আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগ এনে কণ্ঠ শিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান, অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এবং শবনম ফারিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান।
গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন সাদ স্যাম রহমান নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক। বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাজিব হাসান।
এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল, তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, আকাশ, আরিফ, তাহের ও মো. আবু তাইশ কায়েস।
অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রতারণামূলকভাবে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ ও সহায়তা করা হয়েছে। আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা তিনি এখনো উদ্ধার করতে পারেননি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কণ্ঠ শিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়া ইভ্যালির বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। তাদের উপস্থিতি ও তাদের বিভিন্ন প্রমোশনাল কথাবার্তার কারণে আস্থা রেখে বিনিয়োগ করেন সাদ স্যাম রহমান। এসব তারকার কারণে মামলার প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।
এসআই রাজিব হাসান আরো বলেন, মামলায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে গায়ক-অভিনেতা তাহসান খান শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত ছিলেন। আর রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ইভ্যালির ফেস অব ইভ্যালি লাইফস্টাইল শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন শবনম ফারিয়া।
তবে ইভ্যালির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে গত জুনে বড় অঙ্কের বেতনে ইভ্যালির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়া শবনম ফারিয়ার বেতনের অধিকাংশ বকেয়া। অন্যদিকে ১০ মার্চ ইভ্যালির ‘ফেইস অব ইভ্যালি’ (শুভেচ্ছাদূত) ঘোষণা করা হয় তাহসানকে। তিনি শুভেচ্ছাদূত হওয়ার পরের মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও গ্রাহকের পণ্য সময়মতো পৌঁছে না দিতে পারায় তোপের মুখে পড়ে। সবদিক বিবেচনা করে মে মাসের মাঝামাঝি সময় ইভ্যালি থেকে স্বেচ্ছায় সরে যান তাহসান। একই পথে হাঁটেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলাও।
আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে গায়ক-অভিনেতা তাহসান খান শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত ছিলেন। আর রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ইভ্যালির ফেস অব ইভ্যালি লাইফস্টাইল শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন শবনম ফারিয়া।
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে অভিনয়শিল্পী তাহসান রহমান খান, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়াকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান শুক্রবার সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন।
মামলায় উল্লিখিত তিন তারকা নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর।
নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিসি সাজ্জাদুর জানান, চটকদার বিজ্ঞাপন ও বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ইভ্যালি হাজারো গ্রাহককে এরই মধ্যে পথে বসিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী। তার অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণায় শুরু থেকে যুক্ত করা হয়েছিল নামী তারকাদের। জনপ্রিয় এসব মানুষের দেয়া মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা দিয়েই সর্বস্বান্ত হয়েছেন তারা।
ডিসি আরও জানান, গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
ওই সময় প্রতারিত হওয়ার আগে যেকোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে খবর নেয়ার পরামর্শ দেন পুলিশের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা।
ধানমন্ডি থানার মামলায় আসামি করা হয়েছে নয়জনকে। অন্য মামলায় কারাবন্দি ইভ্যালির এমডি রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাও এ মামলার আসামি।
প্রতারণার মামলাটিতে পাঁচ নম্বর আসামি করা হয়েছে তাহসানকে। আট ও নয় নম্বর আসামি করা হয়েছে শবনম ফারিয়া ও মিথিলাকে।
বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের আইনটি ২০০৯ সালের। ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষা আইন ২০০৯-এর ৪৪ ধারায় মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের প্রতারণার সাজা এক বছরের জেল কিংবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। ওই আইনে ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নামে একটি দপ্তরও প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তারা এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ই-কমার্স নির্দেশিকা মেনে চলার নির্দেশনাও দিয়েছে। তবে ভারত ও বাংলাদেশের আইনে বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ ও পণ্য বা সেবা অনুমোদন অথবা সুপারিশের জন্য তারকাদের ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ করা নেই। সম্ভবত এ কারণেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা বা তার বর্ণিত গুণাগুণের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই ছাড়াই আমাদের তারকারা সেগুলোর প্রতিনিধিত্ব করায় রাজি হয়ে যান। অথচ এর কারণে যে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন, সেটি খেয়াল করেন না।
তারা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী বা কথিত উদ্যোক্তারা আমাদের আইনগত দুর্বলতা এবং আইন প্রয়োগে শৈথিল্য ও প্রশাসনের দুর্নীতির সুযোগ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে সম্পর্কে খোঁজখবর ও প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামেন। এ কারণে একই ভুলের ফাঁদে আমরা বারবার পা দিই। প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম পরিস্থিতি এড়ানোর উপায় কী? দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির প্রশ্নটি এখানে সবার আগে, কিন্তু কার্যকর গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে সেই আলোচনা অর্থহীন। এ ক্ষেত্রে আমাদের তারকারা যদি কিছুটা সতর্ক হন, ভক্ত ও গুণগ্রাহীদের প্রতি দায়িত্বশীল হন, তাহলে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন সম্ভব। উচ্চ আদালত বিভিন্ন বিষয়ে যেভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন, সে রকম ভূমিকাও অবশ্য ভুক্তভোগীদের কষ্ট লাঘবে কাজে আসতে পারে। কথিত ভূমিদস্যুদের প্রতারণা থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে ভুঁইফোড় আবাসন কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রকাশে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কথা এ ক্ষেত্রে স্মরণ করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৮
আপনার মতামত জানানঃ