করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল মেনে তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন জনগণকে বিনামূল্যে বিতরণ করবে সরকার।
সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেরাম ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়ার (এসআইআই) কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯-এর তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করা হবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটির নাম দেয়া হয়েছে সার্স কোভিড ভিটু এ জেড ১২২২। চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর সিরাম ইন্সটিটিউটটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশের কাছে ৩ কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাব ছিল। এই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাটির ভারতের উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে সিরাম ইন্সটিটিউট।
ভ্যাকসিন জনগণের মাঝে কীভাবে বিতরণ করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন বিতরণের নীতিমালা অনুযায়ীই জনগণের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
উল্লেখ্য যে, গত ৫ই নভেম্বর টিকা আমদানি নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সিরাম ইন্সটিটিউট এবং বেক্সিমকোর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায়ই ৩ কোটি টিকা আনা হবে। গত ১৬ই নভেম্বর ভ্যাকসিন আমদানীর জন্য অর্থ-বিভাগ প্রাথমিক বরাদ্দ হিসেবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ক্রয় চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বেক্সিমকোর সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের এই টিকাটি বাংলাদেশ পাবে বলে তারা আশা করছে। বেক্সিমকো বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি’কে জানায়, সিরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের জন্য আপাতত ৩ কোটি টিকা কেনা হবে। তবে বেসরকারি খাতের জন্য তারা এক মিলিয়ন বা দশ লক্ষ টিকার চাহিদা জানিয়েছেন। সব টিকাই আনা হবে বেক্সিমকোর মাধ্যমেই।
এদিকে কভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে আশার সঞ্চার জাগিয়েছিল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলে দাবি করা হয়। তবে এ দাবির বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হওয়ায় নতুন করে বিশ্বব্যাপী আবারো ট্রায়ালে যাচ্ছে তারা, ২৮ নভেম্বর বৃটিশ সংবাদ সংস্থা গার্ডিয়ান ও দ্য ওয়ার্ল্ডে এমন খবর বেরিয়েছে।
কিছু গবেষক অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলছেন, যে দ্রুততার সঙ্গে ভ্যাকসিনটির ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটির ট্রায়ালের ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে যেসব সাব-গ্রুপ অংশগ্রহণকারী এটির ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিল, শুরুতে তাদের অর্ধেক ডোজ এবং পরে পুরো ডোজ দেয়া হয়েছে, যেটিই এ ট্রায়ালের সবচেয়ে বড় ত্রুটি বলে অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত।
সেই হিসাব মতে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি সরকার ও বেক্সিমকোর আশা অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারী শেষে বা ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে জনগণের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। বিশ্বের বাজারে আসার অপেক্ষামান বাকি তিনটি ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশের আগাম চুক্তি না থাকায় এই মুহুর্তে সেগুলো প্রাপ্তির বিষয়ে আশা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া মর্ডানা এবং ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার মত ব্যয়বহুল অবকাঠামো বাংলাদেশের নাই। অন্যদিকে রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ নামের ভ্যাকসিন স্বাভাবিক রেফ্রিজারেটর তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার সুযোগ থাকলেও বাংলাদশের সাথে কোন ধরনের চুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি বলে খুব সহসা আশা করা যাচ্ছে না।
তবে কি বাংলাদেশ ভ্যাকসিন দৌড়ে অনেক পিছিয়ে আছে?
[soliloquy id=”2368″]
আপনার মতামত জানানঃ