১৯৭১ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার বিচার চাইলো ভারত। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ২০২২ সালের প্রথম উন্মুক্ত বিতর্কে একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যা ও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় জড়িত ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকদের’ বিচার দাবি করেন সংস্থাটিতে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমসের।
গতকাল (২৫ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। এবারের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হলো ‘সশস্ত্র সংঘাতকালে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা: বড় শহরসমূহে যুদ্ধ ও নগরাঞ্চলে বসবাসরত বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা’।
বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি বলেন, ‘আমরা দেখছি, যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী হামলার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহর কী পরিমাণ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের দফতর থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নগরাঞ্চলে সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসী হামলার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনের শহরসমূহে বসবাসকারী লোকজন। অনেক ক্ষেত্রেই সংঘাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিস্ফোরক অস্ত্র, যার ফলে ঢালাওভাবে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।’
‘কিন্তু এখনো অনেক দেশ আছে, যারা নিকট অতীতে ঘটে যাওয়া গণহত্যার ন্যায়বিচার পায়নি। বাংলাদেশ সেসব দেশের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে সাবেক পূর্বপাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশের নগরাঞ্চলে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। ভারত মনে করে, এই গণহত্যার বিচার হওয়া উচিত।’
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারত বহুদিন ধরেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার দায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিচার চেয়ে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের আজও আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।
কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে টিএস ত্রিমূর্তি বলেন, সশস্ত্র সংঘাতগুলো অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজনৈতিক-কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যেমে সমাধান করতে হবে।
মুম্বাই হামলার ফলাফলের কথা উল্লেখ করে জতিসংঘে ভারতীয় প্রতিনিধি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অটল থাকা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করা।
ভারত বহুদিন ধরেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার দায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিচার চেয়ে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের আজও আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ওই রাতে ঢাকায় হত্যা করা হয়েছিল অন্তত ৬ হাজার মানুষকে।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মুক্তিকামী তরুণরা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ শুরু করেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ভারতের সেনাবাহিনীও সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ৯ মাসব্যাপী এই যুদ্ধে নিহত হন অন্তত ৩০ লাখ মানুষ।
গত চার দশকে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যায় যুক্ত পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের বিচার চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু পাকিস্তানের অসহযোগিতার কারণে সেসব উদ্যোগ সফল হয়নি।
এদিকে আজ ভারতের ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবস। সেই উপলক্ষে রামনাথ কোবিন্দ ২১টি তোপধ্বনির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। রাজধানী দিল্লির রাজপথে হয়েছে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ।
এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৭৫টি বিমান ও হেলিকপ্টার, দেশটির সেনাবাহিনীর রাজপূত রেজিমেন্ট, আসাম রেজিমেন্ট, জম্মু-কাশ্মীর লাইট রেজিমেন্ট, শিখ লাইট রেজিমেন্ট, আর্মি অর্ডন্যান্স কর্পস এবং প্যারাশুট রেজিমেন্ট ও নৌবাহিনীর চৌকস দল।
এছাড়াও এবারের কুচকাওয়াজে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহার করা সেঞ্চুরিয়ান ট্যাঙ্ক, পিটি-৭৬ ট্যাঙ্ক, ৭৫/২৪ প্যাক হুইটজার এবং ওটি-৬২ টোপাজ সাঁজোয়া যান প্রদর্শন করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র সক্রিয় অশ্বারোহী ইউনিট ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬১ অশ্বারোহী রেজিমেন্ট আজকের প্যারেডে প্রথম মার্চ করা দল।
এবার, করোনা মহামারি মোকাবেলার ফ্রন্টলাইনের কর্মী, অটোরিকশা চালক, নির্মাণ শ্রমিকরা এ কুচকাওয়াজের বিশেষ অতিথি ছিলেন।
এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনেক কিছুই ছিল নতুন। প্রথমবারের মত ফ্লাইপাস্টে অংশ নেয় বিমানবাহিনীর ৭৫ টি যুদ্ধবিমান। এদিন আকাশে ওড়ে রাফালে যুদ্ধবিমানও।
রাফালে যুদ্ধবিমানের নারী পাইলট শিবাঙ্গী সিং প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ট্যাবলোতে অংশ নিয়েছেন। তিনি ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ট্যাবলোতে অংশ নিয়েছেন।
‘বন্দে ভারতম’ নৃত্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত ৪৮০ নৃত্যশিল্পীও নৃত্য পরিবেশন করবেন, এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। ন্যাশনাল ক্যাডেট ক্রপসের অনুষ্ঠান ‘শহীদও কো সাত সাত সালাম’ উপভোগ করতে পারবে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেখতে আসা দর্শক।
শুধু পূর্ণ ডোজ দেয়া প্রাপ্তবয়স্করাই কেবল অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পেরেছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার বাইরের দেশের কোনো কন্টিনজেন্ট প্যারেডে অংশগ্রহণ করেনি এবং দেশের বাইরের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিও এবার উপস্থিত হননি।
এ ছাড়া মাইগভ নামের পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমেও ভারতীয়রা সরাসরি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে পেরেছে।
সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে দেশবাসীকে ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২১৬
আপনার মতামত জানানঃ