ইসরায়েলি সংস্থার তৈরি বিতর্কিত পেগাসাস স্পাইওয়্যার ভারতকে বিক্রি করা হয়েছিল! আর সেই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদির ইসরায়েল সফরেই সেই ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছিল! জনপ্রিয় মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এই তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের কেনা নিরাপত্তাসামগ্রীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সামরিক গ্র্রেডের স্পাইওয়্যার ও একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
গত বছরের জুলাইয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম পেগাসাসের ব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। স্পাইওয়্যারটি বানিয়েছে ইসরায়েলভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ।
স্পাইওয়্যার বিক্রি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি শুধু ‘পরীক্ষিত দেশের’ কাছেই বেচা যাবে।
ভারতে দ্য ওয়ারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬১ ভারতীয়র ওপর নজরদারি চালানো হয় পেগাসাসের মাধ্যমে। ওই তালিকায় আইনজীবী, অধিকারকর্মী, রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ অনেকেই রয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েল অনেক দেশের কাছেই স্পাইওয়্যারটি বিক্রি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত হাতে পেয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জাতীয়তাবাদী নেতারা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি সরকার স্পাইওয়্যারের ক্ষতিকর ব্যবহার এড়াতে চাইলেও পেগাসাস বিক্রি হয়েছে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি কিংবা ভারতের মতো দেশে, যাদের মানবাধিকারের রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে যে কোনও অ্যানড্রয়েড স্মার্ট ফোন বা আইফোন থেকে গোপন তথ্য সহজেই হাতিয়ে নেওয়া যায়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একের পর এক বিক্রয় চুক্তির লাইসেন্স মঞ্জুর করে গিয়েছে। আর তার মাধ্যমেই পোল্যান্ড, হাঙ্গারি ও ভারত-সহ একাধিক দেশের চরম ডানপন্থী নেতাদের কাছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়েছে’।
ভারতে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের জন্য প্যানেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অভিযোগ, ভারতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের ফোনই এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত একজন বিচারপতি এবং সাংবাদিক রয়েছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তদন্তের মাধ্যমে ফোন হ্যাক হওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণ জোগাড় করেছে বলেও নানা মহলে দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে কেউ যাতে দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপর লাগাতার নজরদারি করেছে ইসরায়েলের সরকার। কিন্তু, তারপরও পোল্যান্ড, হাঙ্গারি এবং ভারতকে এই স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়’।
এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। এছাড়াও অন্য একটি প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট মার্কিন পত্রিকার তরফে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একের পর এক বিক্রয় চুক্তির লাইসেন্স মঞ্জুর করে গিয়েছে। আর তার মাধ্যমেই পোল্যান্ড, হাঙ্গারি ও ভারত-সহ একাধিক দেশের চরম ডানপন্থী নেতাদের কাছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়েছে’। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের এই দাবি নিয়ে এখনও পর্যন্ত মোদি সরকারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘হিন্দু জাতীয়বাদে ভর করেই ভারতের মসনদে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তিনি ইসরায়েল সফরে যান তিনি। তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি ইসরায়েলে সরকারি সফর করেন। দশকের পর দশক ধরে ভারতের সরকার ‘ফিলিস্তিনীয়দের স্বার্থে’ নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছিল। যার জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল হিমশীতল’।
ওই একই প্রতিবেদনে মোদির ইসরায়েল সফর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এই প্রেক্ষাপটে মোদির সফর অবশ্য উল্লেখযোগ্যভাবে ‘আন্তরিক’ ছিল। যেভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে খালি পায়ে স্থানীয় সৈকতে হেঁটেছিলেন মোদি, তা অত্যন্ত সচেতনভাবে আয়োজন করা হয়েছিল। এই সৌহার্দ্যের পিছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। দুই দেশই অত্যাধুনিক হাতিয়ার এবং ব্যবস্থাপনার আদানপ্রদান ও বিক্রিতে সহমত হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছিল। পেগাসাস স্পাইওয়্যার ও ক্ষেপণাস্ত্র এই চুক্তির প্রধান পণ্য ছিল’! অর্থাৎ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি সফরে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনার বিষয়টি পাকা হয়েছিল!
এদিকে মোদি সরকার ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার কিনেছে-এ মর্মে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতারা শনিবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
রাহুল গান্ধী আজ এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, আমাদের প্রধান গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ এবং জনসাধারণের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য মোদি সরকার পেগাসাস কিনেছে। সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেতা, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিচার বিভাগের লোকের ফোনে আড়ি পাতার জন্য টার্গেট করা হয়েছে। এটা দেশদ্রোহিতা। মোদি সরকার দেশদ্রোহিতা করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৩
আপনার মতামত জানানঃ