ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ভেঙে ফেলার পরিবর্তে এর নকশা অটুট রেখে সংস্কার কিংবা এলাকা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তবে একাংশ শিক্ষার্থীর দাবি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে টিএসসিকে সংরক্ষণ করতে হবে। উন্নয়নের জন্য কাজ করা যাবে, তবে এর নকশায় কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন ঘটানো যাবে না।
টিএসসির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলী আকবর জানিয়েছেন, সংস্কারের পর টিএসসি হবে অত্যাধুনিক। সেখানে ব্যায়ামাগার, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য আধুনিক কক্ষ, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষ, ক্যাফেটারিয়া, শিক্ষক মিলনায়তন, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা বিশিষ্ট স্থান, অতিথি কক্ষসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। আর এগুলোর সবার মতামতের ভিত্তিতে করা হবে।
জানা যায়, টিএসসির সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনের স্মৃতি জড়িত। ১৯৬০ এর দশকে গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিযাডেস বাংলাদেশের গ্রামীণ বসতির আদলে বর্তমান টিএসসির নকশা করেন। ১৯৬৪ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। সম্প্রতি টিএসসি ভেঙে নতুন আঙ্গিকে নির্মাণের কথা জানায় সরকার। এরপর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নকশার কাজ শুরু করে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিএসসি না ভেঙে এর ঐতিহাসিক নকশা বজায় রেখে সংস্কারের কথা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘টিএসসির মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙে ফেলা কাম্য নয়। টিএসসি বর্ধিত করার প্রয়োজন হলে পরমাণু কমিশনকে দেওয়া জায়গায় নতুন ভবন করা যেতে পারে।’ একই সুরে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল ভেঙে আধুনিক করা কেউই সমর্থন করবেন না। ঠিক আমরাও টিএসসি ভেঙে ভিন্ন আঙ্গিকে করা সমর্থন করব না।’
টিএসসির আধুনিকায়ন জরুরি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘টিএসসি নির্মাণের সময় শিক্ষার্থী সাড়ে তিন হাজার এবং শিক্ষক ছিলেন দুই শতাধিক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষক ও ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রয়োজনেই টিএসসির সংস্কার জরুরি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে এটি করব। ইতিমধ্যে মতামত চেয়ে বিভাগগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ানুল হক বলেন, ‘সংস্কারের নামে টিএসসির মতো প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংস করা ঠিক হবে না। আধুনিকতার জন্যই যদি ভাঙা হয়, তাহলে উপাচার্যের বাসভবনসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ভাঙা দরকার। আমরা সবার আগে আবাসিক হলগুলোর আধুনিকায়ন চাই।’ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আজম সিদ্দিকী বলেন, ‘টিএসসি ভবন অনেক পুরাতন, কক্ষেরও সংকট রয়েছে। সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে সবার সাধুবাদ জানানো উচিত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই টিএসসির ঐতিহ্য অটুট রেখে এটি সংস্কার করা হোক।’ তবে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আমরা আগে আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন চাই। এরপর টিএসসির উন্নয়নে পরমাণু কমিশনকে দেওয়া জমিতে নতুন ভবন করা হোক।’
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘টিএসসি ভাঙার বিষয়ে মতামত চাওয়াই অগ্রহণযোগ্য। টিএসসির বুকের ওপর দিয়ে মেট্রো রেল করা হচ্ছে। এখন আধুনিকায়নের নামে ভাঙার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা কখনো টিএসসি ভাঙতে দেব না।’
এসডাব্লিউ/ডিআর/আরা/১১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ