রক্তিম বিপ্লবী
সাম্প্রতিক সময়ে বৈবাহিক ধর্ষণ কথাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। কেরলা হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বৈবাহিক ধর্ষণ বিচ্ছেদ চাওয়ার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ। অন্যদিকে দিল্লি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ বৈবাহিক ধর্ষণ প্রাথমিক ভাবে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’! যদিও এই নিয়ে রায়দান এখনও বাকি আছে তবুও দিল্লি হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ!
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি রাজীব শাকধ ও সি হরিশঙ্করের বেঞ্চে এই মামলাটি চলছে। শুনানি চলাকালীন ভারতীয় দন্ডবিধির 375 ধারার ধর্ষণ (বৈবাহিক ধর্ষণ) নিয়ে আলোচনার সময় বিচারপতি হরিশঙ্কর বলেন, ‘আমি মনে করি বৈবাহিক ধর্ষণ প্রাথমিক ভাবে (প্রাইমা ফেসি) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ সম্পর্কে কোন ও সন্দেহই থাকতে পারে না। একজন নারীর যৌন স্বাধীনতা, নিজের দেহের উপর ব্যাক্তির সার্বভৌম অধিকার ও ‘না’ বলার অধিকারের সঙ্গে কোন ও সমঝোতা চলতে পারে না।’
এদিন মামলা চলাকালীন আইনজীবী করুণা নন্দী তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন সেগুলি হল-
- আইন বা বিধি নেই বলে কোন ব্যক্তি পার পেয়ে যাবেন, এটা হতে পারে না।
- ভারতীয় দন্ডবিধির 375 ধারার ব্যতিক্রমকে (অর্থাৎ স্ত্রীর বয়স যদি 15 বা তার বেশি হয় তাহলে তা ধর্ষণ নয়) যদি বাতিল করা হয় তা নতুন অপরাধের জন্ম দেবে না।
- বৈবাহিক ধর্ষণকে ব্যাতিক্রম হিসাবে বহাল রাখা সংবিধানের 14, 15, 19 ও 21 ধরার পরিপন্থী।
তাই তাঁর দাবি, আইনসভার জন্য অপেক্ষা না করে আদালতই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। এরপরেই তিনি বলেন, ‘শোয়ার ঘরে যদি স্ত্রীকে চড় মারা হয় বা তাঁকে খুন করা হয়, তা হলে সেটা অন্যায়। অথচ ধর্ষণটা নয়!’
বলাইবাহুল্য দিল্লি হাইকোর্টের এরূপ পর্যবেক্ষণ যথার্থ এবং এরফলে বৈবাহিক জীবনে নারীর অধিকার আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হবে কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এরই সঙ্গে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হল। প্রশ্ন হল বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি স্বীকৃতি দিলে তাঁর অপব্যবহার হবে না তাঁর কি কোন নিশ্চয়তা রয়েছে?
উল্লেখ্য বৈবাহিক ধর্ষণের মূল বিষয়টি হল 15 বছরের অধিক স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম ধর্ষণ কিনা? ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী যেখানে নারীর বিবাহের বয়স 18 বছর (বর্তমানে নারীর বিবাহের বয়স 18 হলে ও তা বৃদ্ধি করে 21 বছর করা যায় কিনা তা কেন্দ্রীয় সরকার বিবেচনা করছে।) সেখানে এরূপ রায় দিলে সমস্যার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল এই রায় যদি সকল বয়সি নারীর ক্ষেত্রেই দেওয়া হয় (যা হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল) সেক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য এইরূপ বহুবিধ ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করেই অতীতে সুপ্রিম কোর্ট ও ছত্তিশগড় হাইকোর্ট সহ অন্যান্য হাইকোর্ট বহু বার বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগকে খারিজ করেছে।
আসলে বিবাহ একটি প্রতিষ্ঠান স্বরূপ যেখানে দুটি শরীর ও মনের মিলন ঘটে কিন্তু বহুক্ষেত্রেই দেখা যায় পরিবারিক বনিবনা না হলে পুরুষ সঙ্গীটি তাঁর নারী সঙ্গীকে আক্রমণ করে বসে! আবার অন্য ক্ষেত্রে দেখা যায় নারী সঙ্গী বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই পুরুষ সঙ্গীর বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হয় এবং অতীতে দেখা গেছে নরীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বধূ নির্যাতনের মতো IPC 498-A ধারার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে।
তাই এই বিষয়ে কোন রায় দেওয়ার আগে ব্যাপক পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে এবং আইনের যাতে কোন অপব্যবহার না হয় তা সুনিশ্চিত করা সরকার ও আদালতের কর্তব্য। আইন যদি আসে, তাহলে অপরাধীর যেমন কঠোর শাস্তির প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি মিথ্যা অভিযোগের জন্য ও সমতুল শাস্তির প্রয়োজন!
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি, শিশুকাল থেকেই আমি মনে করতাম পারিবারিক হিংসার ক্ষেত্রে পুরুষরাই মূলত দায়ী। আমার এরূপ মনে করার কারণ হল আমি মনে করতাম পুরুষ শক্তিশালী, অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী তাই যে কোনো অন্যায় পুরুষ সংগঠিত করতে পারে এবং নারী এক্ষেত্রে নিগৃহীত এবং নিপীড়িত!
বলাইবাহুল্য বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এরূপ দৃষ্টিভঙ্গীর ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে পরবর্তীকালে দেখতে পাই বিষয়টি এত সরল নয়, এটা সত্য বেশকিছু পুরুষ নারী নির্যাতন করে কিন্তু এর বিপরীত ছবি ও কিছু কম নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি এক পরিবারের সন্তান তাঁর পরিবারের বাবা, মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে এই নিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং পরবর্তীকালে ওই স্ত্রী বধূ নির্যাতনের মামলা করে শুধু পরিবার নয়, নিকট আত্মীয়দের সকলকে হাজতবাসের ব্যবস্থা করে এবং স্ত্রী এটাও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আমার কথা না শুনলে গোটা পরিবারকে আবার জেলে পুরব!
অপর একটি ক্ষেত্রে দেখা যায় এক নারী তাঁর শাশুর, শাশুড়িকে ব্যাপক অত্যাচার করে এবং তাঁদের ঘর থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে, নিজেই তাঁদের আক্রমণ করে এবং তাঁর স্বামী যখন এই বিষয়ে প্রতিবাদ করে তখন তিনি তাঁর স্বামী ও পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করে তাঁদের হাজত বাস করতে বাধ্য করে!
আবার কোথাও স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং শুধু মাত্র সন্তানদের দেখার জন্য ও স্ত্রী টাকা দাবি করে! বলাইবাহুল্য এরূপ ঘটনা প্রতিটি পাড়া, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি শহরে বলা ভালো সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায়! অথচ এ নিয়ে প্রথম সারির কোন মিডিয়া বা বুদ্ধিজীবীদের ভ্রুক্ষেপ নেই, অনেকে এগুলি সত্য এটাই বিশ্বাস করতে চাই না। যাইহোক এগুলি বিবেচনা করেই হয়তো আদালত পরবর্তীকালে রায় দিতে বাধ্য হয় যে বধূ নির্যাতনের মামলা মানেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা যাবে না।
প্রকৃতপক্ষে আইন তৈরি হয় সমাজের নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষদের ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কিন্তু সমাজের বহু মানুষ এই আইনের অপব্যবহার করে। বৈবাহিক ধর্ষণ আইন একবার পাশ হয়ে গেলে এটি কি নারীদের অসীম ক্ষমতা প্রদান করবে না? পরবর্তীকালে কি এটা দেখা যাবে না যে, সাধারণ কোন পারিবারিক সমস্যার ক্ষেত্রে ও নারীরা গার্হস্থ্য হিংসার সঙ্গে বৈবাহিক ধর্ষণকে যুক্ত করবে? বৈবাহিক ধর্ষণ আদেও হয়েছে কিনা এটা প্রমাণিত হবে কিভাবে? শুধুমাত্র নারীর কথায় যদি শেষ কথা হয় তাহলে পুরুষ সঙ্গীটি বিনা দোষে অপরাধী সাব্যস্ত হবে না তার নিশ্চিয়তা কি রয়েছে?
এক শ্রেণীর মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা এই নিয়ে প্রশ্ন করলে এগুলি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন বা পিছিয়ে পড়া মানসিকতা বলে এড়িয়ে যেতে চাই কিন্তু প্রকারান্তরে তাঁরা ও এইভাবে অন্যায়ের সহযোগিতা করে! বলাইবাহুল্য আইন লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়া উচিত কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় এরূপ আইন শোষণের হাতিয়ারের পরিণত হয়। এগুলি নারীকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করে অথচ এর ফলে পুরুষ সক্ষীটি নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটি ও পান না! অথচ এসব বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই, আসলে সমাজ মনে করে নারী মানেই নির্যাতিত এবং পুরুষ মানেই অপরাধী, সমাজের এরূপ মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে!
এরূপ মানসিকতা আমাদের কিভাবে ভুল পথে পরিচালিত করে তাঁর একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়। অনেক সময় দেখা যায় খেলার মাঠে বহু ক্রিকেটারকে তাঁর নারী ভক্তরা আলিঙ্গন করে, খাস কলকাতেই এরূপ ঘটনা বহু বার দেখা গেছে! এক্ষেত্রে মিডিয়া এগুলিকে হাসি বা মজার বিষয় বলে উল্লেখ করে কিন্তু বিষয়টি যদি একটু অন্যভাবে ভাবা যায় মনে করুন কোন অভিনেত্রীকে যদি তাঁর কোন পুরুষ ভক্ত একইভাবে আলিঙ্গন করে তখন মিডিয়াতে এটাই শিরোনাম হয়ে যাবে যে, এই রাজ্য নারীদের জন্য সুরক্ষিত নয়, মহিলাদের নিরাপত্তা তলানিতে পৌঁছেছে ইত্যাদি ইত্যাদি! অর্থাৎ একই ঘটনা পুরুষ ও নারী সংগঠিত করলে তাঁদের ক্ষেত্রে বিচার কেন আলাদা? সমাজের এরূপ চিন্তার কারণ কি? সব বিষয়ে যদি আমরা সমানাধিকারের দাবি তুলি তাহলে এই বিষয়গুলিকে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিচার করি কেন?
বলা যায় সমাজ যেন আগেই মজ্জাগত করে নিয়েছে যে পুরুষ মানেই অপরাধী, আর নারীরা নির্যাতিত এই কারণেই ‘অবলা নারী’ কথাটি প্রচলিত। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ কথাটা কতটা প্রাসঙ্গিক সেটাও বড় প্রশ্ন? আসলে সমাজ প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল তাই আগের চেয়ে এখনকার সমাজব্যবস্থা অনেকটাই আলাদা। এরূপ দৃষ্টিভঙ্গীর ফল কি হতে পারে তা ব্যক্তিগত জীবন থেকে একটা উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে- কলেজে পড়ার সময় একদিন এক বান্ধবীর ফোন চুরি হয়ে যায় এবং সেই বান্ধবীর সঙ্গে পুলিশ থানায় রিপোর্ট লেখাতে যায়। বান্ধবীটি বাইরে থাকে এবং আমি একা রিপোর্ট লেখাতে যায়।
পুলিশ অফিসারটি বলে আপনার খুব কাছের বান্ধবী বলে মনে হচ্ছে, তবে অযাচিত ভাবে একটা পরামর্শ দিতে চাই, “আপনাকে দেখলে ভদ্র ও সভ্য বাড়ির ছেলে বলে মনে হয় এবং আপনি আমার ভাইয়ের মতো তাই একটা কথা বলতে চাই কলেজ জীবনে হঠাৎ করে যেন কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না, সম্পর্কটা বন্ধুত্বের পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখবেন এর বেশি এগোতে যাবেন না। আমি কোন সম্পর্কেরই বিরোধী নয় কিন্তু জীবনে কত অভিজ্ঞতা হল কত মেয়ে পচ্ছন্দ করে বিয়ে করে আবার পরবর্তীকালে বাবা, মায়ের কথা শুনে সেই ছেলেকেই রেপ কেস ও অপহরণের কেসে ফাঁসিয়ে দেয়! রোজ এমন কত ঘটনার সঙ্গে ডিল করছি তাঁর ঠিক নেই! পাশে বসা এক বয়স্ক ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে অফিসারটি বলেন এনাকে ও জিজ্ঞাসা করো এরূপ ঘটে কিনা, ইনি তো অনেক অভিজ্ঞ এনাকে ও জিজ্ঞাসা করো! প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা রঙিন সময় আসে এইসময়ে খুব ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হয় এবং জীবনে বড় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত!” বলাইবাহুল্য অফিসারটির এরূপ কথার কোন উত্তর সেদিন আমার কাছে ছিল না, রিপোর্ট লিখিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। তবে তাঁর প্রতিটি কথা আজও মনে রয়েছে।
জীবন বড়ই জটিল এবং জীবন আমাদের সর্বোচ্চ শিক্ষা দেয়, পরবর্তীকালে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি পুলিশ অফিসারের কথা গুলি মিথ্যা ছিল না বরং এমন ঘটনা অহরহ কত ঘটছে তাঁর কোন সঠিক হিসাব নেই! ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কত মিথ্যা মামলা হচ্ছে তাঁর কোন ঠিক নেই! বিশেষত নারী নির্যাতন ও বধূ নির্যাতনের নামে বহু মানুষ ও বহু পরিবারকে সামাজিক সন্মানহানী ও অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে, এগুলির বিচার করবে কে? অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষ সঙ্গীটির বৃদ্ধ বাবা, মা এবং পাশে কেউ না থাকার কারণে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে জেলে পচতে হচ্ছে! এগুলির কি কোন বিচার নেই?
আবার বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় নর নারী স্বেচ্ছায় একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হয় এবং এই সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে অনেক সময় নারী পুরুষের দিকে আঙ্গুল তোলে এবং ধর্ষণ বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের মতো অভিযোগ আনে। বলাইবাহুল্য এইরকম সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্ষণের অভিযোগ কতটা যৌক্তিক? এক্ষেত্রে যদি দোষী হয় তাহলে কি পুরুষ একাই দোষী? নারীর এক্ষেত্রে কি কোন ভূমিকা নেই? উল্লেখ্য এইসব বিষয় বিবেচনা করেই ওড়িষ্যা হাইকোর্ট এক রায়ে বলেন এরূপ ঘটনাকে ধর্ষণ বলা যাবে না! অন্যান্য হাইকোর্ট ও অনেকক্ষেত্রে একই রকম রায় প্রদান করেছে!
সাম্প্রতিক কালে এক নামী অভিনেত্রী মিডিয়া ও সমাজের সকলের সামনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে সন্তানের মা ও হন কিন্তু তিনি এখন দাবি করছেন তাঁদের মধ্যে কোন বিবাহের সম্পর্ক ছিল না, তাহলে প্রশ্ন হল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মিডিয়া যা দেখল সেটা কি? সত্যি কথা বলতে কি কারোর ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলতে বা লিখতে আগ্রহী নয় কিন্তু প্রশ্ন হল এই একই কাজ যদি কোন পুরুষ অভিনেতা বা কোন পুরুষ মানুষ করত তাহলে সমাজ তাঁকে কি বলত? তাহলে কি তাঁকে ধর্ষক, প্রতারক ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত হতে হত না? তিনি কি এতদিন মুক্ত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে পারতেন? তিনি কি জেলের ঘানি টানতেন না?
নারী ইচ্ছা করলে কোন সম্পর্কে আবদ্ধ হতে বা ত্যাগ করতে পারেন কিন্তু পুরুষ এক্ষেত্রে তা পারেন না কেন? নারী যেমনই হোক, তাঁর সঙ্গে বনিবনা না হলেও তাঁকে নিয়েই একজন পুরুষকে সংসার করতে হবে এ কেমন নিয়ম? নারী যদি অপচ্ছন্দের পুরুষকে সহজেই ত্যাগ করতে পারে তাহলে পুরুষ ও তা পারবে না কেন? অনেকেই বলবেন পুরুষদের ক্ষেত্রে বহু বিবাহের সুযোগ রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে এটা সত্য তবে কোন সভ্য সমাজ এটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে না। আমার প্রশ্ন হল খুবই সরল একজন স্ত্রী যদি খুব সহজে তাঁর স্বামীকে ত্যাগ করতে পারেন তাহলে একটি স্বামী যদি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সত্যিই বনিবনা না হয় তাহলে তাঁকে ত্যাগ করার অধিকার পাবে না কেন?
আসলে সমাজ মনে করে পুরুষদের উপর নির্যাতন হতে পারে না, পুরুষরা শক্তিশালী ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষদের উপর ও নির্যাতন কম হয় না। অথচ পুরুষদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই তাঁদের পক্ষে একটি ও আইন নেই, এটি কেমন বিচার? মনে রাখতে হবে পুরুষ মানে শুধু একজন ব্যক্তি নয় বরং সেই পুরুষকে কেন্দ্র করে একটি পরিবার গঠিত হয়। সেই পুরুষটি কারোর সন্তান, কারোর দাদা, কারোর ভাই বা কারোর পিতা। একটি পুরুষকে শায়েস্তা করতে গিয়ে বাবা, মা, ভাই, বোন পরিবার পরিজন সকলকে হেনস্থা করা হয় এবং সকলের সন্মানহানী ঘটে, সরকার ও আইন বিভাগ কি এই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করবে না?
অনেক সময় দেখা যায় শুধুমাত্র শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো অভিযোগে অভিযুক্ত করে কাজ হাসিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়কে তাঁর এক নারী কলিগ শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। বলাইবাহুল্য এরূপ অভিযোগের ফলে তিনি তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। মিডিয়াতে এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় কিন্তু অবাক বিষয় হল সেই অভিযোগ কারিণীর পরবর্তীকালে আর বিশেষ খোঁজ পাওয়া যায় না! সেই মামলার আর কি হল তা ও খোঁজ পাওয়া যায় না!
নিন্দুকেরা বলেন এগুলি সবই বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা তাই কাজ হাসিল হওয়ার পর অভিযোগ কারিণীর আর দেখা পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য জাস্টিস গাঙ্গুলির বহু রায় তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছিল তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, এভাবে জাস্টিস গাঙ্গুলিকে সরিয়ে দিয়ে, আদতে রাজ্যসরকার তাঁদের পথের কাঁটা সাফ করল। যাইহোক আমরা আশাবাদী একদিন হয়তো আমরা অভিযোগ কারিণীর দেখা পাব এবং আদালতের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য কি তা জানতে পারব! বস্তুত এরূপ ঘটনা বহু দেখা যায়। আর এরূপ ঘটনার ফলে বর্তমানে নারীদের কর্মসংস্থানে নিতে বহু ডাক্তার, আইনজীবী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভয় পায়। নিশ্চয়ই প্রকৃত শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা হলে তাঁর বিচার হওয়া উচিত কিন্তু বহুক্ষেত্রে দেখা যায় এরূপ মিথ্যা মামলা করার ফলে আদতে নারীদের ক্ষমতায়নের পথ আরও কণ্টকাকীর্ণ হচ্ছে!
আমরা মনে করি নারীর ক্ষমতায়ন হলে নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহুক্ষেত্রে নারীরা ক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত হলে তিনি তাঁর নারী সঙ্গীদের প্রতি আরও নির্মম ও কঠোর আচরণ করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কোন গালর্স স্কুলে শিক্ষিকারা ছাত্রীদের নিয়ম শৃঙ্খলার নামে যতটা কড়াকড়ি করেন তা কোন কো-এড স্কুলে দেখা যায় না! এইসব স্কুলে নারীদের সংস্কারী তৈরী করার চেষ্টা করা হয় ও তাঁদের বেড়ে ওঠার স্বাধীনতা হরণ করা হয়! বলা যায় এর ফলে ছাত্রীদের স্বাভাবিক বৌদ্ধিক বিকাশ ব্যাহত হয়। যার ফলশ্রুতি হিসাবে দেখতে পাই নারীরা আরও কুসংস্কারে আবদ্ধ হয় এবং শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কার্যক্ষেত্রে ব্যাহত হয়! পরিবারের ক্ষেত্রে ও দেখা যায় বাবা তাঁর মেয়ের প্রতি যতটা সদয় মা কিন্তু ততটা নয়, মা বরং মেয়েকে লৌহশৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে চাই! জানি না এরূপ মানসিকতার কারণ কি? কবে নারীরা তাঁদের আজন্ম সংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃত মানবিক মানুষে পরিণত হবে কে জানে? উন্নত সমাজগঠনের ক্ষেত্রে সামাজের অগ্রগণ্য নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সমাজ নারী পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে ওঠে, তাই উভয়ের উন্নয়ন হলে তবেই প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও দেশের সার্বিক বিকাশ সম্ভব! অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি নারীর বিষয়ে কিছু লিখতে বা বলতে অনেকেই ভয় পায় কারণ নারীর বিষয়ে কিছু লিখলে বা বললেই নারীবাদী বা নারী বিদ্বেষী তকমা পেতে হয়। তাই বহু মানুষ এই নিয়ে আলোচনা করতে ভয় পায়, তাঁরা সুকৌশলে এই বিষয় এড়িয়ে চলতে পচ্ছন্দ করেন। অথচ সুস্থ সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে এই আলোচনা হওয়া উচিত! সব বিষয়কে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বা নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়, উভয় মতাদর্শই পক্ষপাত দোষে দুষ্ট এবং উভয় মতাদর্শেই ন্যায়বিচার সুচিন্তিত হয় না, তাই লিঙ্গ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যে কোন বিষয় বিবেচনা করা উচিত!
নিজের অবস্থান সম্পর্কে বলতে হয়, নজরুলের ভাষাই বলি- “নর ভাবে আমি বড় নারী ঘেঁষা, আর নারী ভাবে নারী বিদ্বেষী।” পরিশেষে একথা বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়ন হোক এবং নারীরা এগিয়ে যাক এটাই চাই কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের নামে বৈবাহিক ধর্ষণকে যে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে তা কতটা যথার্থ? এবং এর ফলে সমাজে কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে সে বিষয়ে মহামান্য আদালতকে বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি! আইন লিঙ্গ নিরপেক্ষ তৈরী হওয়া উচিত যাতে নারী ও পুরুষ উভয়েই বাঁচার অধিকার পায়! সব পুরুষ মাত্রই যেমন দোষী নয় আবার সব মহিলা মাত্রই তেমন শোষিত বা অত্যাচারিত নয়! সামাজিক এই সত্যকে স্বীকার করেই আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত! দোষীরা নিশ্চয়ই শাস্তি পাক কিন্তু একপাক্ষিক আইনের বলি হয়ে নিরপরাধ কোন মানুষকে ভুগতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা দেশ তথা সমাজ ব্যবস্থার কর্তব্য! সর্বোপরি লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক এবং এর ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মঙ্গল সাধিত হোক সেটাই আশা রাখি!
তথ্যসূত্র:-
- ১) এই সময়।
- 2) The Hindu.
- ৩) The Times of India. ক) Key judgments puncture government’s defense on marital rape, খ) Consent/Crime: About time courts criminalise marital rape, গ) Sex on false promise of marriage does not mean rape: Orissa .., ঘ) Ganguly named as ex-SC judge accused of molesting intern
- ৪) Hindustan Times. ক) Section 498-A being misused to implicate husband’s entire family: Bombay high court, খ) Sex between married couple not marital rape even if by force: Chhattisgarh HC
- ৫) আনন্দবাজার পত্রিকা।
- ৬) TV 9 Bangla.
- ৭) latestlaws.
রক্তিম বিপ্লবী, পশ্চিমবাংলা, ভারত
আপনার মতামত জানানঃ