সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এদিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে সোনা ব্যবসায়ী দুই সহোদরের কাছ থেকে ১১টি সোনার বার ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে এক গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার(১৮ মার্চ) সকাল নয়টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর গুদারাঘাট এলাকার খাজা সুপার মার্কেটের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন সোহেল মিয়া (৪০) ও দেওয়ান রুবেল (৩৮)। সোহেল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কর্মরত পুলিশ সদস্য বলে তিনি জানান এবং ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত দেওয়ান রুবেল নিজেকে ডিবির গাড়িচালক পরিচয় দেন। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১১টি সোনার বার ও ডিবি পুলিশের স্টিকারসংবলিত একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ ১৫-১৮১০) জব্দ করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ।
ছিনতাইয়ের চেষ্টার শিকার অরিন্দ্র জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী বিকাশ হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে আমি ও আমার ভাই পলাশ ১১টি সোনার বার নিয়ে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকার উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। তুলসিখালী সেতু পার হয়ে কেরানীগঞ্জের লাকিরচর এলাকা অতিক্রমের সময় একটি মাইক্রোবাস আমাদের পিছু নেয়। একপর্যায়ে আমরা কেরানীগঞ্জের আগানগর গুদারাঘাট এলাকায় পৌঁছালে ডিবি ও পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন আমাদের গতি রোধ করেন। তারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে থাকা ১১টি সোনার বার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ সময় আমাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সংঘবদ্ধ দলের কয়েকজন পালিয়ে গেলেও এলাকাবাসী ডিবি ও পুলিশের পোশাক পরিহিত দুজনকে আটক করেন। পরে তাদের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশে সোপর্দ করা হয়।’
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোনার বার ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে এলাকাবাসী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সদস্যকে আটক করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১১টি সোনার বারসহ দুজনকে আটক করেছে। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, আটক দুজন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত। এ ঘটনায় সোনা ব্যবসায়ী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ দুপুরে ঢাকা জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৯
আপনার মতামত জানানঃ