ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র ত্যাগ করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। আর বলেন, যেকোনো রক্তপাতের জন্য দায়ী থাকবে ইউক্রেন সরকার।
এই ঘোষণার পরপরই ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে কিয়েভ বিমানবন্দরে গুলির শব্দ পাওয়ার খবর জানিয়েছে ইন্টারফ্যাক্সও।
এদিকে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা গেরাসচেঙ্কো জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়ে রুশ হামলা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিমানঘাঁটি ও সামরিক সদর দপ্তরেও গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
বিবিসি’র সংবাদদাতা পল অ্যাডামস ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করছেন এবং তিনি জানিয়েছেন, কিছুক্ষণ আগে সেখানে তিনি পাঁচ থেকে ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এছাড়া কিয়েভ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র একটি অনুষ্ঠানেও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে।
এদিকে বিবিসি আরও জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর আগে বিবিসির সংবাদদাতারা নিশ্চিত করেছিলেন যে, তারা রাজধানী কিয়েভের পাশাপাশি দোনেতস্ক অঞ্চলের ক্রামাতোরস্ক এলাকায়ও বিকট শব্দ শুনেছেন।
এছাড়া উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভে, দক্ষিণাঞ্চলীয় ওদেসায় এবং পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক অঞ্চলের অবলাস্ট এলাকায়ও বিস্ফোরণ হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যে উঠে আসছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়ে রুশ হামলা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিমানঘাঁটি ও সামরিক সদর দপ্তরেও গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুবেলা এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পুরোদমে আক্রমণ শুরু করেছেন। শান্তিকামী ইউক্রেনের শহরগুলো এখন হামলার শিকার। এটি আগ্রাসনের যুদ্ধ। ইউক্রেন অবশ্যই নিজেকে রক্ষা করবে। বিশ্ব পারে পুতিনকে থামাতে এবং এখনই সময় সেই পদক্ষেপ নেয়ার।’
এর আগে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা গেরাসচেঙ্কো জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়ে রুশ হামলা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিমানঘাঁটি ও সামরিক সদর দপ্তরেও গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
রাশিয়াতেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। নিউজ এজেন্সি রয়টার্স একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে লিখেছে- ইউক্রেন সীমান্ত থেকে নিকটবর্তী রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলগোরোদ প্রদেশ এ বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।
তবে সেটা কী বিস্ফোরণের শব্দ সেটা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য সিএনএন রিপোর্টার ফ্রেডরিক প্লেইটজেন বলছেন, রকেট ও আর্টিলারির আওয়াজ পেয়েছেন। এছাড়া কিছু বিমান উড়ে যাওয়ার শব্দ তিনি পেয়েছেন। বিমানগুলো ইউক্রেনের দিকে উড়ে গেছে বলে ধারণা তার।
এর আগে নাগরিকদের রাশিয়া ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইউক্রেন। রাশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ ইউক্রেনের নাগরিক বসবাস করছে। এমনকি অনেকেরই পরিবারের সদস্যরা এই দুই দেশেই অবস্থান করছেন।
এর পাশাপাশি জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইউক্রেন। অপরদিকে রাশিয়া বলছে, তারা খুব শিগগির ইউক্রেনে নিযুক্ত তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নেবে।এর আগে দেশটির পার্লামেন্টে বিদেশে নিজ দেশের সেনা মোতায়েনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুমোদন দেন আইনপ্রণেতারা। মস্কো বলছে, ইউক্রেনে অবস্থানরত তাদের দূতাবাস কর্মীদের সুরক্ষা দিতেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা।
রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা শুরুর পর বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ তাদের দূতাবাস কিয়েভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে অবস্থিত লিয়েভ সীমান্তে সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, মস্কোর নেতৃত্বের পক্ষ থেকে নিজেদের পদক্ষেপ আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ অন্য দেশের ভূখণ্ডে। আর তাদের এমন পদক্ষেপের কারণেই ইউরোপ মহাদেশে একটি বড় যুদ্ধের সূচনা হতে পারে।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুতিন এর কোনো জবাব দেননি। ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এর আগে সেখানে এক লাখের মতো সেনা ছিল।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, ইউক্রেনে রুশপন্থি বিদ্রোহীরা কিয়েভের বিরুদ্ধে মস্কোর কাছে সহায়তা চেয়েছে। সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ানোর পাশাপাশি কয়েক হাজার সামরিক যানও মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে পুতিন আরও বলেছেন, ইউক্রেন দখলের কোনো চিন্তা রাশিয়ার নেই। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এ ভাষণে তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের মানুষ মুক্তভাবে বেছে নিতে পারবেন তাদের দেশ কে পরিচালনা করবে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সার্জেই কিসলিতসিয়া বলেছেন, জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত নিশ্চিত করেছেন তার প্রেসিডেন্ট আমার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন সংকটের কারণে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনায় গত তিনদিনে এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বৈঠকে বসবে সংস্থাটি। দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। বেশ কিছু কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া সেনা মোতায়েন বাড়ানোয় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১৪০
আপনার মতামত জানানঃ