যুক্তরাজ্যে জোবাইদা নামে এক মুসলিম নারীর হত্যা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো অভিনব এক সত্য। জানা যায়, নিহত ওই নারীর মোবাইল চুরি করে সেই ফোন থেকে তার স্বামী নিজাম স্ত্রীর মিথ্যা পরকীয়ার কথা জানিয়ে নিজের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠায়।
তাতে লেখা ছিল— আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ রেখো না, আমার একটি বয়ফেন্ড আছে এবং তার সঙ্গে দ্রুত আমি এই এলাকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছি। আমার জীবন থেকে তুমি চলে যাও, তোমাকে আর আমার প্রয়োজন নেই।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রোমসগ্রোভ শহরে পিজার দোকানদার নিজাম সালাঙ্গি (৪৪) তার স্ত্রী জোবাইদাকে খুন করেন। খবর আরব নিউজের।
পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগেই তিনি জোবাইদার মোবাইল থেকে ওই কাল্পনিক কাহিনি সাজিয়ে মেসেজটি পাঠান, যা পরে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়ে।
পরিকল্পিত ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজামের দুই ভাই মোহাম্মদ ইয়াসিন (৩৩) ও রামিমকেও (৩১) এ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর এলাকা থেকে পালিয়ে যান নিজাম ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে নিজামকে আটক করে জেলখানায় পাঠায় পুলিশ। সম্প্রতি আদালতের জেরার মুখে হত্যাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করেন ওই গৃহবধূর স্বামী।
করোনাকালে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অনেক বেড়েছে। স্কটিশ সরকার ও যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে দুই শতাধিক নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
গত বছর যুক্তরাজ্যে ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। যার ফলে নারীদের হয়রানি বন্ধে নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ বছর যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ১০৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। যার অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গেই পুরুষরা জড়িত।
লকডাউনের প্রথম তিন সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে নারী নির্যাতন আর হত্যার ঘটনা দ্বিগুণ বেড়ে যাত বলে জানায় সেখানকার নারীবাদী সংগঠনগুলো। কয়েক জন ‘সাহসী’ নারী নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের বর্ণনা দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
ডেড ওমেন প্রজেক্ট নামের একটি সংগঠন জানিয়েছে, লকডাউন ঘোষণার পর প্রথম ২১ দিনে ১৪ জন নারী এবং দুই শিশুকে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, এই সময়ে জরুরি ফোন নম্বরে পারিবারিক সহিংসতা সংক্রান্ত কল ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।
ওই সময় যুক্তরাজ্যে নারী নির্যাতন ইস্যু নিয়ে ‘দ্য কমরেস পোল’ সম্প্রতি জরিপ চালায়। জরিপে বলা হয়েছে, দেশটিতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ৬৩ শতাংশ নারী এ ব্যাপারে কারও কাছে অভিযোগ করেন না।
জরিপে ২০৩১ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে যৌন নির্যাতনসহ হয়রানির শিকার হয়েছেন। ওই জরিপে অবশ্য লকডাউনের চিত্র আসেনি। আগের সময়কার কথা বলা হয়েছে। লকডাউনের সময়ও একই অবস্থা বলে মন্তব্য সংগঠনটির।
সমস্যা এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে গত বছর জুলাই মাসে রাস্তাঘাটে নারীদের হয়রানি বন্ধে নতুন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে যুক্তরাজ্যকে। এ নিয়ে তখন ব্রিটিশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেন, রাস্তাঘাটে নারীদের হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চে লন্ডনের রাস্তা থেকে সারাহ এভরার্ড নামের এক নারীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ওয়েন কোজেন্স নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা ৩৩ বছর বয়সী সারাহ এভরার্ডকে অপহরণ করেন। পরে সারাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এরপর থেকে জনসমাগম স্থলে নারীদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের পর নারীদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত আইন আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেয় ব্রিটিশ সরকার। তবে সাম্প্রতিক এই হত্যাকাণ্ড আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে দেশটির নারীদের নিরাপত্তার ইস্যুটিকে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ