
প্রাণঘাতী অত্যাধুনিক জৈব অস্ত্র নির্মাণে ইউক্রেনকে ২০০৫ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র অর্থ সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে বলে অভিযাগ করেছে রাশিয়া। শুক্রবার (১১ মার্চ) রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুৎনিক।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দু’টি নথি প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাউন্টার প্রোলিফারেশন সেন্টার থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্পুৎনিক।
যদিও কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগন এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তর দ্ব্যর্থহীনভাবে রাশিয়ার এ দাবি অস্বীকার করেছে। তারা বলেছেন, এ দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই।
মার্কিনিদের দাবি, ‘এটি সম্পূর্ণ বাজে কথা। ইউক্রেনে তাদের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিতেই মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে রাশিয়া।’
যা ঘটেছিল
এদিকে রাশিয়ার এই নথি দুটির মধ্যে একটি ২০০৫ সালের। সেখানে বলা হয়েছে, তৎকালীন মার্কিন সিনেটার রিচার্ড লুগার ইউক্রেনের ওডেসা শহরে একটি জৈব গবেষণাগার প্রস্তুত এবং তাতে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তার অন্যতম সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন সিনেটর ও পরবর্তীতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা।
স্পুৎনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের তৎকালীন সরকারকে লেভেল ৩ সেফটি ল্যাব নির্মানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন লুগার ও ওবামা। এই ক্যাটাগরির জৈব গবেষণাগারগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জীবাণু নিয়ে গবেষণা করা হয়। মূলত উচ্চ ঝুঁকির বিপজ্জনক জীবাণু গবেষণার জন্যই তৈরি করা হয় লেভেল ৩ সেফটি ল্যাব।
লুগার ও ওবারার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নান-লুগার আইনের আওতায় ইউক্রেনের ওডেসা শহরে এই ধরনের একটি গবেষণাগার নির্মাণে দেশটির তৎকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।
নন লুগার আইনের মূল বক্তব্য হলো, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ধ্বংস করবে এবং আধুনিক গবেষণাগার নির্মাণসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নির্দেশনায় নিজের অস্ত্র প্রস্তুত করবে।
সেই অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ওডেসা শহরে শুরু হয় ইন্টেরিয়াম সেন্ট্রাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি (আইসিআরএল) নামের জৈব গবেষণাগার নির্মাণের কাজ। ইউক্রেনে যখন এই গবেষণাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয়, সেসময় দেশটির তৎকালীন সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন লুগার।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তার সেই অভিনন্দন বার্তা বিষয়ক নথিও প্রকাশ করেছে স্পুৎনিক।
অত্যাধুনিক জৈব অস্ত্র প্রস্তুত ও এ বিষয়ক গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে বিনিয়োগ করছে— এমন অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে করে আসছে মস্কো।
সম্প্রতি দেশটিতে রুশ অভিযান শুরু হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে এসব গবেষণাগার ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেনের সরকার এবং তাতে আরও দৃঢ় হয়েছে মস্কোর সন্দেহ।
ওয়াশিংটন এবং কিয়েভ অবশ্য বরাবরই মস্কোর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে গত ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ইউক্রেনে গবেষণাগার নির্মাণে ওয়াশিংটনের অর্থায়নের ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন। তবে সেসব গবেষণাগারে জৈব অস্ত্র নিয়ে কোনো গবেষণা হতো না বলে দাবি করেছেন তিনি।
জৈব অস্ত্র কী
সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে বিষপ্রয়োগ করেছে, শুধু ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারের জন্য নয়-কখনো কখনো বিরাট সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধেও। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক জীবাণু (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া) শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছে, যা বর্তমানে জৈবিক অস্ত্র নামে পরিচিত।
জৈব অস্ত্র ব্যবহারের প্রথম নথিভুক্ত উদাহরণ পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ অব্দে, হিটাইটিসরা শত্রুদের দুর্বল করতে রোগাক্রান্ত ভেড়া শত্রুশিবিরে পাঠিয়েছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দে বর্তমান ইউক্রেনে বাসকারী সিথিয়ান নামক এক যাযাবর উপজাতি তীরের অগ্রভাগে ব্যবহৃত বিষ উৎপাদন করার জন্য একটি অনন্য কৌশল ব্যবহার করত।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ