করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ফাইজার ও মডার্নার টিকার চতুর্থ ডোজও পুরোপুরি সক্ষম নয়। অবশ্য পুরোপুরি সফল না হলেও ইসরায়েলের একটি গবেষণায় ভাইরাস প্রতিরোধে টিকার চতুর্থ ডোজকে আংশিক কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
করোনা প্রতিরোধে বিদ্যমান টিকাগুলোর দু’টি ডোজ নেওয়ার পরে বহু দেশেই সাধারণ মানুষ টিকার বুস্টার ডোজ নিতে শুরু করেছেন। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার বুস্টার ডোজ নিতে নাগরিকদের আহ্বান জানাচ্ছে। উপমহাদেশেও বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলের একটি গবেষণাপত্র বলছে, টিকার তৃতীয় ডোজ তো নয়ই, চতুর্থ বুস্টার ডোজও করোনা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ সফল হবে না। ইসরায়েলের শেবা মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা এই গবেষণাটি করেছেন। তবে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। প্রাথমিক রিপোর্টে তারা এই তথ্য দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ নিয়ে এবারই প্রথম কাজ করেছে ইহুদি ওই দেশটির মেডিকেল সেন্টারটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরীক্ষার জন্য প্রায় ১৫০ জন ব্যক্তিকে ফাইজার-বায়োএনটেকেকের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। ১২০ জনকে দেওয়া হয়েছিল মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মডার্নার ভ্যাকসিন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া এই ২৭০ জনের সকলেরই তৃতীয় বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা নেওয়া ছিল। পাশাপাশি তৃতীয় বুস্টার ডোজ নেওয়া একটি দলকে রাখা হয়েছিল। যারা চতুর্থ টিকা পায়নি।
গবেষকরা দেখেছেন, চতুর্থ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে অ্যান্টিবডি বেড়েছে। কিন্তু ওমিক্রনের মতো ভ্যারিয়েন্টকে পুরোপুরি নির্মূল করতে তা সক্ষম নয়। অর্থাৎ, চতুর্থ ডোজ নিলেও ওমিক্রন হতে পারে। তবে একইসঙ্গে বলা হয়েছে, তৃতীয় ডোজ নেওয়া ব্যক্তির চেয়ে চতুর্থ ডোজ নেওয়া ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি পাওয়া গেছে।
বিশ্বের একাধিক টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা এখন কম্বাইন্ড বা যৌথ টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। যা বর্তমান টিকাগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকরী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কোনো কোনো সংস্থা আবার ফ্লুয়ের জন্য তৈরি আরএসভি ভ্যাকসিনের সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিনের সংমিশ্রণ করে টিকা তৈরির চেষ্টা করছে। ২০২৩ সাল নাগাদ তা বাজারে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এর মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ওমিক্রন। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে শনাক্ত হয়েছেন আরও আট হাজার ৪০৭ জনের।
এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ালো ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৬৪ জনের। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৬৭৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন। ওই সময়ে করোনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তে ৩৫ হাজার ৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৮ হাজার ৪০৭ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ালো ১ কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৯টিতে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে আটজন পুরুষ, দুজন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন সাতজন। চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে একজন করে মারা গেছেন।
এই সময়ে দেশে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ৪৭৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৫ জনে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ