আফগান সীমান্তে ঢুকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বেড়া দেওয়ার সময় আবার আটকালো তালিবান বাহিনী। আফগানিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যম পাজহোক এই খবর প্রকাশ করেছে।
সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণপশ্চিম নিমরোজ প্রদেশের ডুরাল্ড লাইন বরাবর পাকিস্তান বাহিনী বেড়া দিচ্ছিল। তারা আফগানিস্তানের চাহারবলুক জেলা সীমান্তের ১০ থেকে ১৫ মিটার ভেতরে প্রবেশ করে। পরে। তালিবান শাসিত আফগান বাহিনী পাক বাহিনীকে থামায়। তারা বেড়া দেওয়ার সামগ্রী জব্দ করে।
এর আগে গত সপ্তাহে নানগারহার প্রদেশের পাশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সীমান্ত বেড়া তোলার সময় তালিবান বাহিনী তাদের থামিয়ে দেয়।
মূল সমস্যা যেখানে
সূত্র মতে, কাবুলের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যবর্তী ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্তের অধিকাংশ অংশে বেড়া তুলে দিয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে নির্ধারণ করা এই সীমান্তের কারণে ওই অঞ্চলের বহু পরিবার ও গোত্র দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই সীমান্ত নিয়ে কাবুলের তীব্র আপত্তি আছে।
প্রথমবার আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খাওয়ারাজমি বলেন, নানগারহার প্রদেশের পাশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী একটি ‘অবৈধ’ সীমান্ত বেড়া তোলার সময় তালিবান বাহিনী তাদের থামিয়ে দেয়।
ঘটনাটিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক আছে বলে দাবি করেন তিনি। আর এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল না পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তালিবান সৈন্যরা কাঁটাতার জব্দ করেছে আর তাদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিকটবর্তী নিরাপত্তা পোস্টে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যদের সতর্ক করে সীমান্তে ফের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা না করতে বলছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা স্বতন্ত্রভাবে ভিডিওটির সত্যাসত্য যাচাই করতে পারেনি। তালিবান মুখপাত্র বিলাল কারিমি জানিয়েছেন, তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে দুই তালিবান কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সীমান্তের এ ঘটনা নিয়ে তালিবান ও পাকিস্তানি বাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে এবং পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ।
তারা জানান, এই ঘটনার পর আরও উত্তরে পাকিস্তানি এলাকা থেকে আফগানিস্তানের কানুর প্রদেশের সীমান্ত এলাকায় মর্টার সেল নিক্ষেপ করা হয়।
তবে দুটি ঘটনা পরস্পর সম্পর্কিত কিনা তা পরিষ্কার হয়নি, জানিয়েছে রয়টার্স। ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের সামরিক হেলিকপ্টারগুলোকে ওই এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারের সময়ও সীমান্তে এই বেড়া দেওয়ার বিষয়টি কাবুল ও ইসলামাবাদের তিক্ত সম্পর্কের পেছনে প্রধান কারণ ছিল। এখন ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও সীমান্তের এ বিষয়টি তালিবানের জন্যও বিতর্কিত বিষয় হিসেবেই রয়ে গেছে, এ ঘটনায় এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
চার বছর আগ পাকিস্তান কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া শুরু করার আগে অরাজক এই পর্বতময় সীমান্তটি ঐতিহাসিকভাবেই অবারিত ছিল, দুই পাশের স্থানীয় লোকজন সীমান্ত দিয়ে অবাধে চলাচল করত। এরমধ্যে পাকিস্তান সীমান্তের ৯০ শতাংশ অংশে বেড়া দেওয়া সম্পন্ন করেছে।
আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আলোচনার জন্য ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রতিনিধিরা যে দিনটিতে ইসলামাবাদে মিলিত হয়েছিলেন সেই দিনটিতেই দুই দেশের সীমান্তে প্রথম এ ঘটনাটি ঘটে।
আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা
এরই মাঝে আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের কয়েকটি অঞ্চলে রকেট ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে কুনার প্রদেশের দাঙ্গাম, শালতান, শারকানো এবং মারওয়ার জেলায় কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে বলে জানা গেছে।
এতে ওই অঞ্চলে বসবাসকারীরা অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কুনার প্রদেশের বাসিন্দা মালেক খান বলেন, এক রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গাঞ্জগুল সাপারি, গারির সার এবং গুলাব পরি এলাকায় শত শত রকেট নিক্ষেপ করেছে।
পাকিস্তানের শালতান জেলার চোগম এলাকায় পাকিস্তানের ছোড়া মর্টারে অন্তত এক বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
আনোয়ার শাহ নামে আহত ওই ব্যক্তি জানান, আমি মর্টারের গোলায় আহত হয়েছি। আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। আমি দুইদিন হাসপাতালে ছিলাম।
ওই প্রদেশে পাকিস্তানী ড্রোন উড়তে দেখেছেন বলেও দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আফগান সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, কুনার প্রদেশের দানগাম, শালতান, সারকানো ও মারাওয়ার জেলায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গোলাবর্ষণ করে।
সারকানো জেলার বাসিন্দা মালাক খান বলেন, ওইদিন রাতে জেলার গুঞ্জগুল সাপারাই, গারির সার ও গুলাব পারাই এলাকায় শত শত গোলা নিক্ষেপ করে পাকিস্তানি বাহিনী।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী সারকানো জেলার গারাইরে সামরিক স্থাপনা তৈরি করেছে এবং সেখান থেকে আমাদের ওপর গোলা বর্ষণ করেছে।’
আফগানিস্তানের হুঁশিয়ারি
আফগানিস্তানের এক শীর্ষ সেনা কমান্ডার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পাকিস্তান যদি আফগান ভূমিতে গোলা নিক্ষেপ করা বন্ধ না করে তাহলে আফগানিস্তানও সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত।
২০১ খালিদ বিন ওয়ালিদ কর্পসের কমান্ডার আবু দোজানা বলেন, ইসলামিক আমিরাত তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে চায়। তবে দেশকে রক্ষার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
তিনি বলেন, এই দেশের মাটি ভীষণ দামি। এর জন্য আমরা অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই। কিন্তু তারা যদি আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যায়, আমরা অবশ্যই তার জবাব দেব।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ