সহকর্মী ও একজন ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা নারী কর্মীকে উল্টো চাকরিচ্যুত করল চীনা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা। বরখাস্তের চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই নারী মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন, যা কোম্পানির সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
‘মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ’ তুলে গত মাসে আলিবাবা তাকে (তার আসল নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে উপাধি ঝৌ) চাকরিচ্যুত করে। আলিবাবার দাবি, ‘একজন জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (সিনিয়র ম্যানেজার) আমাকে ধর্ষণ করেছে’- এমন মিথ্যা অভিযোগ করেন ওই নারী। আর এমন মিথ্যা অভিযোগ করার প্রেক্ষিতেই আলিবাবা তাকে চাকরিচ্যুত করে। এমনকি তাকে কোনো ‘সেভারেন্স পে’ দেওয়া হয়নি। তবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
গত আগস্টে ধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন ওই নারী কর্মী। এর কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে আলিবাবা। তিনি দাবি করেন, এক ব্যবসায়ীক সফরে নিপীড়নের শিকার হন তিনি।
ওই সময় ওই নারী কর্মীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা বাদ দেওয়া হয়। তবে গ্রাহক এখনও পুলিশি তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
চীনের সরকার সমর্থিত পত্রিকা দাহে ডেইলিকে ঐ নারী কর্মী জানান, তাকে গত মাসের শেষের দিকে বরখাস্ত করা হয়। পত্রিকায় তার বরখাস্তের চিঠিও প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কোন ভুল করিনি এবং অবশ্যই এই ফলাফল গ্রহণ করব না। ভবিষ্যতে আমার অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য আমি আইনি উপায় অবলম্বন করবো’।
তবে, এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি আলিবাবা।
এগারো পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি নথিতে সেদিনের ঘটনার বিবরণ প্রকাশিত হয়। ঐ নারী কর্মী বলেন, তারই এক সহকর্মী তাকে একটি হোটেল রুমে ধর্ষণ করে।
গত আগস্টে ধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন ওই নারী কর্মী। এর কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে আলিবাবা। তিনি দাবি করেন, এক ব্যবসায়ীক সফরে নিপীড়নের শিকার হন তিনি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজারিয়াল পদে কর্মরত সহকর্মী তাকে একটি ক্লায়েন্ট মিটিং এর জন্যে জিনান শহর ভ্রমণে বাধ্য করেন। হাংজুতে আলিবাবার প্রধান কার্যালয় থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে এই শহর।
হাংজুতে ফিরে এসে আলিবাবার এইচআরকে এই ঘটনা জানালে তারা কোনো রকমের পদক্ষেপ নেয়নি। এরপরই জনসমক্ষে আসেন ঐ নারী।
ঘটনা সামনে আসলে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার মুখে অভিযুক্ত সহকর্মীকে বরখাস্ত করে কোম্পানি। এছাড়া পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়া দুজন নির্বাহীও পদত্যাগ করেন।
আলিবাবা আরও জানায়, ওয়্যাং নামক অভিযুক্ত ব্যক্তিটি মদ্যপ অবস্থায় ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তার মামলার অগ্রগতি না হলেও আরেক অভিযুক্ত ক্লায়েন্টকে গেপ্তারের অনুমোদন দিয়েছে আদালত। ঝাং নামক ঐ ব্যক্তিকেও তার কোম্পানি বরখাস্ত করেছে বলে জানা গেছে।
আগস্টের গোড়ার দিকে ঝৌ একটি ৮০০০ শব্দের লেখা প্রকাশ করেন। যেটি তার ম্যানেজার এবং একজন ক্লায়েন্টকে উদ্দেশ করে লেখা। সেখানে অভিযোগ করা হয়, তারা একটি ওয়ার্ক ট্রিপে তাকে যৌন নিপীড়ন করে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের ঘটনাটি শানডং প্রদেশের জিনান শহরে ডিনারের পরে ঘটে, সেখানে প্রচুর অ্যালকোহল পান করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী অভিযোগ করেন, তিনি অতিরিক্ত মদ্যপান করায় অচেতন ছিলেন। সেই সুযোগে তার সহকর্মী তাকে হোটেল কক্ষেই নির্যাতন করেন।
এই ঘটনাটি ঘটে যখন একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করতে তিনি তার সহকর্মীকে নিয়ে চীনের জিনান শহরে ব্যবসায়িক ভ্রমণে ছিলেন। তার সহকর্মী ছিলেন আলিবাবার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
মদ্যপানের ফলে তিনি যখন অচেতন হয়ে পড়েন, শুধু মনে করতে পারেন যে ক্লায়েন্ট তার সংস্পর্শে এসেছিলেন। সচেতন হওয়ার পর তিনি নিজেকে পোশাকবিহীন অবস্থায় হোটেল কক্ষে আবিষ্কার করেন।
পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আলিবাবার সেই উচ্চপদস্থ সহকর্মী সেদিন তার কক্ষে চারবার প্রবেশ করে।
পরবর্তী সময়ে নির্যাতনের শিকার সেই নারী আলিবাবার মানব সম্পদ বিভাগে বিষয়টি জানায়। মানব সম্পদ বিভাগ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা কোনো পদক্ষপ নেয়নি।
আলিবাবার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এমনকি যেই দুজন কর্মকর্তা এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারাও স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়েছেন।
এ ঘটনার অভিযুক্ত আলিবাবার ম্যানেজার ওয়াংকে (উপাধি) বরখাস্ত করা হয়। ই-কমার্স জায়ান্টের দুই জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পদত্যাগ করেন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল ঝাং কোম্পানির এই ঘটনাটিকে ‘অপমানজনক’ বলে অভিহিত করেন।
সাহায্যের জন্য আলিবাবা কর্মীরা #মি_টু শুরু করে।
অভিযোগ ফাঁস করার জন্য আলিবাবা ১০ জন কর্মীকেও বরখাস্ত করে। সংস্থাটি বলছে, ওই ১০ কর্মী কর্মচারী ফোরামে ঘটা বিষয়বস্তু প্রকাশের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর নীতি লঙ্ঘন করেছে।
সেপ্টেম্বরে জিনানের প্রসিকিউটররা ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে মামলা লড়েননি। চীনের প্রযুক্তিশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন মামলায় তাকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়নি। তারা বলছে, ওয়াংয়ের আচরণ একটি ফৌজদারি অপরাধ নয়, তাকে কেবলমাত্র ‘জোরপূর্বক অশ্লীলতা’ বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছিল। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ১৫ দিনের আটক।
ঝৌ-এর দাবি, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি নারীদের কাছ থেকে অনেক বার্তা পেয়েছেন যে তারাও কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এবং মদ্যপান করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বেশির ভাগই লোকলজ্জার ভয়ে চুপ ছিলেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৭
আপনার মতামত জানানঃ