বাড়িটি কোথায়, তা জানুন বা না জানুন, ছবি দেখলে অনেকেই চিনে ফেলার কথা। অথবা মনে হতে পারে কোথায় যেন দেখেছি। মধুমালতি, ঘেটুপুত্র কমলা, নাইওরীসহ অসংখ্য ছবি চিত্রায়িত হয়েছে বাড়িটিতে। সারা দেশের মানুষই এর গঠন ও কারুকার্যে মুগ্ধ। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত হরিপুর জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংসের মুখে। ১৮শ’ শতাব্দীতে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী কর্তৃক নির্মিত এ বাড়িটি ৫৫টি পরিবার অবৈধভাবে দখল করে আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিলেও তার কোনো সুফল নেই।
বাড়িটির ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী ও কারুকাজ রুচিসম্মত যে কোনো মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুই গম্বুজের তিনতলা সুবিশাল বাড়িটি দেখতে আসেন হরিপুরে। ভরাবর্ষায় বাড়িটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় বহুগুণ। ১৭৫ বছর পূর্বে প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটি এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই এই মূল্যবান ঐতিহ্যখণ্ডটি সংরক্ষণে। দায়িত্বরতদের অবহেলায় ধ্বংসের মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই মহাকীর্তি।
জানা যায়, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিলেও তা শুধু কাগজে কলমে। বাস্তবে বাড়িটি অবৈধ বসবাসকারীদের দখলে। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িটির বিভিন্ন স্থাপনা ও কারুকার্য। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির কোথাও কোথাও খসে পড়ছে ইটের গাঁথুনি, পলেস্তারা। রান্নাবান্নার ধোয়ায় কালো হয়ে গেছে লাল দেয়ালগুলো। বাড়িটির অনেক স্থানে ক্ষয় ধরেছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। মানুষের মলমূত্র আর হাঁস-মুরগির বিষ্ঠায় চারদিকে দুর্গন্ধ।
দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রাজবাড়ি। অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তিও উচ্ছেদের পর সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়দের দাবি, পরিকল্পিতভাবে সংস্কার করা, পরিচালনার জন্য লোকবল নিয়োগ করা, সরকারিভাবে রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা এবং ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সব রকমের সুবিধাসহ যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হরিপুর জমিদার বাড়িটি হতে পারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্র্যান্ডিং। কিন্তু এখানে অবৈধ বসবাসকারীদের কারণে বাড়িটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সংস্কারের কাজটি ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে সংস্কারের মাধ্যমে হরিপুর জমিদার বাড়িকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী বলেন, এখানে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ পরিবারের জন্য ঘর তৈরি হয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এখানে বসবাসকারী সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। হরিপুর জমিদার বাড়ি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যা করা দরকার তা সবকিছু করা হবে।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ