভাবে প্রাণের কোনও প্রমাণ মেলেনি।
তবে এবার নাসা এক অসাধারণ কাজ করেছে। তারা এই বিপুল মহাবিশ্বে পৃথিবীর মতো অন্তত ৫০০০টি মহাজাগতিক বস্তু (গ্রহ) আবিষ্কার করেছে। সম্প্রতি তারা ৬৫টি নতুন গ্রহ আবিষ্কার করেছে। আর আগের করা আবিষ্কারের মোট সংখ্যা মিলিয়ে সেটা পাঁচ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।
নাসা বলেছে, যে গ্রহগুলো আবিষ্কার হয়েছে, তাদের প্রত্যেকটি একটি নতুন বিশ্ব। একেবারে নতুন গ্রহ৷ আমাদের সৌরজগতের বাইরে এমন ৫ হাজারটিরও বেশি নতুন বিশ্বের সন্ধান মিলেছে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৫ হাজারটি এক্সোপ্ল্যানেটের গঠন এবং বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিসর রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর মতো ছোট পাথুরে জগত, বৃহস্পতির থেকে বহুগুণ বড় গ্যাস দৈত্য।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রহের আবিষ্কার একটি দীর্ঘ ও শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। এ জন্য স্থল-ভিত্তিক এবং মহাকাশ-ভিত্তিক টেলিস্কোপগুলো থেকে আসা ডেটাগুলো বছরের পর বছর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। ১৯৯৫ সালে একটি সূর্যের মতো নক্ষত্রের চারপাশে শনাক্ত করা প্রথম গ্রহটি একটি উত্তপ্ত বৃহস্পতিতে পরিণত হয়েছিল। এটি একটি গ্যাস দৈত্য, যা আমাদের নিজস্ব বৃহস্পতির ভরের অর্ধেক। তা নক্ষত্রের কক্ষপথ চার দিনে পরিভ্রমণ করতে সক্ষম। অর্থাৎ ওই গ্রহে এক বছর হয় মাত্র চার দিনে।
এরকম কত গ্রহ-গ্রহাণু, মহাজাগতিক বস্তুই তো থাকতে পারে মহাকাশে। তা নিয়ে মানবসভ্যতা কেন উদ্বেলিত হবে? হওয়ার কারণ আছে। আবিষ্কৃত বস্তুগুলো পৃথিবী না হলেও এগুলোকে ‘আর্থ-লাইক প্ল্যানেট’ তকমায় দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন আর্থ-লাইক? কারণ, বিজ্ঞানীদের অনুমান, এগুলোতে থাকতে পারে জল, অনুজীব, গ্যাস এমনকী প্রাণকণাও! আকারে প্রকারে এগুলোর রকমফেরও আছে। কোনওটি ‘সুপার-আর্থ’, যেগুলো আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ঢের বড়, কোনওটি আবার ‘মিনি-নেপচুন’, যেগুলো নেপচুনের চেয়ে ছোট।
এইসব গ্রহগুলো গত তিন দশক ধরে আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, এইসব গ্রহগুলো এক একটা বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্টযুক্ত। আর্কাইভের বিজ্ঞানের প্রধান এবং ক্যালটেকের নাসা এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউটের একজন গবেষণা বিজ্ঞানী জেসি ক্রিশ্চিয়ানসেনও অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতো বলেন, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে শত শত বিলিয়ন গ্রহ রয়েছে এবং এটি কেবল একটি গ্যালাক্সি।
এখন প্রশ্ন উঠছে এই মহাবিশ্ব কত বড়? ধারণা করা বা পাওয়া যথেষ্ট কঠিন। তবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দেখিয়েছে একটি সিঙ্গল ফ্রেমে হাজার হাজার গ্যালাক্সি! ফলে এখনও যে অনেক অনেক নতুন নতুন পৃথিবী আবিষ্কারের অপেক্ষায় তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ‘কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ’ এবং হালের ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ (TESS) এর সাহায্যে গবেষকদের পরিশ্রম ও ডেটা সংগ্রহের কারণে দূরের গ্রহগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানা যায়।
বিজ্ঞানীরা কেবল খেলার ছলে এসব ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ খোঁজ করছেন না, বরং এদের মধ্যে কোনো গ্রহ বাসযোগ্য কি না সেটিও নির্ধারণের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি চালু হওয়া ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’-এর সাহায্যে ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ এবং গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সাইটটি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানি আলেকজান্ডার ওলসজান বলেন, আমার ধারণা, এটা অবশ্যম্ভাবী, আমরা হয়ত কোথাও কোনো আদি জীবন খুঁজে পাব। উল্লেখ্য, তিন দশক আগে প্রথম এক্সোপ্লানেট আবিষ্কারের গবেষণা প্রতিবেদনটির মূল লেখক ছিলেন তিনি।
এখনো হুবহু পৃথিবীর মতো গ্রহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, পৃথিবীর সৌরজগতের বাইরে অন্য ভিন্ন ভিন্ন সৌরজগতগুলোতেও খোঁজ মিলছে এক্সেপ্লানেটের। পাঁচ হাজার সংখ্যায় বড় মনে হলেও পুরো ছায়াপথের সঙ্গে তুলনা করলে একে তুচ্ছই বলা চলে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ