শ্যামলীতে অবস্থিত আমার বাংলাদেশ হসপিটালে বিল পরিশোধ করতে না পারায় পিসিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা যমজ দুই শিশুকে বের করে দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা গেল আহমেদ (৬ মাস) নামে এক শিশু।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্যামলীর মিরপুর রোডের ‘আমার বাংলাদেশ হসপিটাল’ নামের বেসরকারি হাসপাতালে থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় এক শিশু।
ছয় মাস বয়সী আব্দুল্লাহ ও আহামেদ নামের শিশু দুটির মা কুমিল্লার হোমনা উপজেলার সৌদি প্রবাসী মো. জমালের স্ত্রী আয়েশা বেগম। তিনি সাভারের বাট পাড়া রেডিও কলোনিতে সন্তানদের নিয়ে থাকেন। মারা যাওয়া শিশুর নাম আহমেদ।
ঢামেক হাসপাতালে মা আয়েশা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘ঠাণ্ডাজনিত কারণে ৩১ ডিসেম্বর শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করি দুই বাচ্চাকে। রোববার সেখানে থেকে বলা হয়েছে, তাদেরকে এনআইসিইউতে নিতে হবে। সেখানে এনআইসিইউতে সিট পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে যখন সিদ্ধান্ত নিই, সাভারে নিয়ে যাব। তখন হাসপাতালে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে আমাকে কৌশলে আমার বাংলাদেশ হসপিটালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালে শিশু দুটি চিকিৎসা নিচ্ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছয় দিন ভর্তি দেখিয়ে আমাদের কাছে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করে।’
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েক বার ৫০ হাজার ৫ শ টাকা দিয়েছি। আর পারিনি। হাত-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে আমাদের জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়।
হাসপাতালের কর্মী শাহিনকে দিয়ে দুই শিশুসহ আমাদের ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। এখানে আনার আগেই এক শিশুর মৃত্যু হয়।’
‘এরই মধ্যে কয়েক বার ৫০ হাজার ৫ শ টাকা দিয়েছি। আর পারিনি। হাত-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে আমাদের জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়।
আয়েশা বেগম জানান, শিশুদের বাবা দু মাস আগে সৌদি গেছেন। সেখানে তিনি মরুভূমিতে কাজ করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে নিয়ে টাকা পাঠিয়েছিলেন। সব টাকাই হাসপাতালে দিতে হয়েছে। তাদের বড় ছেলে পাঁচ বছর বয়সী আরব আলী কুমিল্লায় নানার কাছে থাকে।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার (এএসআই) আশরাফুজ্জামান সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ওই যমজ শিশু মায়ের থানায় গিয়ে ঠিক মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ওই হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি এই নারী কোনো টাকা দিতে পারেনি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করে আসি মানবিক দিক বিবেচনা করে একটি ব্যবস্থা নেন।
ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া জানান, যমজ দুই শিশুর মা অভিযোগ করেছেন—‘হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় চিকিৎসাধীন দুই শিশুকে বের করে দিয়েছে। পরে রাস্তায় তার এক সন্তান মারা যায়। ’ আব্দুল্লাহ নামে অপর এক শিশু ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এদিকে অভিযোগ ওঠা শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ারকে আটক করেছে র্যাব। শুক্রবার গোলাম সারওয়ারকে আটক করা হয় বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ওই হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ারকে আটকের বিষয়ে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করা হয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের বাণিজ্যিক মনোভাবের বহিপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো মূলত সেবা দেয়ার নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেখানে সেবার চেয়ে আর্থিক মুনাফার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল গড়েই ওঠে সেইসব বিশেষায়িত বিভাগ নিয়ে, যে রোগগুলো উপশমে রোগীদের বিপুল অর্থ প্রদান করতে হয়ে। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগের চিকিৎসা হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাবছরই রোগীদের কাছ থেকে ব্যবসা করেছে হাসপাতালগুলো। বর্তমান এই দুর্যোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর উচিত ব্যবসার চিন্তা মাথা থেকে বাতিল করে সেবার ব্রতে মানুষের পাশে দাড়ানো।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ