বাংলাদেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কার্যক্রম আবার শুরু হচ্ছে। যদিও এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের সময়ে পরিচালিত কর্মকাণ্ড অডিট করে ৪৭ হাজার কোটি টাকার হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিদায়ী বোর্ড প্রধান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
পাওনা টাকা কিংবা পণ্যের দাবিতে গ্রাহকদের বিক্ষোভের জের ধরে গত বছর একুশে সেপ্টেম্বর নিজেদের অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছিলো ইভ্যালি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গ্রাহক, মার্চেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার কাছে তখন ইভ্যালির দেনা ছিলো ৫৪৩ কোটি টাকা, আর এর গ্রাহক ছিলো দুই লাখেরও বেশি।
দায়িত্বে সেই দুর্নীতিগ্রস্থরাই
গ্রাহক ঠকানোর মামলায় মোহাম্মদ রাসেল জেলে থাকলেও তার স্ত্রী, শাশুড়ি এবং আরেকজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে নতুন বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। উল্লেখ্য, রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান, যিনি একই মামলায় জেল খেটে গত এপ্রিলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
তবে নানা ঘটনার পর এখন আবার এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন, শাশুড়ি ও একজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শামীমা নাসরিনের আইনজীবী আহসানুল করিম জানিয়েছেন, শনি বা রবিবারের মধ্যে নতুন বোর্ড গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে তারা আশা করছেন।
“ইভ্যালির কার্যক্রম ও ব্যবসা চালানোর জন্য যা কিছু দরকার সেটাই করবে এই বোর্ড। তাদের নিজস্ব কৌশলেই চলবে কোম্পানি। তবে এটা প্রত্যাশিত যে পুরনো গ্রাহকদের পাওনা অর্থ যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানিকে কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী করতে হবে । নগদ অর্থ প্রবাহ ও ব্যবসা যেন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু থাকে, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।”
উদ্ধার হয়নি ৪৭ হাজার কোটি টাকা
নতুন বোর্ড আজই দায়িত্ব নেয়ার কথা থাকলেও সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি না আসায় সেটি হয়নি। তবে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন আদালত নিযুক্ত বোর্ড, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
মূলত তাদের দায়িত্ব ছিলো প্রতিষ্ঠানটির দায় দেনা, কাজের পদ্ধতি ও বিপুল অর্থের দায় থেকে বের করা যাবে কিনা তা খুঁজে বের করা।
কিন্তু এই এগার মাস পর তারা কি অবস্থায় ইভ্যালিকে রেখে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন কোম্পানির হাতে এখন মাত্র ৫০ কোটি টাকার মতো আছে। তবে এর পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট তারা আদালতে দিয়েছেন।
“হাইকোর্ট বলেছিলো আমাদের দায়িত্ব হবে অডিট করা ও তদন্ত রিপোর্ট দেয়া। সেটি আমরা করেছি। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব নেই। আমাদের বলা হয়েছিলো যে আমরা রেসকিউ করতে পারলে ভালো কথা। আর না পারলে দেউলিয়া ঘোষণা করা।”
কিন্তু তারা দেউলিয়া ঘোষণা করেননি, যাতে কেউ যদি বিনিয়োগ নিয়ে আসে তাহলে কোম্পানিটিকে বাঁচানো যেতে পারে। কারণ এর সাথে হাজার হাজার মানুষের অর্থ জড়িত আছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নেতৃত্বাধীন বোর্ড যে অডিট করিয়েছে তার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ইভ্যালির প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার কোন হদিস নেই। এই টাকা মোহাম্মদ রাসেলের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের সময় ব্যাংক হিসেব থেকে চলে গেছে, যা আর উদ্ধার করা যায়নি।
বিজনেস মডেল বদলানো নিয়ে শঙ্কা
গ্রাহক ঠকানোর মামলায় ইভ্যালির রাসেল এখনো কারাগারে। আর তার স্ত্রী ও কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন জামিনে বের হয়েছেন গত এপ্রিলে। এখন শামীমা নাসরিনকে নিয়ে করা বোর্ড গ্রাহকদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারবে, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন।
তবে তাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে যাতে করে তারা বিনিয়োগ এনে কোম্পানির কাজ শুরু করতে পারেন। আর তাতে গ্রাহক স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন মিস্টার চৌধুরী।
“বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের প্রতিনিধি থাকবেন বোর্ডে। আর তিন জন শেয়ার হোল্ডার। সরকারি প্রতিনিধি যদি দেখেন বেআইনি কিছু হচ্ছে তাহলে তিনি সেটি হাইকোর্টকে জানাবেন”।
কিন্তু শামীমা নাসরিনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড কি আগের বিজনেস মডেল অর্থাৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে পরে পণ্য দেয়ার ব্যবসাই করবে, নাকি ব্যবসার ধরণ পাল্টাবে, সেটি বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরই জানা যাবে বলে জানাচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ই কমার্স সেলের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাফিজুর রহমান বলছেন, এ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশ এখনো তারা পাননি। তবে বোর্ডে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
তবে ইভ্যালির কাছে আগের গ্রাহকদের যে অর্থ এখনো আটকে আছে, সেটি তারা কতটা কিভাবে পাবেন কিংবা যাদের অর্ডার আটকে ছিলো তারা কিভাবে সেটি পাবেন কোন পক্ষই সেটি পরিষ্কার করে বলতে পারছে না।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ