ইরানের একটি আদালত দেশটির শীর্ষ মানবাধিকার কর্মী নার্গেস মোহাম্মদীকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ৭০ বেত্রাঘাত প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছে আদালত।
রোববার নার্গেসের স্বামী গণমাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর তাকে আটক করা হয়।
সূত্র মতে, ২০২১ সালের নভেম্বরে নার্গেস মোহাম্মদীকে হঠাৎ গ্রেফতার করে ইরানের পুলিশ। এর আগে মানবাধিকারকর্মী নার্গেস ২০২০ সালের অক্টোবরে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
কিন্তু এক বছর পর ২০২১ সালের নভেম্বরে ফের তাকে তেহরানের বাইরের শহর কারাজে এক বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
নার্গেস ২০১৯ সালে বিক্ষোভে নিহত এক ব্যক্তির প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন।
ইরানের প্রখ্যাত এই মানবাধিকার কর্মীর স্বামী তাঘি রহমানি ফ্রান্সে বসবাস করছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, মাত্র পাঁচ মিনিট শুনানির পর তার স্ত্রীকে শাস্তির এই রায় দিয়েছে আদালত।
নার্গেসের বিরুদ্ধে উভয় রায়ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। মানবাধিকারকর্মী নার্গেস মোহাম্মদী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদির সহকর্মী ছিলেন। শিরিন বর্তমান ইরানের বাইরে বসবাস করছেন।
আরাবিয়া নিউজের খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর যাবত ইরান মোহাম্মদীকে কয়েকবার কারাদণ্ড প্রদান করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নার্গেস মোহাম্মদীকে গ্রেফতারের সময় নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ মানবাধিকার কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে গ্রেফতার করেছে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ গত বছর নার্গেস মোহাম্মদীকে ইরানের ইসলামিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালানোর দায়ে ৩০ মাসের কারাদণ্ড এবং ৮০টি বেত্রাঘাত মারার রায় দিয়েছিল।
কিছুদিন আগেই পেয়েছিলেন মুক্তি
প্রকৌশলী, পদার্থবিজ্ঞানী, মৃত্যুদণ্ড বিরোধী প্রচারক নার্গেস ছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইরানী শিরিন এবাদি প্রতিষ্ঠিত ‘ডিফেন্ডার্স অফ দা হিউম্যান রাইটস সেন্টার ইন ইরান’ এর মুখপাত্র ছিলেন।
নার্গেসকে ২০১৫ সালের মে মাসে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে শিরিন এবাদির মানবাধিকার সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ করে সরকার।
এরপর ২০১৬ সালের ১৮ মে “অবৈধ দল গঠন ও পরিচালনার জন্য” দু’সন্তানের মাতা নার্গেসকে ১৬ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক প্রেস স্বাধীনতা সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এর মতে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাকে তেহরানের ইভিন কারাগার থেকে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত জাঞ্জান কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
স্নায়ুজনিত রোগে পেশী পক্ষাঘাতগ্রস্থ ও ফুসফুসজনিত সমস্যার কারণে নার্গেস চিকিৎসার জন্য ২০২০ সালের জুনে জেল থেকে সাময়িক মুক্তি চাওয়া হয়েছিল।
এরপর জুলাইয়ে অধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গুরুতর প্রাক-বিদ্যমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও সন্দেহজনক কোভিড-১৯ উপসর্গ দেখা দেওয়ায় অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছিল।
২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের বিতর্কিত পুনর্নির্বাচনের পর এবাদি ইরান ত্যাগ করেন, তখন সরকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রতিবাদ শুরু হলে সরকার কঠোর অভিযান চালিয়ে তা দমন করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচলেট ইরানের প্রতি নার্গেসকে “অবিলম্বে মুক্তি” দেওয়ার আহ্বান জানানোর কয়েক দিন পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত মার্চ থেকে ইরানে প্রায় এক লাখের বেশি বন্দীকে সাময়িক মুক্তি বা সাজা ছাড় দিয়ে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ