অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ড পশ্চিম তীরে বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। এ সময় তারা বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। ধ্বংস করেছে গাড়ি। প্রহার করেছে কমপক্ষে দু’জন ফিলিস্তিনিকে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলিতে পশ্চিম তীরের এক ইসরায়েলি বসতির কাছে এক বসতি স্থাপনকারী নিহত হওয়ার জেরে এই হামলা চালানো হয়।
নাবলুসের কাছে অবস্থিত ওই বসতির কাছে এই হামলায় আরো দুই ব্যক্তি আহত হন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ফিলিস্তিনি ওই অস্ত্রধারী বৃহস্পতিবার দখলীকৃত পশ্চিমতীরে একটি গাড়ির কাছে গুলি করে হত্যা করে বসতি স্থাপনকারী ইয়েহুদা ডিমেন্টম্যানকে। এ ঘটনা আবারও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের সঙ্গে সহিংসতা উস্কে দিয়েছে। ওই গুলিতে ডিমেন্টম্যানের গাড়িতে থাকা আরো দু’যাত্রী আহত হয়েছে।
বসতি স্থাপনকারীদের কর্মকাণ্ডে নজর রাখেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ঘাসান ডাঘলাস। তিনি বলেছেন, শুক্রবার সকালে নাবলুসের কাছে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গ্রামে দল বেধে বসতি স্থাপনকারীরা প্রবেশ করে এবং বাড়িঘর ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এই সময় তারা দুই ফিলিস্তিনিকে পেটায়। পিটুনিতে আহত এই দুই ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ডাঘলাস জানান, কারইউত গ্রামে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং ওয়ায়েল মাকবাল নামের ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। গ্রামবাসীরা বাধা দিলে ওয়াকিল মিকবেলকে ফেলে যায় বসতি স্থাপনকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি শেয়ার করা হয়েছে তাতে দেখা যায় ওয়াকিল মিকবেলের মুখে থেঁতলে যাওয়া দাগ। এখানে ওখানে ফুলে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে বুরকা গ্রাম পরিষদের প্রধান জিহাদ সালাহ বলেছেন, বসতি স্থাপনকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রামে হামলা চালিয়েছে। তারা গ্রামের বিভিন্ন ব্যারাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে।
ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যম ওয়াফা বলেছে, বসতি স্থাপনকারীরা সেবাস্তিয়া শহর, উত্তর নাবলুসে হামলা চালিয়েছে। ওদিকে বৃহস্পতিবারের গুলি কে চালিয়েছে তাকে আটক করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ইসরায়েলি নেতারা। আরও এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
বসতি স্থাপনকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রামে হামলা চালিয়েছে। তারা গ্রামের বিভিন্ন ব্যারাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে।
ওয়াফা এজেন্সির মতে, বুরকা গ্রাম থেকে রাতভর ঘেরাও দিয়ে কমপক্ষে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলিরা। এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা জানায়, ফিলিস্তিনি ওই অস্ত্রধারীর সন্ধান চলছে। তবে তারা বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম তীর ও জেরুসালেমে ফিলিস্তিনি-ইসরাইলিদের মধ্যে চলমান সহিংসতায় নতুন করে এই ঘটনা ঘটলো।
গত মাসে জেরুসালেমে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পর পর দুইবার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে হামলা হয়।
অপরদিকে চলতি মাসেই পশ্চিম তীরে অন্তত তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সৈন্যরা।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। ওই সময় থেকে ইসরায়েলি নাগরিকরা পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন শুরু করে। দখলকৃত ভূমিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ হলেও এখনো পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ করে আসছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম তীর থেকে ধীরে ধীরে ইহুদি বসতি সরিয়ে নিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের কথা থাকলেও ইসরায়েল এই বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্তু পশ্চিম তীরে নতুন নতুন অবৈধ বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে জেরুসালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২৫৬টি বসতিতে প্রায় সাত লাখ ইসরায়েলি ইহুদি বাস করছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নিষেদ্ধের কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। এতে গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠীকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাতারে চলে এসেছে।
এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাতারে চলে আসবে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ গাজা-ভিত্তিক হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে।
এর আগে ফিলিস্তিনের খ্যাতনামা ছয়টি মানবাধিকার সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের তকমা দিয়ে একটি সামরিক আদেশ জারি করে ইসরায়েল। এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
ইসরায়েলের এমন নির্দেশ জারির পর ওই ৬টি সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘেরাও অভিযান পরিচালনা করতে পারবে ইসরায়েলি সেনারা। পারবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন ফিলিস্তিনিরা।
এদিকে ফিলিস্তিনি এলাকাগুলোতে পুলিশের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল। এমনিতেই দখলদাররা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তল্লাশি-অভিযানে পুলিশ বাহিনীকে নজিরবিহীন ক্ষমতা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার তাদের নতুন উদ্যোগ কার্যকর হলে, কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালাতে পারবে ইসরায়েলি পুলিশ।
ইসরায়েলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতাবৃদ্ধির একটি বিলে অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলি পুলিশ যদি মনে করে, তারা কোনো বাড়িতে ঢুকলে গুরুতর অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজনকে আটক অথবা এ সংক্রান্ত প্রমাণ জোগাড় করতে পারবে, তাহলে সেখানে প্রবেশে আদালতের পূর্বঅনুমতির দরকার হবে না।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বিলটি ইসরায়েলি পার্লামেন্টে তোলা হবে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন পেলে সেটি আইনে পরিণত করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৪
আপনার মতামত জানানঃ