মহাবিশ্বের ইতিহাস প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস, সেখানে আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুরো বিপ্লবটুকু হয়েছে মোটামুটি গত দু’শো বছরে। আমরা অনেককিছুই জানি না। অনেক প্রশ্নই অজানা।
এই যেমন, মানুষ কোথা থেকে এসেছে আর কেনই বা টিকে আছে? এ প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন জবাব পাওয়া যাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে। তবে তার জবাব যদি বিশ্বখ্যাত হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী দেন তাহলে তা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।
এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার। হাভার্ড তাত্ত্বিক পদার্থবিদ লিসা র্যানডাল সম্প্রতি মানুষের টিকে থাকার বিষয়ে একটি বই লিখেছেন।
‘ডার্ক ম্যাটার অ্যান্ড দ্য ডায়নোসরস’ নামে এ বইতে তিনি তার যুগান্তকারী বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। বইতে তিনি জানিয়েছেন তার দৃষ্টিতে ডায়নোসর এবং মানুষ টিকে থাকার কারণগুলো। এ ছাড়া তিনি আরো কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাখ্যা করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্যটি তিনি তার বইতে তুলে ধরেছেন তা হলো ‘ডার্ক ম্যাটার। ’ তার মতে ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে জড়িত মানুষের উত্থানের বিষয়টি। ডার্ক ম্যাটার রহস্যময় ও অদৃশ্য বিষয় যা মহাবিশ্বের ৮৫ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে।
এক প্রাণীর বিলোপ অন্য প্রাণীর উত্থান তৈরি করে বলে মনে করেন গবেষকরা। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত হানে প্রায় ৯ মাইল লম্বা একটি মহাজাগতিক বস্তু। আর এর প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এ প্রাণীর তালিকায় ছিল মহাশক্তিশালী ডায়নোসরও। এ সময় ছোট দুপেয়ে দুর্বল প্রাণীগুলো বেঁচে যায়। পরবর্তীতে এদেরই মস্তিষ্ক উন্নত হয় এবং বিশ্ব শাসন করতে শুরু করে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন মানুষ এক্ষেত্রে এগিয়ে গেল? অন্য কোনো প্রাণী কেন নয়? এ প্রসঙ্গে ভাগ্য বা যোগ্যতা এসব বিষয়কে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন হাভার্ড তাত্ত্বিক পদার্থবিদ লিসা র্যানডাল। তিনি এজন্য ডার্ক ম্যাটারকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন।
এর আগে ডার্ক ম্যাটারকে এত গুরুত্ব দিয়ে কেউ দেখেনি। আর তার এ বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি নানা যুক্তি দিয়েছেন।
সাধারণভাবে ধারণা করা হয় ডার্ক ম্যাটার কোনো গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে থাকে বড় বুদবুদের আকারে। কিন্তু তাত্ত্বিক পদার্থবিদ লিসা র্যানডাল মনে করেন এটি শুধু গ্যালাক্সিতেই নয় প্রতিটি তারা ও গ্রহেও ডার্ক ম্যাটার রয়েছে। সূর্যের মধ্যে ডার্ক ডিস্ক আকারে এটি রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
ডার্ক ম্যাটার কী সত্যিই আছে?
গত একশত বছরের চারভাগের প্রায় তিনভাগ সময় ধরে ডার্ক ম্যাটারকে শনাক্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে, এবং এখনো হচ্ছে।
এখন, কণা পদার্থবিজ্ঞানীরা একটা ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত: ডার্ক ম্যাটারের মধ্যে এখনো অনাবিষ্কৃত এমন ধরনের কণারা আছে, যারা সাধারণ পদার্থের সাথে মহাকর্ষের মাধ্যমে মিথষ্ক্রিয়া করে। এছাড়া আর কোনোভাবে এরা পদার্থ কিংবা আলোর সাথে হয় একেবারেই মিথষ্ক্রিয়া করে না, আর নাহয় করলেও খুবই দুর্বলভাবে করে।
মহাবিশ্ব জন্মের অর্ধ মিলিয়ন বা পাঁচ লাখ বছর পরের সময়টার কথা একটুখানি ভেবে দেখা যাক। ১৪ বিলিয়ন বছরের হিসেবে বলতে গেলে, একবার চোখের পলক ফেলতে যে সময় লাগে, মহাবিশ্ব কেবল সেটুকু সময় পেরিয়ে এসেছে।
সে সময়ের মহাবিশ্বে যে পদার্থরা ছিল, তারা কেবল বুদবুদের মতো জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। সময়ের হাত ধরে এই বুদবুদগুলো একসময় ছায়াপথ, ক্লাস্টার এবং সুপারক্লাস্টারে পরিণত হবে। কিন্তু পরবর্তী অর্ধ মিলিয়ন বছরের মধ্যে মহাবিশ্বের আকার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে, এবং প্রতি মুহুর্তে সেটি বাড়তেই থাকবে।
এর মানে, সে সময়ের মহাবিশ্বে দুটি শক্তির মাঝে এক বিচিত্র যুদ্ধ চলছে: একদিকে মহাকর্ষ সবকিছুকে টেনে জমাট বাঁধিয়ে ফেলতে চাচ্ছে, অন্যদিকে বিস্ফোরণ পরবর্তী শক্তির টানে প্রতিমুহুর্তে বেড়ে চলা মহাবিশ্ব চাইছে সবকিছু আরো দূরে সরে যাক, আরো দূরে।
একটুখানি গাণিতিক হিসেব নিকেশ কষলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, সাধারণ পদার্থের ভর থেকে সৃষ্ট মহাকর্ষ একা এই যুদ্ধ কোনোভাবেই জিততে পারতো না। জেতার জন্য সাহায্য চাই, ডার্ক ম্যাটারের সাহায্য। এবং সে সময় ডার্ক ম্যাটারের সাহায্য না পেলে আমরা এমন এক মহাবিশ্ব পেতাম, যে মহাবিশ্বে কোনো অবকাঠামো বা স্ট্রাকচারের অস্তিত্ব থাকতো না।
আসলে আমাদেরই তো কোনো অস্তিত্ব থাকত না! কাজেই, সে মহাবিশ্বে থাকত না কোনো ক্লাস্টার কিংবা গ্যালাক্সি, গ্রহ-নক্ষত্র কিংবা মানুষ- কিছুই থাকতো না।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ