সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পেনার্থ সমুদ্রসৈকতে ডাইনোসরের পায়ের ছাপের সন্ধান মিলেছে। ছাপগুলো ২০ কোটি বছরের বেশি পুরোনো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর সিএনএনের।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ডায়নোসরের পায়ের ছাপগুলো ট্রায়াসিক যুগের। তাদের ধারণা, এগোলো সারোপড বা এই গোত্রভুক্ত ডায়নোসরের। পৃথিবীর বুকে চরে বেড়ানো প্রথম দিকের ডায়নোসর ছিল সারোপড।
মিউজিয়ামটির জীবাশ্মবিদ সুসানা মেইডমেন্ট বলেন, ট্রায়াসিক যুগে ব্রিটেনে সারোপড গোত্রের প্রথম দিকের ডায়নোসরের বসবাস ছিল। আগেও দেশটির সমারসেট এলাকায় ক্যামেটোলিয়ার হাড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্যামেটোলিয়া সারোপড গোত্রের একেবারে প্রাথমিক দিকের ডায়নোসর।
ডায়নোসরের প্রাচীন এই পায়ের ছাপগুলো খুঁজে পাওয়া যায় ২০২০ সালে। এরপর সেগুলো পাঠানো হয়েছিল সুসানা মেইডমেন্ট ও তার সহকর্মী পল ব্যারেটের কাছে। প্রথমে সেগুলো নিয়ে সন্দেহ ছিল তাদের। কিন্তু পরে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ডাইনোসরের এমন ধরনের পায়ের ছাপের খোঁজ বিশ্বে তেমন মেলে না বলে জানিয়েছেন পল ব্যারেট। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, এর ফলে যুক্তরাজ্যে ট্রায়াসিক যুগের প্রাণী সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। এ দেশে ট্রায়াসিক ডাইনোসর সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। তাই যুগটির কোনো কিছুর সন্ধান আমাদের কাছে সে সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরতে সাহায্য করবে।’
প্রাচীন এই পায়ের ছাপ সংরক্ষণ করা হবে কি না, তা জানিয়েছে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। তাদের ভাষ্য, ছাপগুলো সাগরের স্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত সৈকতেই থাকবে।
পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিদায় নিয়েছে বহু আগেই। তবে অতিকায় প্রাণীটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
২৩১ থেকে ২৪৩ মিলিয়ন (২৩.১-২৪.৩ কোটি) বছরের মধ্যে ডাইনোসরের প্রথম আবির্ভাব। ১৭.৭ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে এদের বিচরণ ছিল। পাখিসদৃশ ডাইনোসর ছাড়া ৬ কোটি ৫৫ লাখ বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে পুরো একমত নন। কিন্তু এই বিলুপ্তির পেছনে উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতকে বেশ বড় করে দেখা হয়। এ ছাড়া অগ্ন্যুত্পাত থেকে রাসায়নিক নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কারণগুলোও বিবেচনা করা হয়।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০১
আপনার মতামত জানানঃ