পাকিস্তানে আছড়ে পড়েছে ভারতের মিসাইল। ঘটনার সত্যতা নিজেই স্বীকার করেছে নয়াদিল্লি। তবে তাতে সন্তুষ্ট নয় পাকিস্তান। প্রতিবেশী দেশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় পাকিস্তান জানিয়েছে, কেবল ভারতের স্বীকারোক্তিই যথেষ্ট নয়, সেইসাথে দেশটিকে কিছু প্রশ্নের জবাবও দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময় ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’র কারণে মিসাইল নিক্ষেপের এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারতের কর্তৃপক্ষ। দিল্লি এই ঘটনায় ‘গভীর অনুশোচনা’ প্রকাশ করেছে এবং দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
কী বলছে ভারত?
ভারতের মিসাইল পাকিস্তানের মাটিতে আছড়ে পড়া প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়। বিবৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটা নিছকই দুর্ঘটনা। গত ৯ মার্চ নিয়ম মেনে রক্ষণাবেক্ষণের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মিসাইল ফায়ার হয়ে যায়।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৯ই মার্চ ২০২২ তারিখে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাবশত একটি মিসাইল উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটে। ভারত সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের আদেশ দিয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এটা দেখা গিয়েছে যে, এই মিসাইলটি পাকিস্তানের এলাকায় পড়লেও এটা স্বস্তির যে ওখানে এই দুর্ঘটনার ফলে কোনও মানুষের প্রাণ যায়নি।
কী বলছে পাকিস্তান?
এই ধরণের অবহেলার অপ্রীতিকর পরিণতির বিষয়ে সতর্ক থাকা, এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে দিল্লিকে সতর্ক করেছে ইসলামাবাদ। তারা বলছে মিসাইলটি হরিয়ানা রাজ্যের সিরসা থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনী বলছে মিসাইলটি পতনের আগে পাকিস্তানের আকাশসীমায় শব্দের গতির তিনগুণ গতিতে ১২ হাজার মিটার (৪০ হাজার ফিট) উচ্চতা দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার ডিরেক্টর জেনারেল মেজর বাবর ইফতেখার এই বিষয়ের বিস্তারিত গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরার সময় বলেন, ৯ই মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৪৩ মিনিটে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স অপারেশন সেন্টার ভারতীয় আকাশসীমার ভেতরে উচ্চ গতিসম্পন্ন একটি বস্তুর উড্ডয়ন পর্যবেক্ষণ করে।
প্রাথমিক উড্ডয়নের পর উড়ন্ত বস্তু হঠাৎ পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং ৬টা ৫০ মিনিটে (পাকিস্তান সময়) মিয়া চান্নুর কাছে পতিত হয়।
কোন ধরণের মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তা নিশ্চিত করে না বললেও ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি সুপারসনিক মিসাইল বা শব্দের চাইতে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম ‘ব্রাহমোস’।
যে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানান, ঘটনার গুরুতর প্রকৃতি নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং পারমাণবিক পরিবেশে দুর্ঘটনাজনিত বা অননুমোদিত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগত সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দেয়া সরল ব্যাখ্যা দিয়ে এ ধরনের গুরুতর বিষয়ের সমাধান করা যাবে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যার মধ্যে রয়েছে:
• ভারতকে অবশ্যই দুর্ঘটনাজনিত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং এই ঘটনার বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা এবং পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে হবে।
• ভারতকে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে যে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছিল তার ধরণ এবং স্পেসিফিকেশন স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
• ভারতকে দুর্ঘটনাবশত উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট পাথ/ ট্র্যাজেক্টোরিও ব্যাখ্যা করতে হবে এবং কিভাবে এটি টার্ন নিয়েছিল এবং পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল?
• মিসাইলটি কি স্ব-ধ্বংস প্রক্রিয়ায় সজ্জিত ছিল? কেন সেটা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিল?
• ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যেও উৎক্ষেপণের জন্য প্রাথমিকভাবে রাখা হয়?
• ভারত কেন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে পাকিস্তানকে অবিলম্বে জানাতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং পাকিস্তান ঘটনাটি ঘোষণা করার পর এবং ব্যাখ্যা চাওয়া পর্যন্ত এটি স্বীকার করেনি?
• অযোগ্যতার ব্যাপকতাসহ, ভারতকে ব্যাখ্যা করতে হবে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি সত্যিই তার সশস্ত্র বাহিনী বা অন্য কোন দুর্বৃত্ত দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল?
আপনার মতামত জানানঃ