ভারতের কর্নাটকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে রায় দিয়েছেন রাজ্যটির হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ‘মেয়েদের হিজাব পরা কখনোই ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়’। মঙ্গলবার এ রায় দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি আর আর অবস্থীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ হিজাব পরার অধিকার চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেন, সরকারি স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীরা কী পোশাক পরে আসবে, সেই ইউনিফর্ম কোড বেঁধে দেওয়ার পূর্ণ অধিকার কর্তৃপক্ষের আছে।
এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার চেয়ে আবেদন করেন কর্নাটকের বেশ কয়েকজন মুসলিম ছাত্রী। সেই মামলাতেই আদালত এ রায় দেন।
ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ২৫ ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার যে দেয়, হিজাব পরার বিষয়টি তার আওতায় পড়ে না বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল রাজ্য সরকার। রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
হিজাব নিয়ে বিতর্কের জেরে দক্ষিণ কর্নাটকের উদুপি, শিভামোগাসহ যে জেলাগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, সেখানে স্কুল-কলেজও সব বন্ধ রাখা হয়।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে কর্নাটকে হাইস্কুল ও কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে ক্লাসে আসা নিষিদ্ধ করা, আর এ নিয়ে গেরুয়া স্কার্ফধারী হিন্দুদের সঙ্গে সংঘাতকে কেন্দ্র করে হঠাৎ গোটা ভারত উত্তাল হয়ে উঠেছিল।
তখন অনলাইনে ভাইরাল হয়েছিল একটি ভিডিও, যাতে দেখা যায়, কর্নাটক রাজ্যের এক কলেজে কালো বোরকা আর হিজাব পরা এক মুসলিম ছাত্রীকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে স্লোগান দিয়ে হয়রানি করছে গেরুয়া কাপড়ধারী একদল হিন্দু তরুণ, আর ছাত্রীটি তাদের পাল্টা জবাব দিচ্ছেন ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে।
যেভাবে শুরু এই হিজাব-বিতর্ক
ঘটনার শুরু হয় কর্নাটক রাজ্যের কুন্ডাপুর সরকারি পিইউ কলেজ থেকে। এই কলেজটির ছয়জন মুসলিম ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে তাদেরকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্লাস করতে দেয়া হচ্ছে না, কারণ তারা ছাত্রীদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ছাড়াও মাথায় হিজাব পরবেন বলে দাবি জানাচ্ছিলেন।
এই ছয় ছাত্রীর একজন আলমাস এ এইচ বিবিসিকে বলেন, তাদের কয়েকজন পুরুষ শিক্ষক আছেন, তাই তাদের সামনে মাথার চুল-ঢাকা পোশাাক পরা দরকার এবং এ কারণেই তারা হিজাব পরছেন।
সরকারি কলেজটির কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, তারা শুধু ক্লাসে হিজাব না পরতে বলেছেন, ক্লাসের বাইরে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের হিজাব পরতে কোন বাধা নেই।
উদুপি জেলার এ কলেজের হিজাব-পরা একদল ছাত্রীকে ঢুকতে না দিয়ে গেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে এমন এক ঘটনার ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়।
এরপর কর্নাটক রাজ্যের অন্যান্য হাইস্কুল ও কলেজেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কলেজে হিন্দু ছাত্ররা গেরুয়া শাল বা স্কার্ফ পরে ক্লাসে আসতে শুরু করে। হিন্দু ছাত্র ও ছাত্রীরা তাদেরই সহপাঠীদের হিজাব পরার বিরুদ্ধে মিছিল বের করে। কর্নাটক রাজ্যের কয়েকটি শহর থেকে বেশ কিছু সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।
তবে এর সূত্রপাত বেশ আগে। ২০১৮ সালে প্রতিবেশী কেরালা রাজ্যে দুজন মুসলিম ছাত্রী হিজাব ও লম্বা হাতাওয়ালা জামা পরার আবেদন করলে তাদের স্কুল তা প্রত্যাখ্যান করে।
এ ব্যাপারে একটি আদালতে মামলা হলে বিচারপতি এ. মুহাম্মদ মুশতাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকারের পক্ষে রায় দেন। কর্নাটকে এর আগে অন্য আরেক ঘটনায় একটি সরকারি কলেজ তাদের ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব এবং হিন্দু প্রতীক গেরুয়া স্কার্ফ; দুটিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ