রেকর্ড ভাঙল আমেরিকার জাতীয় ঋণের পরিমাণ। মঙ্গলবার বাইডেন সরকারের রাজস্ব বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় ঋণ এখন ৩০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। দেশটির রাজস্ব বিভাগের তথ্য জানাচ্ছে, সরকারি ঋণের পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঋণ বেড়েছে প্রায় সাত লক্ষ কোটি টাকা।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকার ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই আকাশছোঁয়া ঋণের একাধিক কারণ দর্শানো হয়েছে। প্রথমেই রয়েছে করোনাভাইরাস। গত দু’বছর ধরে কোভিড অতিমারির সঙ্গে লড়াই করছে একাধিক দেশ।
করোনা আবহে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপ বেড়েছে। ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে প্রশাসনের। তা ছাড়া, এই অতিমারি পরিস্থিতিতে আমেরিকার বিরাট ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে।
সিএনএন সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০১৯ সালের শেষের দিকে জাপান ও চিনের বিনিয়োগকারীদের প্রায় সাত লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েও আবার ফিরিয়ে দিয়েছে আমেরিকা।
বিশ্বের প্রবল শক্তিধর রাষ্ট্রের রেকর্ড দেনার আরেকটি কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ২০০৮ সাল থেকেই ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল। তার পর ঋণের বোঝার ওজন বাড়িয়েছে করোনা অতিমারি।
তথ্য বলছে, ২০০৭ সালে মন্দা শুরুর সময় আমেরিকার জাতীয় ঋণ ছিল ন’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। সেটা বাড়তে বাড়তে ২০ কোটি লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। এই ঋণের বোঝা বেড়েছে করোনা কালে।
আর জো বাইডেনের আমলে সব মিলিয়ে দেনা বেড়ে হয়েছে ৩০ লক্ষ কোটির টাকা বেশি। এই পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শীঘ্রই স্বল্পমেয়াদী সুদের হার আর শূন্য থাকবে না।
সে ক্ষেত্রে গত চার দশকে এই পদক্ষেপ প্রথম হবে বলে জানাচ্ছে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ -এর একটি রিপোর্ট। বছর দুই আগে নিউইয়র্ক নিয়ে জানা গিয়েছিল এমনই এক তথ্য। স্থানীয় ঋণ পরামর্শদাতা ও আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, নিউইয়র্ক নগরী আর্থিকভাবে আমেরিকার সবচেয়ে দুর্বল নগরী হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে নিউইয়র্কে ক্রেডিট কার্ড বিল অপরিশোধের হার ও ব্যক্তিগত মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল আমেরিকার মধ্যে সর্বোচ্চ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে নিউইয়র্কে পারিবারিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগের চেয়ে এ পরিমাণ ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
রেকর্ড অনুযায়ী এ পরিমাণ এমনকি ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়কালকেও ছাড়িয়ে গেছে। ওই সময়ের তুলনায় এ ঋণের পরিমাণ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেশি। ব্যক্তিগতভাবে দেউলিয়া ও অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি বর্তমানে এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, নিউইয়র্কের অধিবাসীদের একটি বড় অংশই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে মাত্র এক কদম দূরে অবস্থান করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, নিউইয়র্কবাসীর ব্যক্তিগত ভান্ডারও এখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের তথ্যমতে, ৪০ শতাংশ আমেরিকান জরুরি পরিস্থিতিতে ৪০০ ডলার ব্যয় নিয়েও তাদের চিন্তায় পড়তে হয়। নিউইয়র্কে এমন দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেশি হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
অলাভজনক সংস্থা গ্রিনপাথের ঋণ-বিষয়ক পরামর্শদাতা ক্যালি ফিগারুয়া নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, অবস্থা খুবই খারাপ। দেশের অন্য অংশের মতোই নিউইয়র্কের বাসিন্দারাও অনেকটা পেটে-ভাতে বেঁচে থাকে। সব সময় ঋণ পরিশোধের দুর্ভাবনা।
নিউইয়র্কের অবস্থা বরং আরও বাজে। কারণ এখানে জীবনযাত্রার ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। নিম্ন আয় থেকে শুরু করে উচ্চ আয়ের ভোক্তাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ গড়ে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের বেশি।
গ্রিনপাথের তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে নিউইয়র্ক শহরে ক্রেডিট কার্ড ঋণের সমস্যা বিশেষভাবে বেড়েছে। গত কয়েক বছরে গ্রিনপাথে ঋণের সমস্যা নিয়ে আসা গ্রাহকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে ঋণের সমস্যা নিয়ে আসা গ্রাহকের হার ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে। এই আর্থিক সংকটে আবাসন ও মর্টগেজ-সংক্রান্ত সমস্যাগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
২০১৮ সালে স্ট্রিটইজি প্রকাশিত সূচক অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটির বাড়ি ভাড়া মোট ৩১ শতাংশ বেড়েছে। আশপাশের কিছু কিছু এলাকায় ৪৫ শতাংশেরও বেশি ভাড়া বেড়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ কারণেই অনেক নগরীর ভোক্তারা ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য ঋণে ডুবে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশই জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি হারে মজুরি পায়। বেকারত্বের হারও তুলনামূলক কম। আর এ কারণেই শহরটির বাসিন্দাদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ গ্রহণের হার বেশি।
নিউইয়র্ক ফেডের গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে ম্যানহাটনবাসীর ক্রেডিট কার্ড ব্যালেন্সের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৪০০ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে পুরো দেশের ক্রেডিট কার্ডের গড় ব্যালেন্স রয়েছে ৫ হাজার ৪০০ ডলারে। ব্রঙ্কসের গ্রাহকদের জন্য ৯০ দিন বিলম্বে ক্রেডিট কার্ড পরিশোধের হার এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশে। নগরীব্যাপী এ হার ১০ শতাংশ। আর সারা দেশে এ হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশে।
উল্লেখ্য, ১৪৯ বছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি হয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থনীতির আকার এখন ২১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে তা আরেকটু বেশি— ২২ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ সঞ্চিত আছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থানে, পরিমাণ ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ