১৮৬১ সালে জার্মানির এক পাথরের খনিতে এই পাখির ফসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া যায়। সেখানে মূলত একটি পাখির দুটি বৃহৎ ডানার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, এটিই পৃথিবীর প্রাচীনতম পাখি। তবে এ নিয়ে বিতর্কও আছে। তবুও প্রত্নতাত্ত্বিক ও পাখি বিজ্ঞানীরা অনেকটা একমত যে, আবিষ্কৃত আর্কিওপটেরিক্সই পৃথিবীর প্রাচীনতম পাখি।
প্রাচীনকালের প্রথা, ধর্ম, সাহিত্য, শিল্পকলা প্রভৃতিতে রয়েছে পাখির প্রত্যক্ষ উপস্থিতি। কিন্তু এই পাখির শুরুটা কীভাবে? অবশ্য কীভাবে বা কখন পাখিরা পৃথিবীতে এসেছিল তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এ নিয়ে রয়েছে নানা মতবাদও।
বিবর্তনবাদের জনক ডারউইন বলেছিলেন, সরীসৃপ প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে পাখির সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকে মনে করে ডায়নোসর থেকে পাখির উৎপত্তি। আজ আমরা প্রত্নতাত্বিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পৃথিবীর প্রাচীনতম পাখির অনুসন্ধান করবো।
এ পর্যন্ত পাখির সবচেয়ে প্রাচীন ‘চিত্র’ পাওয়া গেছে স্পেনের এক গুহায়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, সেগুলো পনের থেকে ষোল হাজার বছর আগের গুহা মানবদের আঁকা। তখনকার দিনে শিকারে যাওয়ার আগে গুহার দেয়ালে পশুপাখির ছবি আঁকার একটি রেওয়াজ ছিলো। আর এ পর্যন্ত পাখির প্রাচীনতম ‘জীবাশ্ম’ পাওয়া গেছে জার্মানির বাভারিয়ার লাইমস্টোন বা কালো পাথরের খনিতে, ১৮৬১ সালে।
জীবাশ্ম মূলত একধরনের পাথর। কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী মারা যাওয়ার পর অনেক সময় তা নদীর ধারে বা আশেপাশের অঞ্চলের পলি মাটিতে এসে জমা হয়। তারপর সেই দেহের উপর মাটি জমতে থাকে। স্তরের পর স্তর মাটি জমা হয়ে সেই উদ্ভিদ বা প্রাণী দেহের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এতে সেই উদ্ভিদ বা প্রাণীদেহ কঠিন পাললিক শিলায় পরিণত হয়।
ধীরে ধীরে সেই চাপ আরও বাড়তে থাকে। অনেক সময় এর সাথে যুক্ত হয় তাপের প্রভাব। এর ফলে ধীরে ধীরে সেই পাললিক শিলা পরিণত হয় পাথরে। আর সেই পাথরের মধ্যে উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ প্রতিস্থাপিত হয়। হয়তো সেই উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ পচে, গলে যায়, কিন্তু তার দেহের আকৃতির একটি অবিকল ছাপ সেই পাথরের মধ্যে থেকে যায়। এই পাথরকেই আমরা বলে থাকি জীবাশ্ম।
গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বছর আগের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের সম্পর্কে জানা যায় এসব জীবাশ্ম থেকে। প্রাচীনকালের পাখিদের ব্যাপারেও আমরা এসব জীবাশ্ম থেকে নানা তথ্য জানতে পারি।
বাভারিয়ার লাইমস্টোন খনিটি ছিলো রাভেগনালথেইম এলাকায়। এরিক হারম্যান ভন মেয়ের নামের এক জার্মান জীববিজ্ঞানী প্রথমে এর সন্ধান পান। তিনি এটি উদ্ধার করে একজন স্থানীয় পদার্থবিদ কার্ল হবারলেইনের কাছে গবেষণার জন্য দিয়ে দেন।
তিনি এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে লন্ডনের ইতিহাস যাদুঘরে খবর দেন। লন্ডনের ‘ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম’ কর্তৃপক্ষ ৭০০ ইউরোর বিনিময়ে তার থেকে ঐতিহাসিক এই জীবাশ্মটি কিনে নেন।
আবিষ্কারের পর পাখির এই জীবাশ্ম জীববিজ্ঞানীদের মাঝে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর ফলে পাখিদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জানার এক নতুন দিগন্ত খুলে যায়।
সেই জীবাশ্মের পাখির মাথা দেখতে গিরগিটির মতো। চোয়ালে রয়েছে সারি সারি দাঁত। মেরুদণ্ড অনেকটা গিরগিটির লেজের মতো লম্বা। লেজটা কতগুলো জোড়া দেয়া হাড়ের মতো দেখতে, যার দু’পাশ জুড়ে থাকতো ঘন পালক।
এ কারণেই একদল পাখি বিজ্ঞানীর অনুমান, গিরগিটি থেকে বিবর্তিত হয়ে পাখির উৎপত্তি হয়েছে। অনেকে আবার এর সাথে মিল পেয়েছেন ডাইনোসরের।
এই আদি পাখির পালক ও হাড়গুলো লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। বিজ্ঞানীরা এই পাখির নামই দিয়েছেন আর্কিওপটেরিক্স। তাদের ধারণা, এর বয়স ১৩ থেকে ১৪ কোটি বছর। তাদের দাবি, এটিই পৃথিবীর প্রাচীনতম পাখি।
এসডব্লিউ/এসএস/২২০০
আপনার মতামত জানানঃ